রিমান্ডে যৌন নিপীড়ন: পুলিশ হেফাজতে সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে 

বাংলাদেশে নারী ধর্ষণ
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

হত্যা মামলায় অভিযুক্ত এক নারীকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করার যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। এ ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। কিন্তু, প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, এ ঘটনাটি ঘটলো কেন?
যৌন নিপীড়ন যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সে ব্যাপারে কোনো অস্পষ্টতা নেই। তবে, আদালতের নির্দেশনার বিপরীতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ বা রিমান্ডের সময় নির্যাতনের চর্চা যেন একটি স্বাভাবিক ও অলিখিতভাবে স্বীকৃত বিষয় হয়ে গেছে।
ফৌজদারী কার্যবিধির (সিআরপিসি) ১৬৭ ধারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রিমান্ডের সময় নির্যাতনের অনুমোদন দেয়। এ বিধানের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট ১৫ দফার একটি নির্দেশনা দেন। তৎকালীন সরকার একই বছরের ২ আগস্ট হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। দীর্ঘ ১৩ বছর পর, ২০১৬ সালের ২৪ মে, পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের বিষয়ে কিছু নির্দেশিকার মাধ্যমে হাইকোর্টের নির্দেশকে বহাল রেখে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু, উপরে বর্ণিত ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, পুলিশ প্রতিনিয়তই এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করছে। 
২০১৮ সালের ২০ জুলাই প্রকাশিত স্টার উইকেন্ডের একটি প্রতিবেদনে রিমান্ডে নির্যাতনের অনেক প্রমাণ তুলে ধরে বলা হয়েছিল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিতই এ চর্চা চালায়। প্রতিবেদনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি হিসাবের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছিল ২০১৭ সালে মোট ৫৩ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হেফাজতে মারা গেছেন। তদের মধ্যে ২০ জন আসামি এবং ৩৩ জন আটক ছিলেন।
২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে পুলিশ হেফাজতে ২৫ জনের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন আটক ছিলেন। এ ছাড়া, সম্প্রতি পুলিশ হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করে যে, হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের চর্চা দায়মুক্তভাবেই চলছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেনের মতে, নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারসহ সংবিধানের ৩৩ ও ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে গ্রেপ্তার ও আটক ব্যক্তিদের বিভিন্ন অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হোক বা না হোক, হেফাজতে থাকা যে কোনো ব্যক্তিরই নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে। পুলিশকে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা ও আইন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। 
বরিশালের পুলিশ সুপার (এসপি) বলেছেন, অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, এখনও কোনো দাপ্তরিক নির্দেশনা পাননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অবিলম্বে পুলিশ এ ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে বলে আশা করছি আমরা। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে দোষীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে অবশ্যই সাংবিধানিক নির্দেশনা ও আদালতের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে এবং হেফাজতে নির্যাতনের মতো বর্বর আচরণ পুরোপুরি পরিহার করতে হবে। 
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
 

Comments

The Daily Star  | English

Commission working to find out those involved in ‘Aynaghar’

Everything to be clear once commission submits report, says CA’s press wing

40m ago