জমি অধিগ্রহণের সংবাদে ঘর-বাড়ি নির্মাণের হিড়িক

জমি অধিগ্রহণের সংবাদে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি: স্টার

ভূমি অধিগ্রহণ করবে সরকার। এরকম খবর পেয়ে সেই জমিতে ঘর-বাড়ি ও দোকান তৈরি শুরু করেছেন বরিশালের সদর উপজেলার চরআইচা গ্রামের বহু সংখ্যক জমির মালিক। তারা জানান, অধিগ্রহণ করা জমিতে তিনগুণ বেশি মূল্য পাওয়া যায়। তবে, সেই জমিতে ঘর-বাড়ি থাকলে সেগুলোর জন্যেও অতিরিক্ত মূল্য পাওয়া যায়।

বরিশালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার প্রকল্পের পাশের চরআইচা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজ চলছে অন্তত অর্ধশতাধিক ইটের ঘর-বাড়ির। কেউ দোতলা বাড়ি, কেউ একতলা বা দোকানপাট বানাচ্ছেন। এসব বাড়ি ও দোকানপাটে নেই কোনো পানি বা বিদ্যুতের সংযোগ। এমনকি কোনো কোনো নির্মাণাধীন বাড়িতে টয়লেট সুবিধা পর্যন্তও রাখা হয়নি।

এরকম একটি নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা মালিকের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক দুটি বাড়ির নির্মাণকাজ করছেন।

তবে, ডেইলি স্টারের প্রতিনিধি ওই এলাকা ঘুরে কয়েক শ শ্রমিককে কাজ করতে দেখেছেন।

স্থানীয়রা জানান, এর আগে নভো থিয়েটার প্রকল্পের জন্যে তাদের কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি জমি থেকে আরেকটু বেশি পরিমাণ টাকা পাওয়ার আশায় তারা এসব ঘরবাড়ি তৈরি করছেন।

তারা আরও জানান, বরিশাল সিটি করপোরশনের কয়েকজন কর্মচারী তাদের বলেছেন, জায়গাটি অধিগ্রহণ করা হতে পারে। অধিগ্রহণ করা হলে জমির সঙ্গে স্থাপনার জন্যেও আলাদা মূল্য পাবেন।

মো. হেলাল মিয়া নামে একজন জমির মালিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নভো থিয়েটার নির্মাণ প্রকল্পে প্রতি ডেসিমেল জমির জন্য পৌনে দুই লাখ টাকা করে পেয়েছি। বর্তমানে এই জমির দাম আরও বেড়ে গেছে। তাই বাকি জমিতে ঘর-বাড়ি করছি।’

তিনি জানান, জমি অধিগ্রহণ করা হলে ঘর-বাড়ির জন্যে অতিরিক্ত কিছু টাকা পয়সা পাওয়া যাবে।

জমি অধিগ্রহণের সংবাদে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি: স্টার

মোতালেব নামে এক জমির মালিক বলেন, ‘আগেরবার জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সেই ক্ষতি মেটাতে এবার ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে রাখছি।’

এদিকে জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখা থেকে জানা গেছে, নভোথিয়েটার প্রকল্পের জন্য যে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, ইতোমধ্যে তার সব টাকা পরিশোধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া, কীর্তনখোলা নদীর কাছে আরও প্রায় পাঁচ একর জমি রয়েছে। সেখানে একটি পার্ক তৈরির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউর রাব্বী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ২০ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার প্রকল্পের পিডি বরিশালে এসে প্রকল্পটি ঘুরে দেখেন। তখন প্রকল্প সংলগ্ন এই জায়গায় একটি পার্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন জেলা প্রশাসক। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয়েও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই খবর জানতে পেরে স্থানীয়রা তাদের জমিতে নির্মাণকাজ শুরু করেছে। তবে, আমরা গত ২৯ জুন প্রকল্প এলাকা ভিডিও করে রেখেছি। এর ফলে অধিগ্রহণ করা হলেও তারা বাড়তি কোনো অর্থ পাবেন না।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের এই শাখার কিছু কর্মচারী তাদেরকে নির্মাণকাজের উৎসাহ দিয়েছেন।

বিষয়টি শুনেছেন উল্লেখ করে আতাউর রাব্বী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরব।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত হোসেন এখানে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক করে দিলেও শুনছেন না স্থানীয়রা। আমরা এখানে নোটিশ লাগালেও তাতে কান দেননি কেউ।’

Comments