বন্যপ্রাণী নিধন বন্ধ করতে হবে

কক্সবাজারে কৃষকের দেওয়া বিষাক্ত কলা খেয়ে মারা যাওয়া একটি বানরের মরদেহ গাছ থেকে ঝুলছে। অন্য ২টির মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রায় ৫০টি বানর হত্যা করার খবর পাওয়া গেছে। এটি একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। বানরগুলো স্থানীয় এক কৃষকের ফাঁদ হিসেবে রাখা বিষাক্ত কলা খেয়েছিল। দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বন বিভাগের কর্মকর্তারা পরদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ৩টি বানরের মরদেহ উদ্ধার করেন।

স্থানীয় এক পরিবেশকর্মী দাবি করেছেন, তারা প্রায় ৫০টি রিসাস প্রজাতির বানরের মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছেন। কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পৌঁছানোর আগেই মৃত বানরগুলোর বেশিরভাগ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। একটি বানরকে গাছের সঙ্গে ঝুলতে দেখা গেছে। খুব সম্ভবত দলের অন্য সদস্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে এটি ঝুলানো হয়।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কেন কেউ এমন বর্বর কাজ করার কথা ভাববে? দুর্ভাগ্যবশত, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বা বানরই একমাত্র বন্যপ্রাণী নয় যা বাংলাদেশে নিধনের শিকার হয়। বাংলাদেশে দ্রুত বনভূমি কমছে। দেশে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের কাছাকাছি মানুষের গড়ে তোলা বসতি ও কৃষি জমিতে কাজের সুবিধার জন্য অথবা বাজার মূল্যের কারণে প্রায়ই বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝে বনাঞ্চলের মাঝে তৈরি রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েও প্রাণ হারায় বন্যপ্রাণীরা।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর পেছনে কারণের (বা অজুহাতের) কোনো অভাব নেই। ফলে অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। বন বিভাগের তথ্য অনুসারে, কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বনাঞ্চল এবং এর আশেপাশে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৯০টি হাতি হত্যা করা হয়েছে। বানর, মেছো বাঘ ও ব্যাজারও প্রায়ই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

এসব ঘটনার বিচারের বিষয়টি সমানভাবে উদ্বেগজনক। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ তে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, কেউ বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে। কিন্তু বিচার ও অপরাধীদের শাস্তির বর্তমান হার মোটেই সন্তোষজনক নয়।

আমরা মনে করি, কীভাবে আমরা একটি সমাজ হিসেবে মানুষ-বন্যপ্রাণীর সহাবস্থানের ধারণার দিকে এগিয়ে যাব— সেটি সবচেয়ে বড় সমস্যা। কৃষি জমিতে প্রবেশ করার কারণে স্থানীয়রা প্রায়ই বন্যপ্রাণী হত্যা করেন। অনেকে দাবি করেন, বন্যপ্রাণী কৃষকদের জন্য 'উপদ্রব' হতে পারে এবং সেজন্যই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে।  বনভূমিতে কারো মালিকানার বৈধতা আছে কি না, তা ভিন্ন বিষয়। তবে বন্যপ্রাণীদের যে সেখানে নিজেদের আবাসস্থলে ও জীবনযাত্রায় সমান অংশীদারিত্ব আছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এক প্রজাতির স্বার্থে অন্য প্রজাতিকে কি শেষ করে দেওয়া উচিত?

নীতির প্রশ্নটি সরিয়ে রাখলেও, সচেতনতা বৃদ্ধি, পর্যবেক্ষণ জোরদার করা, অপরাধী ও বনভূমির দখলদারদের বিচারের আওতায় আনা এবং স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই একটি ভারসাম্য খুঁজে বের করা বন বিভাগ এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ প্রতিহত করতে আরও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আমরা বন্যপ্রাণী রক্ষায় সরকারকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

1h ago