করোনা সংক্রমণ কমানোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, সঙ্গে শিক্ষাকেও

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ দিন হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক ও শিক্ষকদের ওপর মানসিক ও আর্থিক চাপ তৈরি করেছে। যদিও সরকার অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, কিন্তু স্কুল ও কলেজের জন্য এখনও সেরকম কোনো পরিকল্পনার কথা জানানো হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে আগে বলা হয়েছিল, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশে নেমে আসলে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। তবে এ মুহূর্তে পরিস্থিতি বিবেচনায় এই লক্ষ্যকে অনেক দূরবর্তী বিষয় মনে হচ্ছে, কারণ দেশব্যাপী সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। তাহলে আর কতদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে? এবং এর পরিণামই বা কী হবে?

করোনা মহামারি বাংলাদেশের মতো সারা বিশ্বজুড়েই শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তারপরেও আমরা যে দেশ থেকে প্রথম ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই চীনের দিকে তাকালে দেখতে পাই শিক্ষা কার্যক্রম সেখানে থমকে থাকেনি। বিস্ময়কর হলেও, পুরো লকডাউনের সময়টিতে চীন প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের দেশের শিশুদের পড়ালেখা অব্যাহত রেখেছে। তবে এটি অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। একই ব্যবধান বাংলাদেশে এক এলাকার সঙ্গে অন্য এলাকার মধ্যেও দৃশ্যমান। ৫০০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও এই সমস্যার কোন সমাধান বের করতে না পারা খুবই হতাশাজনক। তারচেয়েও বেশি হতাশাজনক হলো সমাধান বের করার প্রচেষ্টা কিংবা তার জন্য প্রয়োজনীয় দূরদৃষ্টির অভাব।

এই লম্বা সময়ে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত লোকজনও ক্ষতির শিকার হয়েছেন। মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক অভিভাবক বন্ধ থাকা স্কুলের বেতন দিতে পারেননি। ফলাফল হিসেবে শিক্ষকদের বেতন দিতে না পেরে হাজারো স্কুল স্থায়ীভাবে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। তিন হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে কাজ হারিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক। যেসব স্কুল সরকারের ওপর নির্ভরশীল নয়, তারাও একই সমস্যায় ভুগেছে। অনেকে শিক্ষকতা পেশা থেকেই সরে গেছেন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাবের নিরূপণ করাও প্রায় অসম্ভব।

জুলাইয়ে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো জানায়, এভাবে স্কুল বন্ধ থাকলে একটি 'প্রজন্মগত বিপর্যয়' হতে পারে এবং আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। এখনই সময় শিশুদের শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার, কারণ তাদের ওপরই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে সব পর্যায়ে, সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনা শুরু করা। যদি এর জন্য আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকারকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তিগত বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সমন্বিত শিক্ষা অবকাঠামোর মধ্যে সবাইকে এনে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও, যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত কম, সেখানে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আংশিকভাবে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার বিকল্পটিকেও একেবারে অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh struggles in home textile exports

Bangladesh losing out to Pakistan in home textile exports

Bangladesh has been struggling to recover lost work orders in the home textile segment, a significant volume of which shifted to Pakistan nearly two years ago.

15h ago