কালজয়ী নাটকের আলোচিত চরিত্র

আজ রবিবার ও বহুব্রীহি নাটকের শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

টেলিভিশনের কালজয়ী নাটকের আলোচিত চরিত্রেরা এখনো দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছেন। বাকের ভাই, কানকাটা রমজান, হুরমতি, মাস্তান হেলাল, সেরাজ তালুকার, মুনা, শাহেদ, শিমু, নীলু, মীর্জা, মালু, মাখনা-এইরকম অনেক চরিত্র মানুষের মনে গেঁথে আছে আজও। সাড়া জাগানো সেইসব নাটকের আলোচিত কয়েকটি চরিত্রের সঙ্গে আবারও পরিচিত হওয়া যাক।

সকাল–সন্ধ্যা ধারাবাহিক নাটকের শাহেদ, শিমু ও মাখনা – এই ৩টি টেলিভিশন নাটকের প্রথম আলোচিত চরিত্র। শাহেদ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। শিমু চরিত্রে আফরোজা বাণু এবং মাখনা চরিত্রে হাবিবুল হাসান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সে সময় শাহেদ, শিমু ও মাখনা চরিত্র ৩টি বেশ আলোচিত হয়েছিল। সকাল-সন্ধ্যা নাটকের নাট্যকার ছিলেন বেগম মমতাজ হোসেন।

ভাঙনের শব্দ শুনি নাটকে হুমায়ুন ফরীদি ও সহশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

এ নাটকের পর টেলিভিশন নাটকের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রের নাম সেরাজ তালুকদার। ভাঙনের শব্দ শুনি ধারাবাহিক নাটকের চরিত্র এটি। সেরাজ তালুকদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। সেই সময়ে হুমায়ুন ফরীদিকে অনেকেই সেরাজ তালুকদার নামে ডাকতেন। গ্রামের মন্দ মানুষের চরিত্র ছিল এটি। ভাঙনের শব্দ শুনি নাটকটি লিখেছিলেন সেলিম আল দীন এবং প্রযোজক ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

এইসব দিনরাত্রি ধারাবাহিক নাটকের নীলু চরিত্রটিও খুব আলোচনায় আসে। নীলু ভাবী নামটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। নীলু ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করে সব শ্রেণীর দর্শকদের মন জয় করেছিলেন ডলি জহুর। ওই সময় মধ্যবিত্ত ঘরের স্বপ্নের মানুষ ছিলেন নীলু। মধ্যবিত্ত ঘরের বাবা মা স্বপ্ন দেখতেন নীলুর মতো পুত্রবধূ ঘরে আনবেন।

এইসব দিনরাত্রি নাটকের টুনি চরিত্রটিও বেশ আলোচিত হয়েছিল। টুনি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নায়ার সুলতানা। এইসব দিনরাত্রি নাটকে জাদুকর আনিস চরিত্রে খালেদ খান এবং নীলুর স্বামী শফিকের চরিত্রে বুলবুল আহমেদ অভিনয় করেন।

সংশপ্তক ধারাবাহিক নাটকের কয়েকটি চরিত্র খুব আলোচিত হয়েছিল। সেগুলো হচ্ছে-মিয়ার বেটা, কানকাটা রমজান, হুরমতি, মালু। মিয়ার বেটা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন খলিলউল্লাহ খান। কানকাটা রমজান চরিত্রে হুমায়ুন ফরীদি, হুরমতি চরিত্রে ফেরদৌসী মজুমদার এবং মালু চরিত্রে মুজিবর রহমান দিলু। হুমায়ুন ফরীদি সেরাজ তালুকদার থেকে বের হয়ে এসে রমজান চরিত্রের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলেন। ফলে কানকাটা রমজান চরিত্রটি দর্শকরা গ্রহণ করেছিল। আজও তার চরিত্রের নাম মানুষ মনে রেখেছে। হুরমতি চরিত্রটিও সেসময় বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

ফেরদৌসী মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হুরমতি চরিত্রটি টেলিভিশন নাটকে ইতিহাস হয়ে থাকবে। ওই রকম চরিত্র কমই এসেছে। সমস্ত দরদ দিয়ে অভিনয় করেছিলাম। শহীদুল্লাহ কায়সারের বিখ্যাত উপন্যাস থেকে নাটকটি নির্মিত হয়েছিল। শুটিংয়ের আগে রিহার্সেল হত। প্রস্তুতি নিয়ে তারপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতাম। ভাবতে ভালো লাগে আজও হুরমতি চরিত্রের কথা মানুষ বলে। শিল্পী জীবনে এটাই বড় প্রাপ্তি।'

কোথাও কেউ নেই নাটকে আসাদুজ্জামান নূর ও সুবর্ণা মুস্তাফা। ছবি: সংগৃহীত

টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে বাকের ভাই একটি সাড়া জাগানো চরিত্র। নন্দিত নাট্যকার হূমায়ুন আহমেদের কোথাও কেউ নেই নাটকের চরিত্র এটি। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি না হওয়ার জন্য সে সময় রাজপথে মিছিল পর্যন্ত হয়েছিল। এ নাটকে মুনা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। বাকের ভাইয়ের বিপদের সময়ে মুনা পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মুনা চরিত্রটিও একটি আলোচিত চরিত্র।

ছি! ছি! ছি! তুমি এ্যাত খারাপ, এই সংলাপটির কথা কি এত সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব? রূপনগর নাটকে হেলাল নামের একজন মাস্তানের মুখে এই সংলাপটি ছিল। পরে সংলাপটি মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। আজও খালেদ খান দর্শক হৃদয়ে বড় জায়গা করে আছেন চরিত্রটির জন্য। এ চরিত্রটিও এদেশের টিভি নাটকে অন্যতম একটি আলোচিত চরিত্র।

রূপনগর নাটকে খালেদ খানের সঙ্গে সহশিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

মিসির আলী হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের সাড়া জাগানো ও আলোচিত চরিত্র। মিসির আলী সিরিজের রয়েছে অনেক পাঠক। মিসির আলী নিয়ে প্রথম নির্মিত নাটকের নাম অন্য ভূবন। এই নাটকে মিসির আলীর চরিত্রে অভিনয় করে যিনি আলোচিত হয়েছিলেন-তিনি হচ্ছেন আবুল হায়াত। পরে যদিও মিসির আলী নিয়ে অল্প কিছু নাটক হয়েছে। কিন্তু আবুল হায়াতের মতো সাড়া কেউ পাননি।

আবুল হায়াত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টেলিভিশন নাটকের একটা স্বর্ণযুগ ছিল। সেইসব দিনের কথা মনে হলে এখনো নস্টালজিক হয়ে পড়ি। মানুষ এখনো মনে রেখেছে তখনকার কাজগুলোর কথা। আলোচিত নাটকের আলোচিত চরিত্রগুলো এভাবেই বেঁচে থাকবে দর্শকদের মাঝে।'

বারোরকম মানুষ নাটকের নাদের চৌধুরীর চরিত্রটিও আলোচিত হয়েছিল। শুকতারা নাটকের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৈয়দ আহসান আলী সিডনি। তার চরিত্রটিও বেশ আলোচিত। শুকতারা নাটকে কসির উদ্দিন চরিত্রে অভিনয় করে ড. ইনামুল হক অনেক আলোচিত হয়েছিলেন।

অয়োময় নাটকের মীর্জা চরিত্রটিও আলোচিত একটি চরিত্র। মীর্জা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। ভাটি অঞ্চলের একজন পতিত জমিদারের গল্প নিয়ে এই নাটকের কাহিনী। অয়োময় নাটকের এলাচি বেগম চরিত্রটিও আলোচিত হয়েছিল। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সারা যাকের।

অয়োময় নাটকে ছোট মীর্জার লাঠিয়াল হানিফ চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা মোজ্জামেল হক। কথায় কথায় লাঠিয়াল হানিফের কাশি দেওয়ার বিষয়টি এখনো অনেকের মনে থাকবার কথা।

আসাদুজ্জামান নূর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টেলিভিশন নাটকের সাড়া জাগানো কিছু চরিত্রে অভিনয় করা আমার শিল্পী জীবনের বড় ঘটনা। সেইসব নাটক ও চরিত্রের কথা এখনো মানুষ মনে রেখেছেন। এটা ভাবতেই ভালো লাগে। এভাবেই শিল্পী ও

শিল্প বেঁচে থাকে।

বহুব্রীহি নাটকে ফরিদ মামা চরিত্রটি বেশ আলোচিত হয়েছিল। মামা চরিত্রে অভিনয় করে আলী যাকের খুব আলোচিত হয়েছিলেন। এই নাটকের দাদা চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলেছিলেন আবুল খায়ের। একটি টিয়া পাখির মুখ থেকে তুই রাজাকার সংলাপটি সবাইকে নাড়া দিয়েছিল। বহুব্রীহি নাটকের রহিমা খালা চরিত্রটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। রহিমা খালা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাহমুদা খাতুন।

আজ রবিবার নাটকের মতি চরিত্রটি একটি সফল ও দর্শকপ্রিয় চরিত্র। মতি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারুক আহমেদ। তার একটি সংলাপ সেই সময়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরত-জীবনটা হইল একটা কুয়া, দুঃখের কুয়া। আজ রবিবার নাটকে জাহিদ হাসান অভিনয় করেছিলেন আনিস চরিত্রে ।

সবুজ সাথী নাটকের পাগলা মফিজ চরিত্রটির কথা কারও মনে আছে কি? পাগলা মফিজ সব সময় লাঠি নিয়ে চলাফেরা করত। কারও কারও নিশ্চয়ই মনে আছে? মফিজ পাগলা চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল আলোচিত হয়েছিলেন জাহিদ হাসান।

মাটির পিঞ্জিরা মূলত এক ঘণ্টার একটি নাটক ছিল। নাটকটিতে খুনির চরিত্রে ছিলেন  নান্দাইলের ইউনূস। আসাদুজ্জামান নূর এই চরিত্রে অভিনয় করে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। টেলিভিশন নাটকের বহু চরিত্র এভাবেই দর্শকদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English
Exporters to get Tk 108.5 for a dollar from Aug 1

Taka gains against dollar after several years

Taka gains ground as dollar influx rises, strengthening currency after years

2h ago