বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সময় শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

ইলাস্ট্রেশন: এহসানুর রাজা রনি

৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। বৈশ্বিক পর্যায়ের শিক্ষাক্ষেত্রেও যা দীর্ঘতম শাটডাউনগুলোর একটি। এ পর্যায়ে আমরা জেনে খুশি হয়েছি যে, কর্তৃপক্ষ মধ্য অক্টোবর থেকে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক সভায় ঘোষণা করা হয়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হবে এবং ১৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে।

এই প্রলম্বিত শাটডাউনে অনলাইন শিক্ষার দিকে যাওয়ার কিছু প্রচেষ্টা ছিল। যদিও বিপুল ডিজিটাল বৈষম্য, অপর্যাপ্ত পরিকল্পনা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আসা এলোমেলো নির্দেশনার কারণে এ ব্যাপারে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। ইউনেসকো মহামারির জন্য শিক্ষার এই ক্ষতিকে অভিহিত করেছে 'প্রজন্মগত বিপর্যয় হিসেবে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস শুরু করা ও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি একমত। যদিও এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার সময় তাদের সুরক্ষার ব্যাপারেও আমাদের সমানভাবে নজর দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৫ হাজার নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মাত্র ৩৫ শতাংশের টিকা দেওয়া হয়েছে। ইউজিসি থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এখনও প্রায় তিন লাখ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর দুই ডোজ টিকা দেওয়া দরকার। এদের মধ্যে এখনো দুই লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন হয়নি। তাহলে এসব শিক্ষার্থীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? অক্টোবরের মধ্যে এদের সবার টিকা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট টিকার মজুত কি সরকারের হাতে আছে? যদি শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে হয়, তাহলে কি সেটা চলতি মাসের শুরুতে গণটিকাদান কর্মসূচির মতো জনাকীর্ণ ও বিশৃঙ্খল হবে?

হলগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়টি আরেকটি ইস্যু। যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সহানুভূতিহীন থাকার অভিযোগ আছে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই এ ব্যাপারে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু যদি হল না খোলে, আর যদি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হয় অথবা ক্লাসে যোগ দিতে হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ কি ভেবে দেখেছে, কীভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসনের খরচ বহন করবে? ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেছেন, ক্লাসরুমে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। আমরা আশা করি, এসব প্রোটোকলসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের জানানো হবে। এখন পর্যন্ত পড়াশোনায় টানা ব্যাঘাতের পাশাপাশি অনিশ্চয়তা ও পুনরায় ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রচুর চাপ তৈরি করেছে।

স্কুল-কলেজ পুনরায় চালুর ব্যাপারে যখন সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তখন এটা প্রত্যাশা করা যায় যে, চলতি সপ্তাহের ভেতরেই এ ব্যাপারে একটা ঘোষণা দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আর যেন বিলম্ব করা না হয়। একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সব স্কুল-কলেজ পুনরায় খুলে দেওয়ার কৌশল নির্ধারণে যেন বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনা হয়। দিনশেষে এটা অপরিহার্য যে, শিক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে আছে তাদের কল্যাণ। আর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তারা যেন তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো জানাতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Bid to remove president: BNP at odds with student movement

The interim government’s decision on whether to remove President Mohammed Shahabuddin from office is still awaiting a “political consensus”, because the BNP believes removing him would unnecessarily stir things up in post-Hasina Bangladesh.

9h ago