‘আমরা এখানে দুশ্চিন্তায়, দেশে স্বজনরা’

শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় দেশে ফিরতে পারেননি আফগানিস্তানে কর্মরত একটি মুঠোফোন কোম্পানির সাত বাংলাদেশি প্রকৌশলী।
ঠাকুরগাঁওয়ের মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, গাজীপুরের রাজিব বিন ইসলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের আবু জাফর মাসুদ করিম ও ফেনীর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। ছবি: জুম ভিডিও থেকে নেওয়া

শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় দেশে ফিরতে পারেননি আফগানিস্তানে কর্মরত একটি মুঠোফোন কোম্পানির সাত বাংলাদেশি প্রকৌশলী।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কাবুল হয়ে তাদের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু, কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলার কারণে তাদের ফ্লাইট বাতিল হয়।

এই বাংলাদেশিরা এখন চরম দুশ্চিন্তায় আছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

বিমানবন্দর স্বাভাবিক হলেই যেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়, সরকারের প্রতি সেই অনুরোধও করেছেন তারা।

এই সাত বাংলাদেশি হলেন: ঠাকুরগাঁওয়ের মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও আবু জাফর মাসুদ করিম, গাজীপুরের রাজিব বিন ইসলাম ও মনিরুল হক, ফেনীর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের ইমরান হোসেন এবং গাইবান্ধার শেখ ফরিদ আহমেদ। তারা সবাই ১২ থেকে ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানে কর্মরত।

সাত বাংলাদেশিই মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আফগান ওয়্যারলেসে কর্মরত। আফগান ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন কোম্পানি আফগান ওয়্যারলেস বা এডব্লিউসিসি নামে পরিচিত। এটি আফগানিস্তানের প্রথম মুঠোফোন ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া, আরেকটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোহাম্মদ সোহরাব নামে আরও এক বাংলাদেশি প্রকৌশলীও কাবুলে আটকে আছেন। গতকাল রাতে তার সঙ্গে কথা বলে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেছে দ্য ডেইলি স্টার।

আফগান ওয়্যারলেসের প্রকৌশল বিষয়ক দুটি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি গতরাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের ফ্লাইট ছিল। কিন্তু সেদিন সকাল থেকেই বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলায় ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমরা আসতে পারিনি।'

গতকাল প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলার চিত্র দেখা গেছে। বিমানবন্দরের টারমাকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি উড়োজাহাজে উঠতে শত শত আফগানের জটলা দেখা যায়। কে আগে উঠবেন, তা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি।

কামরুজ্জামান বলেন, 'প্রথমে শুনি বিমানবন্দরে আগামী ৭২ ঘণ্টা ফ্লাইট চলবে না। এরপর এমিরেটস থেকে জানতে পারি এই আগস্টে আর ফ্লাইট চলবে না। এরপর থেকেই মানসিক যন্ত্রণায় আছি। কবে পরিবারের কাছে ফিরব জানি না।'

গাজীপুরের রাজিব বিন ইসলাম আফগান ওয়্যারলেসের কন্ট্রাক্ট সেন্টার ও পাবলিক ব্রাঞ্চ এক্সচেঞ্জের প্রধান। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কয়েকদিন ধরেই শুনছিলাম আফগানিস্তানে পটপরিবর্তন হবে। তবে মার্কিনিরা যেহেতু ৩১ আগস্ট পর্যন্ত থাকবে কাজেই অন্তত মাসখানেক লাগবে এই পরিবর্তন হতে এমনটাই শুনছিলাম। কিন্তু, মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগলো। বিশেষ করে আগের আফগান সরকারের নিরাপত্তা কর্মীরা কোথাও নেই। ফলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফ্লাইট যোগাযোগ বন্ধ। আমরা উজবেকিস্তানে আমাদের দূতাবাসকে বিস্তারিত জানিয়েছি। এর আগে তারা আমাদের বিষয়ে কিছু জানতো না।'

এই বাংলাদেশিরা জানান, কাবুলে হাজারি নাজারি এলাকায় আফগান ওয়্যারলেসের বিদেশি কর্মকর্তাদের থাকার কম্পাউন্ডে তারা আছেন। সেখানে আরও ১২ ফিলিপিনোর সঙ্গে পাকিস্তান, উগান্ডা ও নাইজেরিয়ার নাগরিকসহ মোট ২২ জন আছেন।

সিনিয়র ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা কোম্পানির একটা কম্পাউন্ডে আছি। এখানে আরও কয়েকজন বিদেশি আছেন। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তায় আছে আমাদের পরিবার।'

আফগান ওয়্যারলেসের সহকারী ব্যবস্থাপক ফেনীর মাসুদ করিম বলেন, 'হঠাৎ করে ফ্লাইট বাতিল হবে তা ভাবতেই পারিনি। ফ্লাইট কবে স্বাভাবিক হবে কেউ বলতে পারছেন না। যদি স্বাভাবিক হয় বিশেষ বিমানে করে হলেও যেন আমাদের সবাইকে দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।'

সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, 'আমরা আসলে জানি না কী হতে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে আমার পরিবার ও স্বজনরা খুব দুশ্চিন্তায় আছে।'

এ ছাড়াও, আরেক বাংলাদেশি প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহরাবও আটকা পড়েছেন কাবুলে। তিনি গ্র্যান্ড টেকনোলজি রিসোর্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গতরাতে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমি ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম। ছুটি শেষে মাত্র এক সপ্তাহ আগে কাবুলে এলাম। পরিস্থিতি যে এমন হবে আমরা কেউ ধারণাও করতে পারিনি। এখন এই পরিস্থিতিতে পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন আছে।'

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের ছয় কর্মকর্তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে, গত শুক্রবার তিন জনকে ফেরানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'আফগানিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে কোনো বাংলাদেশি অসুবিধায় থাকলে দূতাবাসে যোগাযোগ করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।'

উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আফগানিস্তানের দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোমবার সন্ধ্যায় সাত বাংলাদেশি প্রকৌশলীর দেশে ফেরার কথা থাকলেও তারা ফিরতে পারেননি। আমরা তাদের তথ্য পেয়েছি। সব মিলিয়ে ১৬ বাংলাদেশির আফগানিস্তানে থাকার তথ্য পেয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে।'

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, 'বাংলাদেশের কোনো নাগরিক দেশটির অন্য কোথাও আছেন কিনা, তা জানাতে আফগানিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। আফগানিস্তানে কোনো বাংলাদেশি যদি থেকে থাকেন, তাদের সহায়তার জন্য দুটি হটলাইন (+৯৯৮৯৭৪৪০২২০১ ও +৯৯৮৯০৩২৭৫১৫২) খোলা হয়েছে।'

শরিফুল হাসান: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

IMF agrees to lend $1.15 billion to Bangladesh in third tranche

The International Monetary Fund (IMF) has agreed to provide $1.15 billion to Bangladesh in the third instalment under its multi-billion-dollar loan programme.

2h ago