আফগানিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনুন
প্রতিদিনই দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ার কারণে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা জটিল হয়ে যাচ্ছে। যদিও গণমাধ্যমের সামনে তাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবানরা সংযত সুর অবলম্বন করেছে, তবুও আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে, দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি এখনো বেশ অস্থিতিশীল। এ কারণে, বাংলাদেশের সরকারের জরুরি দায়িত্ব হচ্ছে আফগানিস্তানে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তারা চাইলে যেন দেশে ফিরতে পারে, সে ব্যবস্থা করা।
গত সোমবারে আমরা কাবুলের এয়ারপোর্টে বিশৃঙ্খলা দেখেছি। বিমানবন্দর ছাড়তে উদ্যত উড়োজাহাজে ওঠার জন্য মানুষের বেপরোয়া ছোটাছুটির কারণে কমপক্ষে তিন জন বেসামরিক আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। ফলে বিমানবন্দরে সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায় এবং দেশটি থেকে বের হওয়া মোটামুটি অসম্ভব হয়ে পড়ে।
দ্য ডেইলি স্টারের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে থাকা ২১ জন বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যেকেই দেশে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে আট জন টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোতে, ছয় জন ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালে এবং দুইজন পয়ঃনিষ্কাষণ বিভাগে কাজ করেন। একজন সদ্য জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিও আছেন সেখানে।
আট প্রকৌশলীর সোমবার সন্ধ্যায় ফেরার কথা ছিল এবং ব্র্যাকের কর্মকর্তারা আজকে ফেরার টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু, বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো এখনো চালু না হওয়ায় তারা নিশ্চিত নন ঠিক কবে যাত্রা করতে পারবেন। আমরা তাদের দ্রুত দেশে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানাই। ভারতসহ অন্যান্য দেশ তাদের নাগরিকদের নিজস্ব বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদেরও উচিত এই বিকল্পটি বিবেচনা করে দেখা এবং সঙ্গে স্থল সীমানা দিয়ে বের করে আনার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা উচিত।
একইসঙ্গে আমরা আশা করছি আফগানিস্তানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বৃহত্তর প্রতিক্রিয়াগুলোকেও গুরুত্ব সহকারে আমলে নেওয়া হবে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জানান, আমাদের দেশের সীমানার মধ্যে থাকা তালেবান সমর্থকরা আফগানিস্তানের ঘটনাগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করতে পারে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আফগানিস্তানফেরত জঙ্গিদের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ দুই জন জঙ্গিকেও গ্রেপ্তার করেছে, যাদের আফগানিস্তান যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এই ঝুঁকিকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখা যাবে না।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments