বিটিআরসির ডানা ছাঁটার আইন কেবল এই খাতের অনিষ্টই করবে
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে চলেছে পৃথিবী। বৈশ্বিক টেলিকমিউনিকেশন শিল্পে সূচকের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা এই কারণে উদ্বিগ্ন যে, উল্লিখিত পথ অনুসরণের বদলে টেলিযোগাযোগ আইনের পরিকল্পিত সংশোধনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ বরং পেছনের দিকে যাওয়ার একটা বড় উদ্যোগ নিচ্ছে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনের (বিটিআরসি) স্বাধীনতা কেড়ে নেবে আর বিটিআরসির বেশিরভাগ ক্ষমতা চলে যাবে মন্ত্রণালয়ের হাতে। যা কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা ও কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। যা চূড়ান্তভাবে এই শিল্পের বিকাশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এর আগে ২০১০ সালে লাইসেন্স ইস্যু, হস্তান্তর কিংবা বাতিল, ট্যারিফ নির্ধারণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন পরিষেবার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার শর্ত তৈরি করে একবার বিটিআরসির স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করা হয়েছে। আর ২০২১ সালের খসড়া সংশোধনী হবে বিটিআরসির কফিনে শেষ পেরেক। কমিশন যা করতে চায় তার প্রায় সবকিছুর জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরির ভেতর দিয়ে সংশোধনীর এই প্রক্রিয়া কমিশনের প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের কাছে স্থানান্তর করবে। এর ফলে কমিশনের চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই বিটিআরসির উচ্চপদের কর্মী (গ্রেড ১ থেকে ৯) নিয়োগ, তাদের পদোন্নতি, বদলি ও শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা চলে যাবে মন্ত্রণালয়ের হাতে। পাশাপাশি বিটিআরসি কমিশনারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কাছ থেকে মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বিটিআরসির স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা হলো, কমিশন প্রায়ই স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে কাজ করে। বিশেষ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে। এমন কিছু হয়ে থাকলে তা তদন্তের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সে অনুসারে সবকিছু করার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের এমনিতেই আছে। তাই বিটিআরসির ক্ষমতা পুরোপুরি আমলাতন্ত্রের হাতে ন্যাস্ত করার পেছনে এটা কারণ হতে পারে না।
এটা উদ্বেগজনক যে, প্রস্তাবিত সংশোধনী কীভাবে ভোক্তা, এই খাত ও খাত সংশ্লিষ্ট ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করবে, সে ব্যাপারে সরকারকে খুব একটা চিন্তিত মনে হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, টেলিকম শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টিকারী চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতাগুলো আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া এটা কীভাবে কাজ করবে ও 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করবে, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট কোনো ধারণা এখানে নেই। আধুনিক সময়ের জন্য ২০ বছরের পুরনো একটি আইন হালনাগাদ করার বদলে এই সংশোধনী কেবল টেলিকম খাতের ওপর সরকারের দখল পোক্ত করবে ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করবে। যেখানে সরকার একইসঙ্গে এই খাতের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক—দুইই হয়ে উঠবে।
এভাবে আইন সংশোধনের পেছনে আমরা স্রেফ কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। এই উদ্যোগ কেবল এই শিল্পকে আধুনিক করতে ব্যর্থ হবে তাই না, বরং চূড়ান্তভাবে এই খাতের ক্ষতি করবে।
অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments