জিসিসিকে আইন ভাঙার অধিকার দিয়েছে কে?

জনসাধারণের সম্পত্তি ধ্বংস করে এবং নাগরিকদের মালিকানাধীন মূল্যবান জমি দখল করে শহরের রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত প্রশস্ত করার যে অভিযান গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) চালাচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য।

গাজীপুর শহরের কয়েক হাজার বাসিন্দা ইতোমধ্যে জিসিসির নির্বিকার অভিযানে তাদের জমি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। আমাদের অবশ্যই শহরের রাস্তা ও ফুটপাত প্রশস্ত করা দরকার। তবে, তা দেশের আইন মেনে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করতে হবে।

যদিও শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জিসিসি মেয়র বিদ্যমান আইনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন বলে মনে হচ্ছে। এই দেশে আইন মেনে কিছু করা যায় না—একজন সিটি মেয়রের মুখে এই কথা শুনে আমরা সত্যিই হতবাক।

এই দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে গৃহীত দুটি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে এবং ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। জিসিসি কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু করে। এই কাজে তারা চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে তারা জমির মালিকদের নিজেদের আবাসিক ভবন, কারখানা, দোকান ও সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলতে বাধ্য করে।

জিসিসি ভূমি অধিগ্রহণ না করে বা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়েই এসব কাজ করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাদের রাজনৈতিক প্রভাব আছে, শুধু তারা কিছুটা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

এ ছাড়া, জিসিসির জবরদখলে জমি হারানোর পর দুটি বেসরকারি কোম্পানি হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থিতাবস্থার আদেশ দিলেও আশ্চর্যজনকভাবে জিসিসি সেই আদেশও লঙ্ঘন করেছে।

আমরা মনে করি, জিসিসি আইনগতভাবে ভূমি অধিগ্রহণ না করে এবং শহরের বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে যে উদাহরণ তৈরি করেছে, তা লজ্জাজনক। কীভাবে একটি সিটি করপোরেশন হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করতে পারে তাও আমাদের বোধগম্যতার বাইরে।

সিটি করপোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো যদি আইন মেনে না চলে, তাহলে নাগরিকরা আইন মানবে বলে তারা কীভাবে আশা করবে? জিসিসির তহবিলের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে, তারা জনগণের সম্পত্তি দখল করে নেবে। আমরা এটাও জিজ্ঞাসা করতে চাই, প্রকল্পগুলো অনুমোদিত হওয়ার সময় কেন ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের কোনো বিধান ছিল না? জিসিসিকে অবশ্যই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

আমরা আশা করি, জিসিসি কর্তৃপক্ষ তাদের চেতনা ফিরে পাবে এবং ভূমি অধিগ্রহণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করবে। আমাদের উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু, যাদের উন্নতির জন্য এই উন্নয়ন, তাদের অধিকার হরণ করে বা আইন লঙ্ঘন করে নয়।

Comments

The Daily Star  | English
edible oil price hike in Bangladesh

Edible oil prices rise in spite of VAT cut

Consumers in Bangladesh saw no drop in soybean and palm oil prices over the past week even though the National Board of Revenue (NBR) has reduced an import VAT from 15 percent to 10 percent.

1h ago