আর নির্ঘুম রাত কাটাবেন না ইয়াসিন

ইয়াসিন আরাফাত (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: সংগৃহীত

ফেরা যাক দুই বছর পেছনে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস। নেপালের কাঠমুন্ডুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মিনিটেই বিক্রম প্রতাপের গোলে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ৪০তম মিনিটে সমতা ফেরালেও উদযাপন করার পর বিতর্কিত লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ইয়াসিন আরাফাতকে।

উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে দশ জনের ভারতের বিপক্ষে নয় জনের বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে হেরে হয়েছিল রানার্সআপ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে রবি বাহাদুর রানা লক্ষ্যভেদ করে ভেঙে দিয়েছিলেন লাল-সবুজ জার্সিধারীদের হৃদয়।

খুব কাছে পৌঁছেও শিরোপা না জিততে পারায় দুঃখবোধ জেঁকে ধরেছিল অনূর্ধ্ব-১৮ দলের অধিনায়ক ইয়াসিনকে। জার্সি উপরে তুলে মুখ ঢেকে উদযাপন করে লাল কার্ড পাওয়া এই লেফট-ব্যাক ড্রেসিং রুমে ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়। শুধু তা-ই নয়, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাতে হয় তাকে। হারের দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে ফিরছিল তাকে।

দুই বছর পর আরেকটি সেপ্টেম্বর মাসে এসে অবশেষে মুক্তি মিলেছে ইয়াসিনের। তার দারুণ হেডের কল্যাণে মালদ্বীপের মালেতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গত সোমবার পিছিয়ে পড়ে একজন কম নিয়েও ভারতকে ১-১ ব্যবধানে রুখে দেয় বাংলাদেশ।

ম্যাচের ২৬তম মিনিটে সুনীল ছেত্রী এগিয়ে দিয়েছিলেন ভারতকে। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে তাদের চেয়ে ৮২ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের দুর্দশা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে। কারণ সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় বিশ্বনাথ ঘোষকে। কিন্তু দশ জনের দল নিয়ে ম্যাচের বাকি অংশে দুর্দান্ত নৈপুণ্য উপহার দেয় অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যরা। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কর্নারে রাকিব হোসেন কাছের পোস্টে মাথা ছোঁয়ানোর পর দূরের পোস্টে থাকা ইয়াসিন হেডে নিশানা ভেদ করে উল্লাসে মাতান দলকে। ফিনিশিং দুর্বল না হলে এক পয়েন্টের বদলে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়েও মাঠ ছাড়তে পারত বাংলাদেশ।

ইয়াসিন আরাফাত। ছবি: সংগৃহীত

সাফে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ২০১৯ সালের ওই ফাইনালটি বারবার ভেসে উঠছিল ইয়াসিনের চোখের কোণে। কিন্তু ম্যাচের পর তার মনে আর কোনো ক্ষত নেই। তিনি স্বস্তিতে ঘুমাতেও পারছেন। কারণ প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে তার, 'যখন আমি ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামছিলাম, তখন সেই ঘটনাটি আমার মনে পড়ছিল এবং আমার মনে ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা। এই মুহূর্তে, সেই ফাইনালে হেরে যাওয়া নিয়ে আমাদের কোনো আফসোস নেই।'

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলা এই ডিফেন্ডার যোগ করেছেন, 'যখন বিশ্বনাথ ভাইকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়তে বলা হলো, তখন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ঘটনাটি আমার মনে ভেসে উঠেছিল। আমি ভাবছিলাম যে, একজন খেলোয়াড় কমে যাওয়ার পর আমরা ভালো কিছু করতে পারব কিনা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমি বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং আমার গোলের মাধ্যমে আমরা ভারতের বিপক্ষে ড্র করেছি।'

সেট পিস কাজে লাগানোর কৌশলের ব্যাখ্যায় ১৯ বছর বয়সী ইয়াসিন বলেছেন, 'আমরা যখন ম্যাচের আগে ভারতের বিপক্ষে সেট-পিসগুলো বিশ্লেষণ করে পরিকল্পনা করছিলাম, তখন আমরা দেখেছিলাম যে, তারা ডি-বক্সে আঁটসাঁট থাকলেও দূরের পোস্টে নড়বড়ে ছিল। তাই আমাদের সব খেলোয়াড় তাদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য কাছের পোস্টে চলে যায় এবং আমি দূরের পোস্টে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে পাঠাই।'

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ভারত, ভুটান ও জর্ডানের বিপক্ষে গোল করেছিলেন ইয়াসিন। এবার বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে গোলের খাতা খুলতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত তিনি, 'জাতীয় দলে গোল পেতে আপনার ভাগ্যের প্রয়োজন। কিন্তু আপনাকে সবসময় সুযোগ লুফে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ আপনি জানেন না কখন সুযোগ আসবে।'

নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেওয়া ইয়াসিন স্থানীয় কোচ আসলামের কাছে দীক্ষা নেওয়ার পর সুযোগ পান সিলেট ফুটবল একাডেমিতে। এরপর পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের হয়ে নজর কেড়ে তিনি ২০১৭ সালে নাম লেখান সাইফে। ক্লাবটির হয়ে গত তিন বছরে বিপিএলে পঞ্চাশটির বেশি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০১৯ সালে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার অভিষেক ঘটে।

Comments

The Daily Star  | English
taka weakens against us dollar in Bangladesh

Taka weakens against US dollar again

The inter-bank exchange rate hit Tk 122.78 per US dollar today

1h ago