মোহনায় নাব্যতা সংকট: নদী-উপকূলে নেই ইলিশ
আলাউদ্দিন ঢালী ছয় জনের একটি দল নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে। কিন্তু, পাঁচ দিন পর গত সোমবার মাত্র চার থেকে পাঁচ মণ ইলিশ নিয়ে তিনি পটুয়াখালীর মহিপুরে আসেন। প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে যে পরিমাণ মাছ পেয়েছেন তার মূল্য দেড় লাখ টাকার কম।
মহিপুর মৎস বন্দরে জেলে আবু তালেব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী ও সাগরের মোহনায় যেখানে ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট পানি থাকার কথা সেখানে কোথাও কোথাও ১০-১২ ফুট পানি আছে।'
তিনি মনে করেন, মোহনার যে অংশ দিয়ে সমুদ্র থেকে ইলিশ নদীতে আসে সেই অংশে নাব্যতার অভাব। ফলে সমুদ্রের মাছ ইলিশ নদীতে ঢুকতে পারছে না।
সানু মাঝি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শত শত নৌকা নিয়ে জেলেরা মোহনায় গেলেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছরে একই সময়ে মাছ পাওয়া গেলেও এবার নদী ও সাগর উপকূলের কাছে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।'
ভোলার সদর উপজেলার হেলাল উদ্দ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বেশ কয়েক দিন ধরে নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মাছ ধরতে যাচ্ছি না।'
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের মজিবর মাঝি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোহনায় কোথাও কোথাও ট্রলার ডুবো চরে আটকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ উপকূল থেকে আরও দূরে সরে যেতে পারে।'
বরিশাল বিভাগীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞা পর ইলিশ যখন নদীতে থাকার কথা তখন নদী ও সাগর উপকূলে তা পাওয়া যাচ্ছে না।'
ভোলা সদর উপজেলার আলাউদ্দিন মাঝি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী ও সাগর উপকূলে মাছ না থাকায় বর্তমানে জাল ও ট্রলার মেরামত করে সময় কাটাচ্ছি। ধার-দেনা করে এতদিন চলছিলাম ইলিশে আশায়। কিন্তু, ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।'
বরিশাল বিভাগের ইলিশের সবচেয়ে বড় মোকাম পোর্ট রোড ইলিশ পাইকারী বিক্রয় কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে অল্প সংখ্যক ছোট আকারের ইলিশ বাজারে আছে।
এই কেন্দ্রে কর্মরত উজ্জ্বল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন প্রতিদিন এখানে চার থেকে পাঁচ মণ ইলিশ আসে। গত বছর এর চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি ইলিশ এসেছিল।'
তিনি জানান, ইলিশের সরবরাহ না থাকায় এই বিক্রয় কেন্দ্রের প্রায় তিন হাজার ইলিশ বিক্রেতা ও শ্রমিক সংকটে আছেন।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস কার্যালয়ের উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোহনায় নাব্যতার অভাবের পাশাপাশি অনেক বেশি সংখ্যক নৌকা দিয়ে মাছ ধরার কারণেও ইলিশের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে নদীতে ইলিশ আসতে পারছে না।'
তবে তিনি আশা করেন আগামী কয়েক দিন পর থেকে ইলিশ পাওয়া যাবে।
তিনি জানান গত বছর বরিশাল অঞ্চল থেকে তিন দশমিক ৫ লাখ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল। এবারে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন দশমিক ৬ লাখ টন।
এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্য কিভাবে পূরণ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখনো সময় আছে।'
Comments