লাশের গন্ধে বাবার মৃত্যুর কথা জানল ছেলে: জানা যাচ্ছে যেসব অদ্ভুত ঘটনা

ছবি: স্টার

রাজধানীর পল্লবী এলাকার একটি বাসা থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষক রোকনুদ্দিন আহমেদের (৮০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিজের বাড়িতে মারা গেলেও মরদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পরে ছেলে জানতে পারেন তারা বাবা মারা গেছেন।

গতকাল সোমবার বিকেলে রোকনুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে, পাশের ঘরে থেকেও বাবার মৃত্যুর খবর ছেলের না জানা ও পচা লাশ উদ্ধার হওয়ার পর ওই পরিবারটি সম্পর্কেও অনেক অদ্ভুত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, রোকনুদ্দিনের মরদেহের পাশেই অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় তার স্ত্রীকে। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার পল্লবীর কালসি কবরস্থানে রোকনুদ্দিন আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে নয় তলা বাড়িটিতে গিয়ে নিচ তলায় নিরাপত্তা প্রহরী কবির হোসেনের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদকের। কবির হোসেন জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি বাড়িটির গেটের পাশের একটি কক্ষে বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, 'বাড়িটিতে প্রতি তলায় একটি করে মোট আটটি ফ্ল্যাট আছে। এর মধ্যে পাঁচটি ফ্ল্যাটের মালিক রোকনুদ্দিন আহমেদ। তিনি স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন ও ছেলে রূপমকে নিয়ে ওই বাড়িটিতে বসবাস করতেন। তিনি সপ্তাহে এক থেকে দুদিন ইন্টারকমে আমাকে তার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটের দরজায় ডাকতেন। বেশিরভাগ সময় তিনি পাউরুটি, দই, মিষ্টি, ফ্রাইড চিকেন, চানাচুর ও বিস্কুটের মতো খাবার কিনে আনতে বলতেন। এক থেকে দুই সপ্তাহ পর পর তিনি বাড়ি থেকে বের হতেন।'

কবির হোসেন আরও বলেন, 'তবে, রূপম বাড়ি থেকে বের হতেন খুবই কম। দেড় বছরে তাকে চার-পাঁচবারের বেশি দেখা পাইনি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রোকনুদ্দিন আহমেদ শরীরে জ্বর অনুভব করার কথা বলেছিলেন। এরপরই ১০ দিনের ছুটিতে আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাই।'

তিনি জানান, গতকাল ঢাকায় ফিরে কবির হোসেন রোকনুদ্দিন আহমেদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার কথা জানতে পারেন। এর পরই প্রথমবারের মতো তিনি ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢোকেন। ভেতরে দেখেন, সবগুলো ঘর ধুলো আর আবর্জনায় পূর্ণ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রূপম জানান, বাবার নির্দেশ অনুযায়ী তিনি ঘর থেকে বের হতেন না। গত কয়েক দিন তিনি চানাচুর আর বিস্কুট খেয়ে ছিলেন।

জানা গেছে, রোকনুদ্দিন আহমেদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। ১৯৯৫ সালে তার এক ছেলে মারা যান। এ ছাড়া তার তিন মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে খুব একটা যোগাযোগ ছিল না।

পুলিশের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার শাহ কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চল্লিশোর্ধ্ব রূপম একসময় মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। তবে, এমবিবিএস পাস করতে পারেননি। এরমধ্যে বিয়েও করেছিলেন কিন্তু সেই সংসার বেশিদিন টেকেনি।'

ওই ভবনের আরেক ফ্ল্যাটের গাড়িচালক নূরুল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত সাত বছর ধরে আমি এই ভবনের একটি পরিবারের গাড়ি চালাই। আমি কোনোদিন রোকনুদ্দিন আহমেদের স্ত্রীকে বাসা থেকে বের হতে দেখিনি। আশপাশের লোকজনের কাছে শুনেছি তিনি বাসা থেকে বের হন না।'

শাহ কামাল বলেন, 'আমরা সন্দেহ করছি রোকনুদ্দিন আহমেদ দুএকদিন আগেই মারা গেছেন। তার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিনকে মরদেহের পাশেই অচেতন অবস্থা পাওয়া যায়।'

এই দম্পতির ছেলে রূপম গতকাল পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি দুদিন আগে তার বাবা-মায়ের ঘরে গিয়েছিলেন। দুর্গন্ধ ছড়ালে গতকাল বিকেলে তিনি বাবা-মায়ের ঘরে যান। সেখানে দেখতে পান, তার বাবার মরদেহ পচতে শুরু করেছে। এরপর থানায় জানালে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

Comments

The Daily Star  | English

You have crushed fascism, now strengthen democracy and press freedom

The Daily Star Editor Mahfuz Anam's appeal to the ‘new generation leaders’

10h ago