রাশিয়া অলিম্পিকে নেই, আবার আছে!
অনেকেই হয়তো টোকিও অলিম্পিকে রাশিয়ার অনুপস্থিতি দেখে অবাক হয়েছেন। একইসঙ্গে পদক তালিকার উপরের দিকে 'আরওসি' (ROC) নামক একটি 'দেশ'-এর অস্তিত্বের কথা জানতে পেরে চমকেও উঠেছেন। আসলে, 'আরওসি' কোনো 'দেশ' নয়, তা বরং 'রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটি'র সংক্ষিপ্ত রূপ।
এবারের অলিম্পিকে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও দেশটির ৩৩৫ জন ক্রীড়াবিদ 'আরওসি'র ব্যানারে ৩৩টি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার এই আসরে দলগতভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর ইতোমধ্যে, পঞ্চম দিন শেষে, সাতটি সোনা, নয়টি রুপা ও ছয়টি ব্রোঞ্জসহ মোট ২২টি পদক পেয়ে পদক তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে তারা।
রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত না বাজলেও এবারকার অলিম্পিকে 'আরওসি'র পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানাতে দেশটির বিখ্যাত সুরকার পিওতর চাইকভস্কির এক নম্বর পিয়ানো কনচের্তো (বি-ফ্ল্যাট মাইনর) বাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে যেকোনো রুশ জাতীয় প্রতীক বা লোগো ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা। এমনকি 'আরওসি'র পূর্ণরূপ বলাও বারণ।
এত কিছুর পরেও, 'আরওসি'র পতাকায় অলিম্পিকের লোগোর উপরেই অবস্থান করছে রাশিয়ার পতাকার আদলে সাদা-নীল-লাল রঙের ডোরাকাটা ঢেউ খেলানো প্রতীক। তাতে মনে হতে পারে, খোদ রাশিয়ার পতাকাটাই উড়ছে। সেই সঙ্গে রুশ প্রতিযোগীরা তাদের সেই চিরচেনা তেরঙা জামা পরিধান করেই খেলছে।
কেন রাশিয়া নিষিদ্ধ হয়েছে?
২০১৯ সালে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ডোপিংয়ের (নিষিদ্ধ বলবর্ধক পদার্থ সেবন) অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সকল প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ কিংবা আয়োজন করা থেকে রাশিয়াকে চার বছরের জন্য বহিষ্কার করে ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (ডব্লিউএডিএ ওরফে ওয়াডা)।
ওয়াডার সভাপতি ভিতল্দ ব্যাঙ্কার ভাষ্যমতে, 'এটি একটি স্পষ্ট বার্তা প্রেরণ করে যে, বিশ্বব্যাপী অ্যান্টি-ডোপিং সিস্টেমকে বিকৃত করার জন্য কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতারণা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা কিছুতেই সহ্য করা হবে না।'
ওয়াডার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সম্প্রতি শেষ হওয়া ২০২০ ইউরো খেলতে সক্ষম হয় রাশিয়া। এমনকি সেইন্ট পিটার্সবার্গ ছিল আসরটির অন্যতম স্বাগতিক শহর। কিন্তু সেটা কেবল এই কারণে যে, ওয়াডা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপকে কোনো প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করে না।
আগামী ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপে অবশ্য রাশিয়ার খেলার সুযোগ নেই। ওয়াডার সম্মতি পর্যালোচনা কমিটির সাবেক সভাপতি জোনাথন টেইলর বলেছিলেন, 'যদি সেখানে (বিশ্বকাপে) কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়, তবে তারা রাশিয়ার প্রতিনিধি না হয়ে নিরপেক্ষ ভিত্তিতে অংশ নিতে আবেদন করতে পারবে।'
অলিম্পিক গেমসে অতীতেও রাশিয়ানরা নিরপেক্ষ পতাকার নিচে খেলেছে। ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিকের দুমাস আগে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় রুশ প্রতিযোগীদের অলিম্পিকের পতাকার নীচে খেলতে বাধ্য করা হয়। সেবার যখনই তারা কোনো পদক জিতত, তখনই অলিম্পিকের সঙ্গীত বাজানো হতো।
ইতিহাসকে ঘাঁটলে দেখা যায়, রাশিয়ার জন্য এ ধরনের ডোপিং কেলেঙ্কারি তেমন নতুন কিছু নয়। সব মিলিয়ে ডোপিংয়ের অপরাধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ৪৩টি অলিম্পিক পদক কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
সেই পদকগুলোর তালিকাটি হলো: ২০০২ শীতকালীন অলিম্পিক (৫টি পদক), ২০০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক (৩টি পদক), ২০০৬ শীতকালীন অলিম্পিক (১টি পদক), ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক (১৪টি পদক), ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক (১৫টি পদক), ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক (৪টি পদক) ও ২০১৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক (১টি পদক)।
Comments