রাজাকার তালিকায় এমপি শিমুলের বাবার নাম, রাবি শিক্ষককে হুমকির অভিযোগ
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি বইয়ে রাজাকার তালিকায় নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাবার নাম থাকায় বইটির লেখক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সরকার সুজিতকুমারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
হুমকির পর নিজ ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গত ২৯ জুলাই বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রাবি শিক্ষক সুজিত কুমার।
তবে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ নাকচ করেছেন সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে আজ রোববার জানান, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার বাবার নাম বইতে রাখা হয়েছে।
অধ্যাপক সরকার সুজিত কুমার ২০০৯ সালে 'নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ' নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। যার প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১০ ও ২০২১ সালে। বইয়ের ৬০০ নম্বর পাতায় ২১ নম্বর রাজাকার তালিকায় নাটোর-২ এর সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাবা 'হাসান আলী সরদার' এর নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
বইয়ে রাজাকার তালিকায় হাসান আলী সরদারের নাম রাখায় লেখকের নামে বিভিন্ন মাধ্যমে বাজে মন্তব্যসহ, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বইটির লেখক অধ্যাপক সুজিত কুমার।
জিডিতে অধ্যাপক সুজিত কুমার উল্লেখ করেছেন, সম্প্রতি নাটোর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ভিন্নমত সৃষ্টি হওয়ায়, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের পিতা 'হাসান আলী সরদার' এর স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড আলোচনায় আসে। মূলত আমার গ্রন্থে উল্লেখিত রাজাকার তালিকার সূত্র ধরেই এই আলোচনা উঠে আসে। একারণে, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নামে কুৎসা রটনা করার পাশাপাশি নানা হুমকি দিয়ে আসছেন। এছাড়াও, তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে অপরিচিত অনেকেই তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক সুজিত কুমার বলেন, তিনি মাঠ পর্যায়ে তিন বছর ধরে নাটোর এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। তাছাড়া একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে তথ্য যাচাই-বাছাই করে তবেই এই তালিকায় নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে সংসদ সদস্য কিংবা তার পিতাকে আমি চিনি না। তবু গত ৭-৮ দিন যাবত আমাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নাদিম।
অভিযোগ নিয়ে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল আজ রোববার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের সঙ্গে আমার কোনোদিন কথা হয়নি, তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না। যেহেতু উনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার বাবার নাম রাজাকার তালিকায় দিয়েছেন, সেজন্য আমি মামলা করব জেনে তিনি আগেই মামলা থেকে বাঁচার জন্য জিডি করেছেন বলে আমার ধারণা। আমার মনে হচ্ছে কারও প্ররোচনায় তিনি এই জিডি করেছেন। আমি পুলিশ সুপার ও ডিআইজির সঙ্গে কথা বলেছি কারা এর সঙ্গে জড়িত সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।'
Comments