ফুল কিনতে গিয়ে আর ফিরলেন না!
বংশালের ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমানের ছেলের জন্মদিন ছিল ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর। মাহফুজ তার ছেলেকে বিশেষ এই দিনটিতে ফুল এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি রাখতেই তিনি শাহবাগ যান ফুল কিনতে। কিন্তু, এরপর আর ঘরে ফেরেননি।
পরবর্তীতে তার পরিবার জানতে পারে, সাদা পোশাকে একদল মানুষ তাকে শাহবাগের ফুলের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে মাহফুজের আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেয় মাহফুজের দুই সন্তান ও তাদের মা নিলুফা।
এই দিনটিতে গুমের ঘটনার শিকার অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে তাদের দুঃখের কথাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। একই সঙ্গে তারা এই বিষয়ে রাষ্ট্রের উদাসীনতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতার কথা একে অপরকে জানান। তারা একাত্ম কন্ঠে প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
তাদের সবাই এই বড় ধরনের অন্যায়ের সুবিচার, প্রতিটি গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি চান। সবাই এক হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা নেন।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর এই দাবিগুলো অযৌক্তিক ও অন্যায্য নয়। এই দাবি তুলে তারা কোনো সুবিধা বা অনুগ্রহ চাচ্ছেন, এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। তাদের দাবি দেশের সংবিধান এবং রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সদস্যপদ ও অংশগ্রহণ রয়েছে এরকম অসংখ্য আন্তর্জাতিক সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী যুক্তিসঙ্গত।
স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারের তালিকার উপরের দিকেই থাকবে। এ ছাড়াও, কোনো নাগরিকের সাংবিধানিক বা আইনি অধিকার লঙ্ঘন হলে যথাযথ জাতীয় ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কার্যকর সমাধান পাওয়ার অধিকারও আছে।
সংবিধানের ৩১ নম্বর ধারায় দ্ব্যার্থহীনভাবে বলা আছে, 'আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত: আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।'
এই অবস্থানটি আরও সুস্পষ্ট হয়েছে ৩২ নম্বর ধারায়। সেখানে বলা হয়েছে, 'আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।' ৩৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে 'গ্রেপ্তারকৃত কোনো ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।' উপ-ধারা (২) আরও বলছে, 'গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে (গ্রেপ্তারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাহাকে অতিরিক্তকাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না।' একজন মানুষের নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের এই ধারা ও উপধারাগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু আন্তর্জাতিক সমঝোতা চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে জনগণের এই অধিকারগুলো আরও সুরক্ষিত করা হয়েছে।
স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকারকে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার। বিষয়টি শুনতে বিচিত্র মনে হলেও, অন্য যেকোনো ধরণের অধিকার চর্চার পূর্বশর্ত হিসেবে 'জীবিত থাকার' কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়টি দ্য ইউনিভার্সাল ডিক্লেয়ারেশন অব হিউম্যান রাইটস (১৯৪৮) এর তিন নম্বর ধারা এবং অন্য সকল মৌলিক মানবাধিকার সংক্রান্ত রীতিনীতির অন্তর্ভুক্ত। ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিকাল রাইটস প্রতিটি মানুষের জীবনযাপনের জন্মগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে জানিয়েছে এই অধিকারকে 'আইনের দ্বারা রক্ষা করা হবে' এবং 'কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে জীবন থেকে বঞ্চিত করা হবে না'।
এ ছাড়াও কনভেনশন এগেইন্সট টর্চারকে (সিএটি) প্রায় ২০ বছর আগে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ, কোনো উপযুক্ত ব্যাখ্যা ছাড়াই গত ১৯ বছর ধরে এর বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া থেকে আমরা বিরত রয়েছি। অভিযুক্ত প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই গুমের সঙ্গে নির্যাতন যুক্ত হয়েছে। শারীরিক ও মানসিক এই অত্যাচার ভুক্তভোগীদের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার সঙ্গে কী হয়েছিল তা নিয়ে জীবনের বাকী সময়ে মুখ খোলেন না। মুক্তিপণ ও অপহরণের একটি তথাকথিত গল্পই সবার কানে পৌঁছায় মাত্র।
গুমের অভিযোগগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো বারবার উপরে উল্লেখিত সংবিধানের ধারাগুলো লঙ্ঘন করছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বর্ণনায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের বেশিরভাগই অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের অনেকেই বিরোধী দলের সদস্য অথবা তাদের ছাত্র, শ্রম বা যুব সংগঠনগুলোর সদস্য ছিলেন। কারও আবার ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল, কেউ ছিলেন সাংবাদিক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সার। তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক বা নাগরিক কার্যক্রমে অংশ নিতেন এবং তারা তাদের নিজ আদর্শ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার সঙ্গে মিল রেখে সমাজে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতেন।
যারা গুম হয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র অল্প কয়েকজনের আগের পুলিশ রেকর্ড ছিল। বাকিরা এই 'কলঙ্ক' থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। বেশিরভাগকেই তাদের বাসা থেকে (অনেক ক্ষেত্রেই গভীর রাতে) অথবা অন্য কোনো উন্মুক্ত জায়গা থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয়ে কিছু মানুষ তুলে নিয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সাদা পোশাকে ছিলেন, আবার অনেক ক্ষেত্রে ইউনিফর্ম কিংবা জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন। তাদের হাতে ওয়াকি টকিও দেখা যেত, যা সুনির্দিষ্টভাবে একটি বিশেষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে চিহ্নিত করে। কিছু ক্ষেত্রে তাদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোগো সম্বলিত গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে নেওয়া হয়েছে ঘোলা কাঁচে ঘেরা সাদা মাইক্রোবাসে করে। এ ধরণের একটি ঘটনাতেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখানো হয়নি।
আমরা আশা করতে পারি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ নম্বর ধারা (যেটি ২০০৩ সালে হাইকোর্ট সংশোধন করেছিলেন এবং ২০১৬ সালে আপিল বিভাগ সেটিকে অনুমোদন দেয়) অনুসরণ করবে। সেই আইনের অংশ হিসেবে হাইকোর্ট ১৫ দফা নির্দেশাবলী জারি করে, যা মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে এ যাবত দেখা গেছে, এই নির্দেশগুলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
কয়েকটি ঘটনায় হতাশায় নিমজ্জিত পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলে হয়, তাদেরকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে এবং শিগগির ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি এবং পরিবারগুলোর অপেক্ষার পালা কেবল দীর্ঘায়িত হয়েছে। কিছু পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়, তারা যদি গণমাধ্যমের কাছে কিছু জানায় তাহলে ভয়ানক পরিণতি নেমে আসবে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্দশাগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা ভীষণ মাত্রায় বিস্মিত হন, যখন স্থানীয় থানার কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পারেন তারা এমন কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানেন না। অনেক পরিবার বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়েও তাদের নিকটজনের ব্যাপারে কোনো ধরণের তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন।
তারা এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখে আরও বিস্মিত হন। একটি রুটিন প্রক্রিয়া হওয়া স্বত্তেও তারা এসব ঘটনার ক্ষেত্রে ডায়েরি নিতে চান না।
সমাজে যাদের ভালো নামডাক আছে, তারাও এক্ষেত্রে খুব একটা সফল হতে পারেন না। এমনকি যাদের পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুবান্ধবদের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, তারাও এক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধা পান না। দিন, সপ্তাহ, মাস, এমনকি বছর চলে যায়, কিন্তু তাদের কোনো খবর পাওয়া যায় না। অভিযোগের তদন্তের ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি হয় না। কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়, এমনকি তাদেরকে হুমকিও দেওয়া হয়।
ইতোমধ্যে, একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যের অনুপস্থিতিতে কিছু পরিবার গভীরভাবে দারিদ্র্যে নিমজ্জিত হয়ে যায় এবং তাদেরকে ঋণ দেওয়ারও কেউ থাকে না। তাদের সন্তানের পড়ালেখা বিঘ্নিত হয়, মেয়ে শিশুদের যথাযথ সময়ের আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তাদের স্ত্রীদের মাসের পর মাস সঙ্গীবিহীন দুঃখ দুর্দশায় থাকতে হয় এবং জীবন জীবিকার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখাপেক্ষী হযে থাকতে হয়। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে সুষ্ঠু নথির অভাবে চাকরিদাতা, ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ আদায় করা এবং পারিবারিক সম্পত্তির বিষয়গুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও তারা বড় ধরণের সমস্যায় পড়েন।
কিছু ক্ষেত্রে অনেক দিন, সপ্তাহ বা মাস পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অথবা তাদের মরদেহ পাওয়া যায় রাস্তার পাশে কিংবা খাল-বিলে। অনেককে সীমান্ত এলাকা বা এমনই বিচিত্র কোনো জায়গায় ভারসাম্যহীন ও দিশেহারা অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের সামনে নিয়ে আসা হয়েছে, কিন্তু এর মাঝের সময়টিতে তারা কোথায় এবং কী অবস্থায় ছিলেন সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। কিছু ভাগ্যবান মানুষ প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরেছেন, কিন্তু আটক থাকা অবস্থায় অভিজ্ঞতার ব্যাপারে তারা একেবারে নিশ্চুপ।
প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিবারের সদস্য, গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং এমন কি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও গুমের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ সরকার এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। ২০১৯ সালে ওএমসিটি-অধিকারের একটি প্রতিবেদনের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, 'একটিও গুমের ঘটনা ঘটেনি।' অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তারা এসব অভিযোগকে সরকারের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে একটি বিশেষ মহলের চক্রান্ত হিসেবে দেখেন। সরকারের প্রতিনিধিরা বলছেন, এই তথাকথিত হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো প্রকৃতপক্ষে 'গ্রেপ্তার এড়ানো' অথবা শনাক্ত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য নিজেরাই লুকিয়ে থাকেন। এই কাজগুলো তারা করেন 'ব্যবসায়ে অনিয়ম অথবা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোর পর'। অর্থাৎ, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল গুমের অভিযোগকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সরকার যুক্তি দিয়েছে, হারিয়ে যাওয়া অনেক মানুষই পরে আবার ফিরে এসেছেন এবং তাদেরকে 'গ্রেপ্তার' দেখানো হয়েছে। যা গুমের অভিযোগকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাকচ করে দেয়। তবে পরিশেষে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া, 'গ্রেপ্তার দেখানো' অথবা আবারও ফিরে আসার বিষয়গুলো কোনভাবেই এই ব্যাপারটিকে নাকচ করে না যে মধ্যবর্তী সময়টিতে তারা হাজতে কিংবা অপহৃত অবস্থায় ছিলেন, যা গুমের সমতুল্য। একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অন্তর্ধান থাকলেই কেবল সেটিকে গুম বলা যাবে, এ ধরণের কোনো বাধ্যবাধকতা বা নিয়ম নেই।
গুম এমন একটি প্রক্রিয়া যা আইনের শাসনের পরিপন্থী। সরকারের এ বিষয়ে যে অবস্থান, তা শত শত পরিবারের সদস্যদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সরাসরি নাকচ করে দেয়। এ ধরণের অস্বীকৃতি মৃতদের প্রতি অবমাননাকর, যাদেরকে আইন অনুযায়ী সুরক্ষিত রাখার কথা ছিল সরকারের। যদি ভুক্তভোগীরা তাদের অপরাধমূলক কাজের পরিণাম থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে থাকে, তাহলে এটাই কি স্বাভাবিক নয় যে সরকারি সংস্থাগুলো তাদেরকে খুঁজে বের করবে? এবং এটাই কি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয় যে তাদের অন্তর্ধানের সময়টুকুতে তারা কোথায় ছিলেন এবং কী করেছেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত খুঁজে বের করবে?
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা এবং তদন্তে যুগপৎ অনীহা এই প্রক্রিয়ার প্রতি সরকারের নীরব সমর্থন থাকার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলের দাবিকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা দেয়। সরকারি নির্দেশেই গুমের ঘটনাগুলো ঘটছে এমন বলার সময় হয়তো এখনও আসেনি। কিন্তু বিষয়টিকে অস্বীকার করা এবং কাউকে এর জন্য দায়ী না করার ফলে এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উৎসাহ তৈরি করছে। এতে করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের ভরসা কমাচ্ছে।
সবার সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করার সম্ভবত এটাই উপযুক্ত সময়। যত তাড়াতাড়ি এটা নিশ্চিত করা যায় এবং যত দ্রুত নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ের গুরুত্ব স্বীকার করে নেবেন, ততই এটি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এবং এর সঙ্গে আইনের শাসন ও দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
সি আর আবরার পেশায় একজন শিক্ষক। এই লেখায় তাকে সহযোগিতা করেছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও রেজাউর রহমান লেনিন।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments