কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা কি আমরা বাদ দিয়েছি?

ভিড়, ভাইরাস আর মৃত্যুর ভেতর দিয়ে চলছে ‘শিথিল’ লকডাউন
গত বৃহস্পতিবার কঠোর লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জ গরুর হাটের দৃশ্য। ছবি: স্টার

‘কঠোর’ লকডাউন ‘শিথিল' এর অষ্টম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে নানা দিক থেকে খবর আসছে, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নির্দেশনাগুলো ঠিকঠাক কার্যকর করা হচ্ছে না। আবার মানুষও তা মানছেও না। বিপরীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের প্রথম ১৬ দিনে প্রতি মিনিটে অন্তত সাত জন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ১৬ দিনে মারা গেছেন ২৯৬২ জন। গত বছরের মার্চে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এক মাসে মৃত্যুর সংখ্যায় যা সর্বোচ্চ। 
কিন্তু মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজট, রাস্তায় রাস্তায় যানবাহনের সারি এবং হাট ও শপিং মলগুলোতে ভিড় করা মানুষ দেখে মনে হচ্ছে, এই পরিসংখ্যানের কোনো মূল্য নেই। তার চেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই সবকিছু ঘটছে। রাজধানীর পশুর হাটগুলো ১৭ জুলাইয়ের আগে খোলার কথা ছিল না। তারপরেও পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বেশিরভাগ হাট গত শুক্রবার থেকেই চালু হয়ে গেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো সুবিধা (যেমন হাত ধোয়ার জায়গা অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের যোগান) সেখানে নেই। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কোনো প্রতিনিধিও উপস্থিত নেই হাটগুলোতে। পাশাপাশি লকডাউন শিথিলের পর এখন প্রতিবেদকরা ঈদের বাজারে বরাবরের মতো স্বাভাবিক ভিড়ই দেখতে পাচ্ছেন।  যেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কিংবা সঠিকভাবে মাস্ক পরার কোনো বালাই নেই। এ অবস্থায় আমরা ভাবতে বাধ্য হচ্ছি-  লকডাউন কি শিথিল করা হয়েছে? না পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে?
যদিও আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মহামারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টির অভাব। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, সরকারের কৌশল হচ্ছে সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান করা। অর্থাৎ প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারের বিষয়টিই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার বিষয়টি অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু একইসঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে নজর দেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর অংশ হিসেবে ভ্যাকসিনের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের বিকল্প খতিয়ে দেখা, অনেক বেশি পরিমাণে নমুনা পরীক্ষা করা এবং ভাইরাসের কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে হবে। সেই সঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সকল নাগরিকের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। আর অবশ্যই পরিচ্ছন্ন থাকাসহ মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলো  নিশ্চিত করতে হবে। এটাও কি সম্ভব যে, ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে জনমানুষের যে অসচেতনতা আর বাধ্য না করলে স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে তাদের যে অনীহা, তা কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না? এই দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একজন সদস্যের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি’। ওই সদস্য আরও জানান, তাদের করা সুপারিশগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটিই সরকার বাস্তবায়ন করেছে। এখন আমরা কেবল এই আশাটুকুই করতে পারি যে, সরকার মহামারি মোকাবিলায় খুব দ্রুত একটি সুচিন্তিত, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে তারা অর্থনীতিসহ অন্য যে কোনো বিষয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। যদিও আমরা এখন মহামারির সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, তারপরেও এমন অপরিকল্পিত উদ্যোগ বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করাতে পারে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

CA asks advisers to speed up construction of museum at Gono Bhaban

Museum should preserve memories of Hasina’s misrule, he says

1h ago