বাংলা বানানের নৈরাজ্য

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

'ড়বিন্দ্রণাথ ঠাকুড়'- লিখলে কেমন হয়? কিংবা লিখলাম 'কাযিণযরুল ঈষলাম'! সবার চক্ষু চড়ক গাছ না হলেও কেউ কেউ তো চমকাবেন। অবশ্য এমন কিছু প্রবল পণ্ডিত ও বিরল প্রতিভা আছেন, যারা মনে করেন, যার যেমন ইচ্ছা তেমন বানানে লিখবে। যদিও তিনি নিজে ভুল বানানে লিখছেন না, 'জার জেমণ ঈচছা তেমণ বাণাণে লীখবে।' ইংরেজি love শব্দের বানানে লিখছেন না lav। কিন্তু বাংলা শব্দের বানান ও ভাষারীতির শুদ্ধ ও মান্য রূপ নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁরা খড়্গহস্ত হন।

প্রকৃতপক্ষে বানান প্রসঙ্গে অনেকের অনেক রকম প্রশ্ন: দীর্ঘ ই-কার নাকি সব হ্রস্ব ই-কার হয়ে গেছে? ঈদ কেন ইদ? গরু কেন গোরু হলো? ঈগলের বানান কী হবে? এটা তো বিদেশি শব্দ। কী না কি- কোনটা ঠিক? এসব প্রশ্নের জবাব গরু বা ইগল না জানলেও গুরুরা জানেন। শেষমেশ যত দোষ গিয়ে পড়ে নন্দ ঘোষ বাংলা একাডেমির ঘাড়ে। কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বানান নির্ধারণে সমতা বিধান করতে তো পারেনি; বরং আরও বেশি দ্বিধাদোদুল অবস্থা তৈরি করেছে। কথা শুনে মনে হয় বাংলা একাডেমির প্রমিত নিয়মাবলী না থাকলে সবাই ব্যাকরণ ও অভিধান অনুগামী শুদ্ধ বানানে শব্দ লিখতেন!

সত্যিই কি তেমন হতো? মনে হয় না; কেননা ভুল বানান লেখার পেছনে একটিমাত্র কারণ নিহিত নেই। সবাই ধরে নেন ব্যাকরণের নিয়ম না জানার কারণে ভুল হয়। কিন্তু বানান সম্পর্কিত অজ্ঞতা সবসময় কার্যকারণ হয়ে থাকে না। শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ না জানার কারণেও বানানবিভ্রাট ঘটে থাকে। আমরা এক শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দ গুলিয়ে ফেলি। আর তাই আমাদের কেউ কেউ বই পরেন, কেউ কেউ কাপড় পড়েন। মূলত পরিধান থেকে পরা, পঠন থেকে পড়া; তাই বই পরা যাবে না, কাপড়ও পড়া যাবে না।

সব চেয়ে বড় কথা আমাদের অনেকেরই ভাষার বিভিন্ন রূপ ও রীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। ভাষা বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ নয়। অন্তত এটুকু বোঝা দরকার যে, কোনো ভাষার এক ও অদ্বিতীয় কোনো পবিত্র রূপ নেই; ভাষা বহুগামী, বহুমুখী। পরিস্থিতি ও প্রয়োজন, প্রসঙ্গ ও লক্ষ্য, ব্যক্তি ও সমষ্টি, শ্রেণি ও অঞ্চলের ভিন্নতায় ভাষার রীতি ও প্রয়োগ বদলায়। এ কারণে ভাষার মান্য ও আঞ্চলিক রূপ থাকে। ভাষার ওপর প্রভাব ফেলে ধর্ম ও লৈঙ্গিক সম্পর্ক। কিন্তু সন্দেহ নেই, মানুষের জগৎ ব্যাখ্যার মূল অবলম্বন ভাষা। 'সংস্কৃতি' নামে যেসব উপাদান আমরা চিনে থাকি, তা মূলত ভাষার সূত্রেই উৎপন্ন ও প্রচারিত হয়।

ভাষা একই সঙ্গে নিয়ম ও নিয়মভঙ্গ, সূত্র ও সূত্রভঙ্গ, ব্যাকরণ ও ব্যাকরণ-হীনতা। এ কারণেই ভাষা নিজেই বন্ধন আবার নিজেই উন্মুক্ত ও সৃষ্টিশীল। অনবরত রূপান্তরকামিতা ভাষার স্বভাব। ভাষাগোষ্ঠী বা সম্প্রদায় সবসময়ই বিচিত্র, আর তাই ভাষার মূল কিছু বৈশিষ্ট্য এক হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োগ বিচিত্র হতে বাধ্য। তাই বলে কি বানানও বিচিত্র হবে? হ্যাঁ, বানানেও বৈচিত্র্য দেখা দেয়। লেখকের ব্যক্তিক ভাষাবৈশিষ্ট্য, শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের এবং সম্পাদনা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব বানানরীতির কারণে বানানের ভিন্নতা দেখা দেয়। যেমন: আহমদ শরীফ লিখতেন 'বাঙলা'। কিন্তু সর্বজনে প্রচলিত শব্দ বাংলা।

কিন্তু, কেন বানান সমতার দরকার পড়ে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে ভাষার ঐতিহাসিক বিকাশের ভেতর। ভাষা যখন মৌখিক স্তর থেকে লেখ্য স্তরে প্রবেশ করেছে তখনই দেখা দিয়েছে বানানের প্রয়োজন। প্রধানত ধ্বনিকে অনুসরণের মাধ্যমে বর্ণ বিন্যাসের সূত্রে গড়ে ওঠে শব্দের বানান। কিন্তু ধ্বনির অনুসরণে সমস্যা দেখা দেয়; কারণ একই ধ্বনি একই শব্দ সবাই একরকমভাবে উচ্চারণ করে না। যা উচ্চারণ করা হয়, তাও হুবহু লেখায় আসছে না। তাই উনিশ শতকের বাংলা বানানে পাচ্ছি, গোরু, গোরূ, গরূ, গরু।

চিন্তাকে স্থায়িত্ব দানের একটি পদ্ধতি ভাষার লিখিত রূপ। তার সঙ্গে ক্রমশ যুক্ত হতে থাকল রীতির অনুশাসন। পরম্পরা ধরে গড়ে উঠল ভাষার প্রথাগত লিখনপদ্ধতি। ভাষাকে শৃঙ্খলায় ফেরানোর চেষ্টার নাম মান্যায়ন -- অর্থাৎ কোনো ভাষাকে দাপ্তরিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজনে মান বা আদর্শ রূপ দেয়া। যাতে করে ভাষাবৈচিত্র্য দূর করে অধিকসংখ্যক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। এই সূত্রে এসেছে সর্বজনগ্রাহ্য বানানের প্রাসঙ্গিকতা। শব্দকে লিখতে হয় সর্বজনবোধ্য রূপে। কিন্তু সবাই কি পড়তে পারে? মূলত অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির জন্যই লিখিত ভাষা ও বানান।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, যোগাযোগের ভিন্ন একটি রীতি লিখিত ভাষা, যা আধুনিক সমাজ বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ সমাজেই দেখা দিয়েছে মুদ্রণযন্ত্র, এবং মুদ্রিত বই-পত্র, সংবাদপত্র, ধর্মগ্রন্থ ইত্যাদি। আধুনিকতার প্রাথমিক স্তরে ভাষার বৈচিত্র্য ও দূরত্ব কমিয়ে আনাই ছিল লেখক ও প্রকাশকদের প্রধান কাজ। ধরা যাক, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও যশোরের ভাষায় প্রকাশিত হল বেশ কিছু পত্রিকা। কোনো একটি বিশেষ রীতি সব অঞ্চলের পাঠকের কাছে সমানভাবে বোধগম্য হবে? নিশ্চিতভাবেই হবে না, যদিও ভাষাগুলো বাংলাই। তাহলে দেখতে পাচ্ছি, বাংলা ভাষা মানেও বিচিত্র ভাষারূপের সমাবেশ।

আধুনিক সংস্কৃতি বৈচিত্র্য কমিয়ে একটি মান্য ভাষা তৈরি করতে চেয়েছে; ভাষার লিপি, লিখনবিন্যাসে সমরূপতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলা ভাষার ইতিহাসেও এ ধরনের রূপান্তর ঘটেছে। বর্ণমালা, লিপি ও বানানের সংস্কার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বলা ভালো, ভাষার উচ্চারণ ও লেখ্য রূপে সমরূপতা আনার ক্ষেত্রে ভাষাভাবুকদের রাজনীতি ও জ্ঞানতাত্ত্বিক ক্ষমতা আধিপত্য বিস্তার করে থাকে। যেমন উনিশ শতকের বাংলা ভাষার সংস্কৃতায়ন সে সময়কার লেখক ও ভাষাভাবুকদের দান।

উনিশ শতকে উচ্চারণ ও বানান নিয়ে খুব বেশি তৎপরতা চোখে পড়ে না। ছাপাখানার উপযোগী ও মুদ্রণযোগ্য বাংলা ভাষা গড়ে তোলাই ছিল প্রথম লক্ষ্য। এ শতকের বানানে বিচিত্র রূপ চোখে পড়ে। একশো বছর একই শব্দ নানা রকম বানানে লেখা হয়েছে। বিশ শতকে বাংলা বানান চলে এলো মনোযোগের কেন্দ্রে। ততো দিনে বাংলা লিপি, বর্ণমালা, ছাপাখানার বাংলা হরফ মান্য রূপ পেয়ে গেছে। কিন্তু বানান জুড়ে ছিল গভীর নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্য নিয়ে ভাবনা শুধু শিক্ষিত মধ্যবিত্তের এবং মধ্যবিত্ত পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের। প্রাথমিক শিক্ষার গ্রহণযোগ্য বিস্তারে প্রমিত বানানের বিকল্প হয় না। জাতীয় পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং বাংলা একাডেমির বাংলা বানানের নিয়ম প্রতিষ্ঠা এই তৎপরতারই অংশ।

বাংলাদেশের বাংলা ভাষা সম্প্রতি নতুন এক সমস্যার মুখোমুখি পড়েছে। প্রযুক্তি মাধ্যমে দেখা দিয়েছে ভাষারীতি ও বানানের অস্থিরতা। বাংলা লেখা নির্ভর অনেক অনেক নিউজ পোর্টাল ও ওয়েবসাইট গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন অজস্র ভুল বানানে পরিবেশিত হচ্ছে বাংলা আধেয়। অডিও-ভিজ্যুয়াল সম্প্রচার মাধ্যমের অবস্থাও শোচনীয়। বেশির ভাগ টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে ভুল বানানে সংবাদ ও তথ্য পরিবেশিত হয়ে থাকে। রীতিগত দিক থেকেও মান্যরূপ অনুসৃত হচ্ছে না। অহরহ বলা ও লেখা হচ্ছে, তিনি বলেছে...। পরীমনি বলেছে...। হওয়া উচিত 'বলেছেন'। একটি পোর্টালে স্বাদু পানিকে লেখা হয়েছে সাধু পানি। একটি চ্যানেল স্ক্রলে পাশাপাশি লিখেছে কনসার্ট, কনসর্ট। আরেকটি চ্যানেল লিখেছে, 'স্মৃতিতে, স্বরণে জাতির পিতা।' হওয়ার কথা 'স্মরণ'।

এ ধরনের প্রয়োগের পেছনে আছে অসচেতনতা, লৌকিক কথ্য ভাষার প্রভাব। পাশাপাশি আছে রীতি বা নিয়ম না জানার সমস্যা। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাপ খাইয়ে চলার ব্যর্থতা থেকেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কম্পিউটারে কম্পোজকৃত বাংলা লেখা কনভার্ট করার সময় বদলে যাচ্ছে অক্ষর ও অক্ষরবিন্যাস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথেচ্ছভাবে বাংলা লিখন বানান সমস্যার সংকটকে তীব্র করেছে। একটি ভুল বানান দ্রুততার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে অসংখ্য পাঠকের সঙ্গে। শব্দের বানান একটি ইমেজও বটে; ভুল বানানের দৃশ্যমানতা ভুলকে সহনশীল ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে; কিন্তু শব্দের বিবর্তন ও ইতিহাস সম্পর্কে ভুল বার্তা দেয়।

এটুকু পড়ার পর অনেকের মনে হতে পারে, আমি বুঝি মান বাংলা এবং বাংলা একাডেমির বানানের নিয়মের সাফাই গাইছি। তাদের জন্য বলি, মান বাংলা ভাষার একটি কৃত্রিম রূপ, শত ভাগ খাঁটি মান বাংলা খুব কম মানুষেরই সাংস্কৃতিক ভাষা। এই ভাষাকে বলা যায়, কাজের উপযোগী ভাষা। আঞ্চলিক-স্থানিক দূরত্ব ঘুচিয়ে অধিক সংখ্যক মানুষের যোগাযোগের ভাষা। এই ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা আর সাংস্কৃতিক আধিপত্য সৃষ্টি করা একই ব্যাপার। ভুলে গেলে চলবে না, আঞ্চলিক ভাষাবৈচিত্র্যগুলোই ভাষার প্রাণভোমরা। দাপ্তরিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রয়োজনে মান বাংলা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু মান বাংলার চাপ নিতে ও দিতে আমি নারাজ। আঞ্চলিক বাংলার প্রতি প্রমিতবাদীদের উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রহণযোগ্য। সৃষ্টিশীল লেখকদের ব্যাপারে আমার বক্তব্য ভাষার পরীক্ষায় তাঁদের সাত খুন মাফ।

তবে হ্যাঁ, শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলাকে সুবিধাজনক বলেই অনুমান করি। একই কারণে সুবিধাজনক বানানের মান রূপ। ব্যক্তিগত যোগাযোগে কেউ যদি জগাখিচুড়ি ভাষারীতি ও বানান ব্যবহার করেন, তা নিয়ে আপত্তি তোলার অর্থ নেই, কিন্তু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দাপ্তরিক যোগাযোগে মান্য রূপ বজায় রাখাই যৌক্তিক। মনে রাখা দরকার, বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা লিখন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিতি হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ শব্দের শুদ্ধ বানান।

সমস্যা হলো, বাংলা বানানের প্রমিত বা মান্য রূপ থাকার পরও তা নিয়ে সংশয় আছে। বোঝা যায়, বাংলা ভাষাভাষী অনেকেরই বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত নিয়মের প্রতি আস্থা নেই। এই আস্থার সংকট দূর হবে কীভাবে? দুটো কাজ হতে পারে, এক. বাংলা একাডেমির প্রমিত নিয়মসমূহ বিলোপ করা; দুই. সংস্কার করা। প্রায়োগিক ভাষাবিজ্ঞানের আলোকে ভাষা-পরিকল্পনা ও সংস্কার সম্পর্কিত সমন্বিত উদ্যোগ দরকার, দরকার ভাষানীতি ও পরিকল্পনা বিষয়ক গবেষণা-প্রতিষ্ঠানের। এর সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে বিভিন্ন জ্ঞানশাখার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গকে। কেবল সাহিত্য, অভিধান কিংবা ভাষাবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমে প্রমিত বানান রীতি বাস্তবায়নের কাজ সম্ভবপর হবে না। কারণ ভাষা কেবল সাহিত্য বিশেষজ্ঞের বিষয় নয়; সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তি, সমষ্টি, শিক্ষাদানকেন্দ্র, প্রকাশনা, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা মিলিয়ে ভাষার প্রয়োগক্ষেত্র বিরাট ও বিস্তৃত। আর তাই ভাষা বিষয়ক যেকোনো নিয়ম-নীতি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য দরকার বিভিন্ন জ্ঞানশাখার ব্যক্তির প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ। ভাষা ও সাহিত্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি শিক্ষা ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট গবেষক ও ব্যক্তিবর্গকে সম্পৃক্ত করা দরকার। কেননা এ দুটো ক্ষেত্র ব্যাপক হারে মুদ্রণ, প্রকাশনা ও পড়ালেখার সঙ্গে যুক্ত।

মোদ্দা কথা এই, ভাষার বৈচিত্র্য মেনে নিয়েই ভাষাকে নিয়মের ভেতর আটকাতে হয়, আবার প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মকে আলগা করে নিতে হয়। ভাষার দুদিকেই মৃত্যু; নিয়মের শক্ত ফাঁসে জড়ালে ভাষা লোকান্তরিত হয়, আবার নিয়মকে পরিপূর্ণভাবে বিসর্জন দিলেও ভাষা ধাবিত হয় মৃত্যুর দিকে। ভাষা সব চেয়ে বেশি বদলায় মুখের ভাষায়। অন্য ভাষার সংস্পর্শ, ভাষাভাষীর স্বেচ্ছাচারিতা ভাষা থেকে মুছে দেয় আদি আদলের নকশা। ভাষার মৃত্যুকে অনিবার্য করে তোলে শক্তিশালী ভাষা ও সংস্কৃতির অভিঘাত। সাম্প্রতিক কালে বাংলা ভাষায় ইংরেজি শব্দ ও বাক্যের অনাবশ্যক ব্যবহার দেখে মনে হয়, এমন এক সময় নিশ্চয়ই আসবে, যখন বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, কোনটি বাংলা ভাষার মুখ, কোনটি মুখোশ! বাংলার মুখ আরও একটু ঝাপসা হবার আগে দরকার বানানের নৈরাজ্য থেকে বাংলা ভাষার মুক্তি।

লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

6h ago