ভূমি অফিসের কত ঘুষ প্রয়োজন?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে ভূমি অফিসের দুর্নীতির গল্পের কোনো শেষ নেই। স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রারের দপ্তরে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় এক খণ্ড জমির দলিল করাতে পারেননি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। গত বুধবার যশোরে এক জনসমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি সে কথা জানান। তিনি নিজে সরকারের লোক হলেও ভূমি অফিসের এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায় যে লজ্জায় তিনি এক সপ্তাহ ওই ঘটনার কথা গোপন রেখেছিলেন।

অবাক বিষয় হচ্ছে, তিনিই প্রথম সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোক নন যিনি ভূমি অফিসের এমন অপকর্মের শিকার হয়েছেন। এ বছরের জুনে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) বি এম আব্দুর রাফেল তাদের পারিবারিক জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে গেলে, সেখানে দুজন কর্মচারী তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তার পরিচয় জানার পরেও কর্মচারীদের মনে সামান্য ভয় বা অনুশোচনা হয়নি। তবে, পরে ঘুষের পরিমাণ ৫ হাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত ডিএজির ভাই ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজটি করিয়ে নেন। ওই দুই কর্মচারীর মধ্যে একজনকে পরবর্তীতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

এই যদি হয় সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে ভূমি অফিসের কর্মচারীদের পেশাদারিত্বের (থাকা বা না থাকার) নমুনা, তাহলে সাধারণ জনগণের সঙ্গে তাদের আচরণ কেমন হতে পারে, তা অনুমান করা খুব একটা কঠিন নয়। এপ্রিলে চকরিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার ও কক্সবাজার ভূমি অফিসের আরেক কর্মকর্তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৬ লাখ ৪২ হাজার ১০০ টাকার ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার করার ঘটনা থেকে আমরা সামান্য ধারণা পাই যে কী পরিমাণ টাকা এই লোকগুলো সাধারণ জনগণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন। আমরা আরও জানতে পেরেছি যে যথোপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় দুর্নীতির ডালপালা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এ অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশের মানুষ ভূমি সংক্রান্ত সেবা পাওয়ার জন্য প্রতিটি ধাপে ৫০০ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে বাধ্য হন। এক্ষেত্রে একটি সমাধান হতে পারে এমন একটি প্রক্রিয়া তৈরি করা যেন জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ স্থানীয় মধ্যস্থতাকারী কিংবা ভূমি কর্মকর্তাদের পরিবর্তে কেবল দাপ্তরিকভাবে নিষ্পত্তি হতে পারে। ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়াকেও দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিৎ, যেন মানুষ মধ্যস্থতাকারী ও দালালদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সহজে ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে পারে। তবে, ভূমি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক আগেই তাদের এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ ছিল। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভূমি অফিসে একটি জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার সংস্কৃতি তৈরি হবে এবং মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই সেবা নিতে পারবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
edible oil price hike in Bangladesh

Edible oil prices rise in spite of VAT cut

Consumers in Bangladesh saw no drop in soybean and palm oil prices over the past week even though the National Board of Revenue (NBR) has reduced an import VAT from 15 percent to 10 percent.

1h ago