স্কুল খোলার গাইডলাইনে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে বিশেষ প্রাধান্য দিতে হবে
প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে স্কুল ও কলেজ খুলতে যাচ্ছে, যেটি একটি ইতিবাচক ঘটনা। গত শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্কুল খোলার ঘোষণা দেওয়ার সময় জানান, কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে এবং তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালাগুলো ঠিকমত চালু করা ও বজায় রাখার বিষয়গুলো কঠোরভাবে নিরীক্ষণ করবে।
আমরা অবশ্যই শিক্ষা কার্যক্রমকে আবারও শুরু করার সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই। তবে এক্ষেত্রে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, স্কুল ও কলেজে ক্লাস শুরু করার প্রস্তুতির জন্য ১০ দিনেরও কম সময় দেওয়া হয়েছে। উভয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এ বছরের চারটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবেন আর অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক বা দুইবার শারীরিকভাবে ক্লাসে যোগ দেবেন। কিন্তু গত প্রায় দেড় বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা শ্রেণিকক্ষগুলোর কী অবস্থা, সেটা কি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ও বিভিন্ন সুবিধাগুলোর পরিচ্ছন্নতার পরিস্থিতি কী? এমন কোনো সেবা, যেমন বিদ্যুতের লাইন বা পানির পাইপ যার মেরামত প্রয়োজন?
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে স্কুল খুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে এবং সংক্রমণের হার কমে যাওয়া স্বত্বেও মাস্ক পরা, শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধাসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখার ওপর জোর দিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএসএইচই) পরিচালক সম্প্রতি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দেহের তাপমাত্রা মেপে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। এ ধরনের নির্দেশনা খুবই প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু আমরা চিন্তা করছি কোনো সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত সরকারি সহায়তা ছাড়া কীভাবে স্কুলগুলো তাদের সীমিত তহবিল ও জায়গা নিয়ে এগুলো বাস্তবায়ন করবে।
এই পত্রিকার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন তারা এই সপ্তাহের মধ্যে স্কুল খোলা সংক্রান্ত চূড়ান্ত নির্দেশনা তৈরি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে, স্কুলগুলোর হাতে চূড়ান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য এক সপ্তাহেরও কম সময় থাকবে। স্কুলগুলোকে এখন লাখো শিক্ষার্থীদের দেড় বছরের লেখাপড়ার ঘাটতি পূরণ করার কঠিন দায়িত্বটি পালন করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি বলতে চাই, এই নির্দেশনাগুলো আগেই তৈরি করে, সেগুলো স্কুল ও কলেজগুলোকে জানিয়ে, তারপরেই কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলার জন্য দিনটি নির্বাচন করা উচিত ছিল, তাহলে খুব একটা অন্যায় হবে না। একদম শুরু থেকেই, বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেছেন শুধুমাত্র স্কুল খোলাই যথেষ্ট নয়, লেখাপড়ার ঘাটতি পূরণে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পাঠ ও শিক্ষাদান পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। এছাড়াও এনজিও ও সামাজিক সংস্থার সহায়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলো থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া যেতে পারে। এ পর্যন্ত উল্লিখিত সুপারিশগুলোর কোনোটি স্কুল ও কলেজ পুনরায় খোলার কৌশলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কী না, তা পরিষ্কার নয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারও খোলার বিষয়টি যদি এলোমেলোভাবে করা হয়, তাহলে সেটি শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিতে ফেলবে। এ বিষয়টি যাতে না হয়, সেটি কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়গুলোর হাতে এক বছরের বেশি সময় ছিল। শিক্ষা ব্যবস্থা আবারও চালু করার নেপথ্যে এমন একটি সুচিন্তিত কৌশল থাকা উচিত, যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে তাদের পড়ালেখায় ফিরে আসা ও শিক্ষার ঘাটতি পূরণের প্রক্রিয়াটি মসৃণ করার বিষয়।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments