রাবিতে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জিডি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভা ঠেকাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের অবস্থান। ছবি: স্টার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার পক্ষে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ সোমবার বিকালে নগরীর মতিহার থানায় এই জিডি করা হয় বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। জিডির একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

জিডিতে সংযুক্তপত্রে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের শেষ দিন চলতি বছরের ৬ মে দেওয়া নিয়োগে নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা আমার ওপর বার বার চাপ প্রয়োগ করছে।

পত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুন সকাল সাড়ে ৯টায় আমার বাসার গেটের সামনে ৫০-৬০ জন চাকরিপ্রাপ্ত হট্টগোল করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আমার স্ত্রী-কন্যারা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বাসার কম্পাউন্ডের মধ্যে তারা প্রায় দুই ঘণ্টা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রাখে। সেদিনের বিশৃঙ্খলাকারীদের অন্যতম হলো ফিরোজ মাহমুদ ও মতিউর রহমান মূর্তজা প্রমুখ।

এ ছাড়া, গত ২২ জুন সন্ধ্যা ৬টায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপকের বাসভবনের সামনে কয়েকজন এসে মহড়া প্রদর্শন করে উল্লেখ করে উপাচার্য জানান, তাদের অন্যতম ছিলেন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ইন্দ্রনীল মিশ্র ও শাহরিয়ার মাহবুব।

এই অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তাদের বাধার কারণে গত ১৯ জুন ফাইন্যান্স কমিটির সভা ও ২২ জুন সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ এই সভা দুটি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে থানায় এই অভিযোগের আবেদন করা হয়েছিল। আজ তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’

জিডির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এবং আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছিলাম। সে প্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই জিডি করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের পদে যোগদানের দাবিতে গত ১৯ জুন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক ভবন, সিনেট ভবন ও উপাচার্য ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থবছরের শেষ ফাইন্যান্স কমিটির সভা হওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর পরদিন ২০ জুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।

পরবর্তীতে ২১ জুন স্থানীয় আওয়ামী লীগ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা আন্দোলন স্থগিত করলেও, ২২ জুন আবারও আন্দোলনে নামেন। এতে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কর্মদিবস ৬ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে যান। মন্ত্রণালয় সেদিনই এই নিয়োগ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সে পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এই ১৩৭ জনের চাকরিতে যোগদান প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরে তদন্ত কমিটি গত ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটি এই ‘অবৈধ’ নিয়োগে বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে আবদুস সোবহানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, এ পরিপ্রেক্ষিতে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের জন্য গত এক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছেন।

আরও পড়ুন:

রাবিতে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্দোলন চলছে

রাবিতে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্দোলনে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত

আ. লীগ নেতাদের আশ্বাসে রাবির ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্দোলন স্থগিত

রাবি প্রশাসন ও উপাচার্য ভবনে তালা দিয়েছে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা

রাবির ‘অবৈধ’ নিয়োগের ‘বৈধতা’ চায় নিয়োগপ্রাপ্তরা

মানবিক কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগ দিয়েছি: সাবেক ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান

রাবিতে এডহক নিয়োগের যোগদান স্থগিত

রাবি উপাচার্যের নিয়োগ দুর্নীতি: ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি রাবিতে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ অবৈধ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রাবি উপাচার্যের জামাতার বিরুদ্ধে ‘গোপন নথি’ চুরির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহানগর ও রাবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

‘দুর্নীতিবিরোধী’ শিক্ষকদের বাধার মুখে রাবি সিন্ডিকেট সভা স্থগিত

রাবি উপাচার্য ভবনে আবারও তালা!

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

4h ago