লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত আরও মৃত্যুর কারণ হতে পারে
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর থেকে যে সময়ে এসে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি, ঠিক সেই মুহূর্তেই সরকার কোন বিবেচনায় লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। এক সপ্তাহের জন্যে লকডাউন শিথিলের এই সরকারি সিদ্ধান্তটি গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে সংক্রমণ বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারি কর্মকর্তারা যদি প্রকৃত অর্থেই এটা বুঝে থাকেন, তাহলে মানুষের জীবন মঙ্গলের কথা না ভেবে সরকার কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১২ জুলাই দেশে একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২২০। কিছুদিন ধরেই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা দুই শর আশপাশে রয়েছে। এ সময়ে দৈনিক সংক্রমণও থাকছে ১০ হাজারের আশপাশে।
এক মাসের মধ্যেই হাসপাতালগুলোর ফাঁকা শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কীভাবে বেড়েছে ও আইসিইউ শয্যার চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে— গত ১৫ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সে চিত্র তুলে ধরেছে ডেইলি স্টার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা চিকিৎসার জন্যে বিশেষায়িত দেশের প্রধান হাসপাতালগুলোর এক হাজার ৪৭১টি আইসিইউ শয্যার ৮১ দশমিক ৬৫ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে আমাদের হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি করানো সুযোগ খুব কমই আছে। এখন বিধি-নিষেধ শিথিলের কারণে দৈনিক সংক্রমণ যদি আবার বাড়তে থাকে, তাহলে ইতোমধ্যে রোগীতে ভর্তি এই হাসপাতালগুলোর অবস্থা কী হবে? সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কি এসব শঙ্কার বিষয়টি বিবেচনায় রাখেনি?
লকডাউন শিথিলের কারণে গণপরিবহন চালু হলো, শপিংমলগুলো খুলে গেল। আর যেহেতু ঈদকে সামনে রেখেই এটা করা হয়েছে, সেহেতু এর ফলে প্রচুর লোকসমাগম হওয়ার বিষয়েও কোনো সন্দেহ নেই। এই সময়ে সরকার জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু, মহামারির শুরু থেকেই তো আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে সংগ্রাম করে আসছি। এই মুহূর্তে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করার কোনো বিকল্প নেই। সবাই স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
সব ধরনের গণপরিবহন ও শপিংমলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া, জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতাও বাড়ানো দরকার। সর্বোপরি আমাদের অভিমত হলো, লচমান পরিস্থিতিতে কঠোর লকডাউন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি একেবারেই উপযুক্ত হয়নি। যা আরও অনেক জীবনহানির কারণ হতে পারে এবং ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউন আরোপের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করতে পারে।
Comments