অলিম্পিক লরেল ট্রফির জন্ম বৃত্তান্ত

Muhammad Yunus
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

২০২০ টোকিও অলিম্পিকে 'অলিম্পিক লরেল' সম্মাননা দেওয়া হয়েছে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উন্নয়নের জন্য স্পোর্টসে তার ব্যাপক কাজের জন্য। গত ২৩ জুলাই টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননার যে লরেল ট্রফিটি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যেই রয়ে গেছে অলিম্পিকের হাজার বছরের ইতিহাসের অমূল্য কিছু নিদর্শন।
ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের দিক দিয়ে লরেল ট্রফিটির সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হচ্ছে এর পাথরের তৈরি ভিত্তিটি। এটি গ্রিসের প্রাচীন অলিম্পিয়া নামক জায়গায় ১৮৭৮ ও ১৮৮০ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত দুটি ছাই-নীল রঙের মার্বেল পাথরের নিদর্শনের রেপ্লিকা। এটি কেন মূল্যবান তা বুঝতে হলে আমাদের অনেক প্রাচীনকালে চলে যেতে হবে। এই প্রাচীন অলিম্পিয়ার প্যানহেলেনিক ধর্মীয় মন্দিরকে ঘিরে খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী থেকে চতুর্থ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি চার বছর পর পর গ্রিক অলিম্পিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  হতো। পরে ১৮৯৪ সাল  থেকে বিশ্ব অলিম্পিক হিসেবে এটি আবার চালু হয়েছে। লরেলের ভিত্তির ওই পাথরের গায়ে প্রাচীন গ্রিক  লিপিতে কিছু কথা লেখা আছে। সেখান থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে পাথরটি আগে একটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যের ভিত্তি প্রস্তরের অংশ ছিল, যা গ্রিক দেবতা জিউসের মন্দিরে উৎসর্গিত ছিল। লিপিটি তখনকার কিছু গায়ক ও অভিনেতার কথা উল্লেখ করছে যারা মেসিনা নামক জায়গার এক বড় মানুষের আনুকূল্য পেয়েছে। লিপিটি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এটি খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে উৎকীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ আজকের লরেলের ভিত্তির এই পাথরটি প্রাচীন অলিম্পিয়ায় ২২০০ বছর আগের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার স্মৃতি সরাসরি বহন করে এনেছে। গ্রিসের প্রেসিডেন্ট ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতেই সেদেশের এমন মূল্যবান প্রত্নসম্পদের রেপ্লিকা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি লরেলের জন্য ব্যবহার করতে পেরেছে। এভাবে এই লরেল সম্মাননাকে প্রাচীন অলিম্পিকের আদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত করা গেছে।

অলিম্পিক লরেল।

লরেল ট্রফির উপরের অংশে আছে লরেল পাতার মুকুট এবং অলিম্পিকের প্রতীক রিং- যা সোনার তৈরি। এই লরেল পাতার মুকুটের সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের ইতিহাস। আসলে এই মুকুটের সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিক উপকথা থেকে। লরেল উদ্ভিদটির গ্রিক নাম ড্যাফনে, যিনি একজন গ্রিক দেবীও। গ্রিসের সব চেয়ে পবিত্র স্থান মাউন্ট অলিম্পাস পর্বতে ছিল গ্রিকদের সেরা ১২ জন দেবদেবীর অধিষ্ঠান। সেখানকার দেবতা অ্যাপোলোকে একদিন বিমর্ষ দেখে দেবী ড্যাফনে তাকে নিজের পাতা দিয়ে, অর্থাৎ লরেল পাতা দিয়ে, মুকুট গড়ে মাথায় পরিয়ে দিলেন, একটু খুশি করার চেষ্টায়। তারই স্মরণে পরবর্তীতে গ্রিসে নানা প্রতিযোগিতায়, যেমন কবিতা বা জ্ঞানের প্রতিযোগিতায়, বিজয়ীকে লরেল পাতার মুকুট পরিয়ে দেয়া হতো, অলিম্পিকেও। রোমান আমলে জুলিয়াস সিজার প্রমুখ যুদ্ধ বিজয়ী বীরদের লরেল পাতার মুকুট দিয়ে বরণ করা হতো। সেই ঐতিহ্যে আজও লরেল পাতার (বন্য জলপাই পাতার) মুকুট দিয়ে সাফল্যের স্বীকৃতি জানানো হয়।
অলিম্পিক লরেল ট্রফিটি অত্যন্ত সুন্দর সৌকর্যময় ডিজাইনটি করেছেন সুইজারল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত স্বর্ণালংকার ডিজাইনার সোপার্ড। লরেল মুকুট এবং অলিম্পিক প্রতীক রিংগুলোর জন্য যে সোনা ব্যবহার করা হয়েছে তারও একটি বৈশিষ্ট আছে। দ্য অ্যালায়েন্স ফর রেসপনসিবল মাইনিং নামে একটি সংগঠন পেরু ও কলাম্বিয়ায় ছোট আকারের সোনার খনিতে শুধুমাত্র শৈল্পিক কাজে ব্যবহারের জন্য সোনা উৎপাদন করে এবং খনিশ্রমিক ও স্থানীয় মানুষের সামাজিক কল্যাণের জন্য কাজ করে। লরেল ট্রফিতে এই সোনার ব্যবহার এই মানবিক খনি- নীতির জয়জয়কারও বটে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

7h ago