কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজে বিস্ময়কর অগ্রগতি

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজ এতো দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে যে, প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হওয়ার অনেক আগেই এটিকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আশা করছে কর্তৃপক্ষ। আমরা এটি জেনে আনন্দিত।  

প্রকল্পটির সময়সীমা ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে, এরইমধ্যে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেলের ৭৩ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ায় খুব শিগগির ব্যবহারের জন্য টানেলটি খুলে দেওয়ার আশা করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।  

প্রকল্প কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, টানেল নির্মাণের সবচেয়ে কঠিন অংশটি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখন ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রাস্তা ও টানেলের ভেতরে রাস্তা তৈরি করছে এবং ইউটিলিটি লাইন স্থাপন করছে। এগুলো সম্পন্ন হতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশা করছি আমরা।  

বছরের পর বছর ধরে দেশে প্রধান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মেয়াদ ও ব্যয়  বেড়ে যাওয়া যেন নিয়ম হয়ে উঠেছে। শুধু গত কয়েক মাসেই দ্য ডেইলি স্টার প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এর একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক প্রকল্প। গত সেপ্টেম্বরে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি শেষ হতে আরও আড়াই বছর লাগবে, ব্যয়ও বেড়ে দ্বিগুণ হবে।

এ পরিস্থিতিতে এটি সত্যিই উৎসাহজনক যে, টানেল নির্মাণকারী চীন কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ২০১৯ সালে ভৌত কাজ শুরু হওয়ার পরে কোনো সময় নষ্ট করেনি। প্রকল্পের ব্যয়ও সীমার মধ্যে রয়ে গেছে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, টানেলটি চালু হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে এর বিশাল প্রভাব পড়বে। এটি চট্টগ্রামের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া, এটি কর্ণফুলীর উভয় পাশে যানজট ও যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনবে এবং কক্সবাজারের মহেশখালী ও মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি সম্পন্ন হওয়ার পর আরও বড় ভূমিকা পালন করবে।  

বলা বাহুল্য, টানেলটি বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ককে উন্নত করবে।

যেহেতু প্রকল্পের সবচেয়ে কঠিন অংশটি সময়ের আগেই ভালোভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে, তাই বাকি কাজগুলোও সময়মতো শেষ হবে বলে আশা করছি আমরা।

টানেলের নির্মাণ কাজের গতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি আমরা আশা করি, দেশের অন্যান্য বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও একই রকম আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা হবে এবং সেগুলোর কাজও সময়মতো সম্পন্ন হবে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম 

Comments