ধলেশ্বরীর দূষণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না

কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে ও চামড়াশিল্প নগরীর সমস্যার সমাধান করতে হবে
ছবি: শেখ এনামুল হক

কয়েক দশক ধরে সরকারি পরিকল্পনা, আদালতের আদেশ ও নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও সাভারে বাংলাদেশের একমাত্র চামড়াশিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। ফলে অপরিশোধিত শিল্প বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। সে কারণে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং আশেপাশের পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।

বর্তমানে সিইটিপি ২৫ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য শোধন করতে পারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চামড়াশিল্প নগরীর ১৩২টি কারখানা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য অপসরণ হয়। এর অর্থ হলো, ব্যস্ত দিনগুলোতে বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ছেড়ে দিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে এমনটাই জানা গেছে।

সিইটিপি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে। এ কাজ প্রাথমিকভাবে শেষ করার যে পরিকল্পনা হয়েছিল তার তুলনায় বেশ কয়েক বছর বেশি সময় লেগেছে। প্রাথমিক ধারণার চেয়ে খরচও বেশি হয়েছে। তবুও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান দিতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে। এটি কর্তৃপক্ষের দুর্বল পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের একটি নিখুঁত উদাহরণ।

প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার ৯ বছর পরে সিইটিপি চালু হওয়ায় কেউ কেউ আশা করেছিলেন যে এটি আরও ভালোভাবে কাজ করবে। দুর্ভাগ্যবশত, এমনটি হয়নি।

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিইটিপির এখনও কোনো অনলাইন মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই এবং এর পরীক্ষাগারে পরীক্ষার সরঞ্জামও অপর্যাপ্ত।

পরীক্ষাগারটিতে ৮ ধরনের পরীক্ষার সরঞ্জামের মধ্যে মাত্র ৪টি স্থাপন করা হয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যে সরকারকে এখন ভারসাম্যপূর্ণ, আধুনিক, পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে যাতে সিইটিপি সম্পূর্ণরূপে চালু হয়।

কিন্তু, তার আগে আমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতে হবে: কেন এগুলো শুরুতেই নির্মিত হয়নি (চুক্তি অনুযায়ী)? মনিটরিং কর্তৃপক্ষ কী করেছে? তারা কি এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন ছিল, নাকি তারা তোয়াক্কাই করেনি?

ট্যানারির বর্জ্যের কারণে ধলেশ্বরী ও এর আশেপাশের পরিবেশ যখন ধ্বংসের পথে তখন বিসিক ও ট্যানারিগুলো মূল সমস্যা উপেক্ষা করে একে অন্যকে দোষারোপ করছে। দীর্ঘ সময় ধরেই এমনটা চলছে। এখন সময় এসেছে সব পক্ষের নিজেদের দায়িত্ব নেওয়ার।

গত আগস্টে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে সাভার চামড়াশিল্প নগরী বন্ধ করার সুপারিশ করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, ধলেশ্বরীর দূষণের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান নেওয়ার এখনই সময়। যদি বিসিক ও ট্যানারিগুলো কোনো চুক্তিতে আসতে না পারে এবং এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারে, তাহলে যে প্রক্রিয়ায় এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চলছে সেটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়ার কোনো কারণ আমরা দেখি না।

আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই। প্রয়োজনে সিইটিপি সম্পূর্ণরূপে চালু না হওয়া পর্যন্ত ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দিন।

 

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

1h ago