অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও প্রকাশনা অফিসের অর্থায়নে এবং চট্টগ্রামের ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপের সহায়তায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার ও অপব্যবহারের কারণে বন্দরনগরীর সব বয়সের মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকারিতা বাড়ছে। সাম্প্রতিক এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের ২টি হাসপাতালের ১ হাজার রোগীর ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছিল শিশু। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৭ শতাংশ নবজাতক ও শিশু অন্তত ৩ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুতে আক্রান্ত। পাশাপাশি গবেষণায় অংশ নেওয়া ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৪০ শতাংশের অন্তত ৩টি অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে অন্তত ১টি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া গেছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা সবাই চট্টগ্রামের ছিলেন। তবে বাংলাদেশে যেভাবে মানুষ নিজে থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ সেবন করেন এবং যেভাবে এই ওষুধগুলো সতর্কতা ছাড়াই সারাদেশের অনেক লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসিতে বিক্রি করা হয়, তাতে দেশের বাকি অংশেও একই অবস্থা ভেবে নিলে ভুল হবে না। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকারিতা মায়ের কাছ থেকে সন্তানদের মধ্যেও ছড়াতে পারে। এ ছাড়াও, হাসপাতাল থেকে রোগীদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রোগজীবাণু প্রবেশ করতে পারে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার এবং অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত দুধ ও পোল্ট্রি পণ্য গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকারিতা তৈরি হতে পারে।

এই গবেষণার গবেষকরা জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় রোধে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ও এগুলোর জিনগত কাঠামো শনাক্তকরণের ওপর জোর দেন। তা না হলে, ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে শিশুদের চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

বাংলাদেশে যে যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ বিক্রি হয়, সেই বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। চট্টগ্রামের গবেষণার ফলাফল দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই চর্চা বন্ধ করার এখনই সময়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের বিপদ সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। একইসঙ্গে বৈধ ফার্মেসিগুলোকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে এই ধরনের ওষুধ মানুষের কাছে বিক্রি করতে হবে। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ শুধু রোগীদের চিকিৎসা করার সময় এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকারিতার বিষয়ে করণীয় বের করার ব্যাপারেই নয়, অ্যান্টিবায়োটিকের বেপরোয়া বিক্রি বন্ধের ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

Comments

The Daily Star  | English

No plan to lift ban on extremist groups

The interim government does not have any plan to lift the ban on extremist groups that were outlawed in recent decades.

1h ago