আমলাদের প্রজাতন্ত্র
বছরের পর বছর ধরে দেশের প্রায় সব সংস্থার নেতৃত্বে বর্তমান ও সাবেক আমলাদেরই রেখেছে সরকার। যদিও এমন অনেক সংস্থা আছে, যেগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিদের হাতে থাকা উচিত।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিভিল সার্ভিসের বাইরের পেশাজীবীদের ওপর সরকারের এক ধরনের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ এটি। এমনকি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ওপরও আস্থা রাখছে না সরকার।
তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এ চর্চা যে আমলাতন্ত্রের বাইরে যোগ্য লোক না পাওয়ার কারণে ঘটছে, তা নয় নয়। এটি ঘটছে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব ও অযোগ্যদের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের কারণে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র এখন আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে আমরা ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের অধীনে ছিলাম। পাকিস্তানি আমলে সামরিক আমলাতন্ত্রের অধীনে ছিলাম। আমরা আন্দোলন করেছিলাম যেন জনগণের প্রতিনিধি সবকিছু পরিচালনা করেন। কিন্তু, সেই আমলাতন্ত্রটাই রয়ে গেল। এটা বরং আরও সুদৃঢ় হলো। সংসদ আছে সেটা কার্যকর না। নির্বাচন হয় কিন্তু সেটা স্বচ্ছ হয় না। মন্ত্রীরাও আমলাদের ওপর নির্ভরশীল। সিদ্ধান্ত নেন আমলারা।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের কাছে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, ‘একটা সময় আমরা সামরিক শাসনের অধীনে ছিলাম তখন সবকিছু পরিচালনা করত সামরিক আমলারা। রাজনীতি এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের অধীন হয়ে গেছে। রাজনৈতিক শাসন আমলাতান্ত্রিক শাসনে পরিণত হয়েছে। এখন আমলাদের আধিপত্য।’
এটার জন্য রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা আছে বলে মনে করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু অনেকবার বলেছেন জনগণের সেবার জন্য প্রশাসনকে রাজনীতিবিদদের অধীনে আনতে হবে, কিন্তু যখন আমরা তার জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি তখন চিত্রটা ঠিক বিপরীত।
মেনন বলেন, ‘করোনাকালে জনপ্রতিনিধিদের কাজও করানো হচ্ছে আমলাদের দিয়ে। কিন্তু, দিন শেষে সব সমালোচনা সহ্য করতে হয় রাজনীতিকদের।’
সম্প্রতি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে সরব হয়েছেন শিক্ষকেরা।
আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও তাদের আপত্তি, আমলার চেয়ে একজন শিক্ষক এই পদের জন্য বেশি উপযুক্ত। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কিন্তু, আমলাদের বিভিন্ন জায়গায় পদায়নের ঘটনা কি নতুন? চলুন ঘুরে আসি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক-বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এমনকি, যেসব পদে নিয়োগ পেতে উচ্চ প্রযুক্তিজ্ঞান লাগে কিংবা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার দরকার, সেগুলোতেও কী হচ্ছে, জানার চেষ্টা করি।
প্রথমে আসি সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি)। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করতে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল পিএসসি গঠিত হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. এ কিউ এম বজলুল করিম ছিলেন কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান। যিনি শিক্ষায় অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান।
পরবর্তীতে এক এক করে চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন মহিউদ্দিন আহমেদ, মইদুল ইসলাম, ফয়েজ উদ্দীন আহমেদ, এস এম আল হোসেনী, প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, প্রফেসর ড. মো. মুস্তফা চৌধুরী ও প্রফেসর ড. জেড এন তাহমিদা বেগম। তারা সবাই ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
পিএসসির দশম চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম ড. সা’দত হুসাইন দায়িত্ব নেন যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা ছিলেন। তারপর নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী। পরেরজন ইকরাম আহমেদ এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক দুজনই সাবেক আমলা।
সংবিধানের ১৩৭ থেকে ১৪১ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে সরকারি কর্ম কমিশন গঠনের বাধ্যবাধকতার কথা আছে। এখানে কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কোনো আমলা আসতে পারবে না এমন কিছু লেখা না থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষাবিদেরাই এই পদে আসীন হয়েছেন। এরপর থেকেই এই ধারার ব্যত্যয় শুরু হয়।
শুধু সরকারি কর্ম কমিশন না, এই ধারা শুরু হয়েছে অধিকাংশ সাংবিধানিক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের উদাহরণও প্রায় পিএসসির মতোই।
১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সব প্রধান নির্বাচন কমিশনারই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। এরপর দুজন—এম এ সাইদ এবং মোহাম্মদ আবু হেনা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আমলা। পরে বিচারপতি এম. এ. আজিজ সিইসি হলেও তারপরের তিন জনই আমলা।
ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) গঠিত হয়। পরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার অনুসারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ছিলেন এই কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান। কিন্তু, তার মেয়াদ শেষে চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন সাবেক আমলা রিয়াজুল হক। বর্তমান চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম ও সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ দুজনই সাবেক সচিব এবং কমিশনের সদস্য ড. নমিতা হালদারও সাবেক আমলা।
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করা, জনগণের তথ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান এবং তথ্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
সাবেক আমলা এম আজিজুর রহমান প্রথম প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর দুজন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এই পদে নিয়োগ পান। তবে বর্তমানে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ এবং অন্য দুই কমিশনার সুরাইয়া বেগম ও আবদুল মালেক— তিন জনই সাবেক আমলা।
বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৯৭২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পাঁচ জন গভর্নর ছিলেন অর্থনীতিবিদ। তারপর গভর্নরের দায়িত্ব আসেন ব্যাংকার লুৎফর রহমান সরকার এবং তারপর আবার আসেন অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
প্রথমবারের মতো এই পদে সাবেক আমলা হিসেবে নিয়োগ পান ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। পরে আসেন আরেকজন আমলা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর পর অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর আবার আসেন একজন সাবেক আমলা ফজলে কবির। পরে ফজলে কবিরকে পুনর্নিয়োগ দেওয়ার জন্য বয়সের বাধা কাটাতে গত বছর গভর্নরের বয়সের সীমা ৬৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করতে সংসদে বিল পাস করা হয়।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন ও সচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর।
কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান বিচারপতি সুলতান হোসেন খান এবং কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান প্রফেসর মনিরুজ্জামান ও সাবেক আমলা মনিরউদ্দিন আহমেদ।
এরপর আসেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী। তারপর থেকে সাবেক আমলারাই নিয়োগ পেয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান পদে। বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনারদের একজন ড. মো. মোজাম্মেল হক খান সাবেক আমলা। অন্য কমিশনার জহুরুল হক অবসরপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ।
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ইকবাল মাহমুদের সময় ২০১৮ সালে সরকার সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়ার বিধান যুক্ত করে ‘সরকারি চাকরি আইন’ পাশ করে। তখন টিআইবিসহ অন্যান্য সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা এর বিরোধিতা করেন।
দেশের সরকারি ও জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিমানের সিইও হিসেবে বিমান পরিচালনায় অভিজ্ঞদের এই পদে নিয়োগ দেওয়া হতো।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিমানকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করার পর বিমানের তৎকালীন এমডি এম এ মোমেনকে এমডি ও সিইও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর পর ২০১৩ সালে বিমান পরিচালনায় অভিজ্ঞ ব্রিটিশ নাগরিক কেভিন জন স্টিলকে নিয়োগ দেওয়ার আগে ক্যাপ্টেন ফারহাত হোসেন জামিল ও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বিমানের এমডি ও সিইও পদে দায়িত্ব পালন করেন। তারা দুজনেই বিমানে চাকরিরত ছিলেন।
কেভিন জন স্টিলের পর ২০১৫ সালে বিমান পরিচালনায় অভিজ্ঞ আরেক বিদেশি কাইল হেইউড বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে নিয়োগ পান। কিন্তু, এর পর আবার ২০১৯ সালে নিয়োগ দেওয়া হয় একজন আমলাকে।
২০১৯ সালে বিমান সিইও ও এমডি পদে প্রার্থীদের নিয়োগে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছিল যাতে বিমান পরিচালনায় ২০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল। তবে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও তৎকালীন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সময় ১২ জন বিদেশিসহ প্রায় ৭০ জন আবেদনকারী সিইও ও এমডি পদে আবেদন করেছিলেন।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেক আমলা আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে সিইও ও এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিমানকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করার পর পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ। তারপর আসেন সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান মুহাম্মদ এনামুল বারি। ২০২০ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান একজন সাবেক সচিব।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে মেট্রো রেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। এ ছাড়া, জনসাধারণকে স্বল্পব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত সড়ক নির্ভর বাস-ভিত্তিক গণপরিবহন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) গঠিত হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানই কারিগরি ও প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট।
এই দুই প্রতিষ্ঠানেরই প্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুই সাবেক আমলাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পদ দুটিতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের কেউ নিয়োগ পাওয়াই সমীচীন ছিল।
প্রবাসী কর্মীদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে এবং তাদের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়। এটি মূলত শ্রমিকদের টাকায় গঠিত একটি ফান্ড। কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে এই ফান্ড পরিচালনার জন্য ১৬ সদস্যের যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড গঠন করা হয়েছে তার ১২ জনই আমলা।
বাদ রইলো রাজনীতিবিদদের কাজ। তাদের দায়িত্বগুলোও হাতছাড়া হতে শুরু করেছে। যেসব কাজ আগে রাজনীতিবিদেরা করতেন তার মধ্যে একটি হলো ত্রাণ কার্যক্রম। কিন্তু, গত বছর করোনা মহামারিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও কর্মহীনদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করতে যে কমিটি করা হয়েছিল, তাতে ৬৪ জেলায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন ৬৪ জন সচিব। যদিও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে— সচিবেরা জেলার সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। যদিও এসব কাজ আগে রাজনীতিবিদরা করতেন।
আমলাতন্ত্রের শাসন
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যে পদ যার জন্য উপযুক্ত তাকেই দেওয়া উচিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ক্ষেত্রে অবক্ষয় ঘটছে। রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব রয়েছে। যোগ্য লোককে উপযুক্ত জায়গায় দেওয়া হচ্ছে না। যাকে যে পদে দেওয়া হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। সব ক্ষেত্রে আমলানির্ভর হওয়া উচিত নয়। আবার আমলাদের দিলেই যে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সে ধারণাও সঠিক নয়।
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বিচারপতি এম এ আজিজ খুব ভালো বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে একজন আমলা এ টি এম শামসুল হুদা আজিজের চেয়ে ভালো ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, আমলাতন্ত্র কয়েক দশক ধরে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্য যে বর্তমান রাজনৈতিক সরকার তদের নিজেদের লোক বাদ দিয়ে আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিক সমাজকেও এর দায় নিতে হবে কারণ তারা রাজনীতিবিদদের নোংরাভাবে উপস্থাপন করেছে। তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে রাজনীতিবিদদের অধীনে দুর্নীতি হয়।’
তার মতে, চরিত্র হননের ফলে এখন অনেক দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের বাইরে অন্য পেশার মানুষদের দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে যুব সমাজও এখন রাজনীতি ঘৃণা করে এবং রাজনীতিবিমুখ।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ডেইল স্টারকে বলেন, ‘একটা দেশ থেকে একটা জাতিতে পরিণত হতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।’
‘প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হলে যোগ্য লোককে যোগ্য পদে আনতে হবে। এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যার অভিজ্ঞতা আছে তাকে সেই জায়গায় বসাতে হবে সে আমলা হোক আর যেকোনো পেশার হোক।’
‘শুধু নির্দেশনা পালন করবে এটা মাথায় রেখে পদায়ন করা ঠিক নয়,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমলাদের নিয়ে আসা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সরকারের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে।’
Comments