‘কষ্ট করেই সাফল্য পেতে হয়েছে’
নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষ হওয়ার পরই ক্রিকেটারদের তিন সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ওমান যাওয়ার আগে ঘরের মাঠে নেই আর কোনো অনুশীলন ক্যাম্প। কিন্তু ছুটির সময়টাতেও ফোন করে ফাঁকা পাওয়া গেল না নাসুম আহমেদকে। গত দুই সিরিজে বাংলাদেশের সফলতম বোলার ফোনের ওপাশ থেকে জানালেন, 'আমি খুব বেশি ছুটি নেই না, ভাই। তিন-চারদিন ছুটি কাটিয়ে বোলিং নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি।'
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাসুম ৫ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার হারানোর নায়কও এই বাঁহাতি স্পিনার। ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেদিন ধসিয়ে দিয়েছিলেন অজিদের ব্যাটিং।
নিউজিল্যান্ড সিরিজেও মেলে শাণিত নাসুমের দেখা। ৫ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে সিরিজসেরাও হয়েছেন তিনি। এই দুই সিরিজই তার জন্য ছিল আলোয় আসার মাধ্যম। ১০ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিতে তিনি খরচ করেছেন ওভারপ্রতি মাত্র ৪.৯৬ রান। টি-টোয়েন্টিতে যেটা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। এই দুই সিরিজ তার জন্য কতটা সাফল্যমণ্ডিত সেটা নাসুম টের পাচ্ছেন ভালোভাবেই, 'গত দুই সিরিজ আমার জন্য ছিল দারুণ। খুব উপভোগ করেছি। সন্তুষ্টিও আছে। কারণ ১৬ উইকেট পেয়েছি। সচরাচর তো টি-টোয়েন্টিতে উইকেট মিলে না। এছাড়া রান কম দিয়েছি।'
তবে এত কম রান দিয়ে এতগুলো উইকেট পাওয়ায় আছে খতিয়ে দেখার আরেকটি দিকও। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল টার্নিং ও মন্থরতম। স্পিনারদের জন্য রীতিমতো স্বর্গ। স্পিনারদের এমন সাফল্যের পেছনে উইকেটের বড় ভূমিকার কথা তাই উঠছে বারবার।
এই প্রসঙ্গ টানতে নাসুম অভিমানের স্বরেই বললেন, কেবল উইকেটের সহায়তাতেই সাফল্য এসেছে ব্যাপারটা এমন না, 'আসলে আমাদের খেলেই জিততে হয়েছে। উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হলেও আমাদের বোলারদের কাজটা তো করতে হয়েছে। বল করেছি আর হয়ে গেছে এমন তো না। কষ্ট করেই সাফল্য পেতে হয়েছে।'
তবে নাসুমও জানেন বোলিংয়ের সেই আসল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বিশ্বকাপেই। যেখানে উইকেট থেকে এত সহায়তা থাকবে না। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিকূল পরিবেশেও মানিয়ে নিতে আত্মবিশ্বাসী তিনি, 'পরিস্থিতি অনুযায়ী বল করতে হবে। যখন যে পরিস্থিতি আসবে, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। পেশাদার খেলোয়াড় হলে মানিয়ে নিতে হয়। আমিও সেসব উইকেটে মানিয়ে নিব।'
পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতির জন্য নাসুম পাচ্ছেন রঙ্গনা হেরাথের মতো অভিজ্ঞ একজনকে। বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে আসা শ্রীলঙ্কান এই কিংবদন্তির সঙ্গে কাজ ভীষণ উপভোগ করছেন তিনি, 'হেরাথের সঙ্গে কাজ খুব বেশি উপভোগ করছি। যখন যেটা নিয়ে উনার কাছে হাজির হচ্ছি, উনি একটা সমাধান বের করে দিচ্ছেন। উনার পরামর্শেই নিজেকে শাণিত করছি।'
সীমিত সংস্করণে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় আরেকজন বাঁহাতি স্পিনারের জায়গা থিতু ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে অন্তত সেই জায়গা নিতে চলেছেন নাসুম। তার লক্ষ্য ওয়ানডেতেও জায়গা করে নেওয়া। তবে সেই লক্ষ্যের পথে এগুতে চ্যালেঞ্জটাও মাথায় আছে তার, 'নিজের জায়গা পাকা করতে হলে পারফর্ম করে যেতে হবে। পারফর্ম করতে না পারলে জায়গা থাকবে না। এটাই সহজ হিসেব। আমি সেটা মাথায় নিয়েই খেলছি।'
নাসুমের ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে বড় উৎসাহ যুগিয়েছেন তার মা। কিন্তু গত বছর মাকে হারিয়েছেন তিনি। প্রথমবার দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে যাওয়ার আগে তার প্রেরণার উৎস নিজের পরিবার, '২০২০ সালের জুন মাসে আমার মা মারা যান। তারপর থেকে বাবা একটু একা হয়ে গেছেন। আমি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ায় সবাই খুশি। মা বেঁচে থাকলে অবশ্যই অনেক খুশি হতেন।'
'আমার বাবা তেমন একটা কিছু বুঝেন না। টিভিতে খেলা দেখেন, আমি যদি পড়ে যাই, তখন উদ্বিগ্ন হন ব্যথা পেয়েছি কিনা।'
বিশ্বকাপে লক্ষ্য কি? এই প্রশ্নে ব্যক্তিগত জায়গায় নজর না দিয়ে নাসুম ভাবছেন দলের কথা, 'ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে সব সময়ই আমার দলের কথা আগে মাথায় আসে। আমি যদি কোনো উইকেট না পেয়েও কোনোভাবে দলকে জেতাতে ভূমিকা রাখতে পারি, তাহলেই নিজেকে সফল মনে করব।'
Comments