সয়াবিনের পর এবার বাড়ছে সরিষার তেলের দাম
সরিষার বীজ আমদানিতে পাঁচ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এতে সরিষার তেলের দাম বেড়ে ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মিল মালিকরা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের পাশাপাশি, গত পাঁচ মাসে পাঁচ দফা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। ফলে দেশের নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এর সঙ্গে এখন আবার সরিষার তেলের দাম বাড়ার বিষয়টি যুক্ত হওয়ায় চাপে পড়তে যাচ্ছেন ভোক্তারা।
গত ৩ জুন সংসদে বাজেট বক্তৃতা দেওয়ার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সরিষার বীজ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া, সরিষা ও সূর্যমুখীর তেল তৈরির সময় উৎপাদিত খৈলের আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অভ্যন্তরীণ শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন মিল মালিকরা।
দেশের অন্যতম তেল প্রক্রিয়াজাতকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে সরিষার বীজ আমদানির ওপর এমন শুল্ক আরোপ করা হলে, সবকিছুই মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।’
বাংলাদেশ প্রতি বছর আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টন সরিষার বীজ আমদানি করে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় প্রায় এক লাখ বীজ। প্রতি আড়াই কেজি বীজ থেকে এক কিলোগ্রাম তেল পাওয়া যায়। বর্তমানে সরিষার তেলের বার্ষিক চাহিদা দেড় লাখ টন।
সাম্প্রতিক পরিবর্তন অনুযায়ী, সরিষার তেল আমদানিতে আমদানি শুল্ক থাকলেও, তেলের খৈল আমদানিতে কোনও আমদানি শুল্ক থাকছে না।
এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করে বিশ্বজিৎ সাহা প্রশ্ন তোলেন, ‘এটি কি বৈষম্যমূলক নয়?’
তিনি বলেন, ‘আড়াই কেজি বীজ থেকে এক কেজি সরিষার তেল সংগ্রহ করা যায়। তাই সরিষা আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হলে, প্রতি কেজি সরিষার তেলের শুল্ক প্রায় ১৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।’
বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমদানি শুল্কের কারণে সরিষার তেলের দাম বেড়ে যাবে।’
সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন রান্নার কাজে সরিষার তেল ব্যবহার করছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায়, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি লিটার ব্র্যান্ডেড বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে ১৫৩ টাকা করেছে।
গত ২ মে থেকে এ নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। এক বছর আগে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের যে দাম ছিল, নতুন দাম তার ৪২ শতাংশেরও বেশি।এ ছাড়া, এক বছর আগের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেড়ে বাজারে এখন প্রতি লিটার খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৯ টাকায়।
গত রোববার বাংলাদেশ অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দিয়ে সরিষার বীজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘এ শুল্কের ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সরিষার তেলের দাম বেড়ে যাবে। অন্যদিকে, তেলের খৈলের আমদানি শুল্ক হ্রাস করায় অভ্যন্তরীণ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে। সূর্যমুখী বা তুলার বীজ আমদানির ক্ষেত্রে কোনও শুল্ক আরোপ করা হয়নি। এটি যে কোনও শিল্পের জন্য বৈষম্যমূলক।’
তাই দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষায় এবং সরিষার তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানিকৃত সরিষার বীজের ওপর প্রস্তাবিত শুল্ক প্রত্যাহার জরুরি বলে মত দেন মিল মালিকরা।
আমদানিকৃত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের ওপর নির্ভরতা কমাতে মিল মালিকরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরিষা কেনেন এবং তেল উৎপাদনের জন্য সরিষার বীজ আমদানি করেন। এ ছাড়া, তেল তৈরির সময় পোল্ট্রি ও মাছের খাবারও তৈরি করেন তারা। দেশীয় শিল্প এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেয় বলে জানান মিল মালিকরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরিষার আমদানিতে প্রস্তাবিত শুল্কের কারণে সরিষার তেলের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
‘তবে, এর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। বরং এটি স্থানীয় সরিষা চাষিদের উৎসাহিত করবে এবং তারা কিছুটা উপকৃত হবে,’ মত দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের এ অধ্যাপক।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
Comments