ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের হটস্পট হতে পারে খুলনা বিভাগ

খুলনা বিভাগের ছয়টি জেলার সঙ্গে ভারতের ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্ত থাকায় এই বিভাগের বাসিন্দারা করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ভারত বর্তমানে দ্রুত সংক্রামক নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.৬১৭ এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

চিকিত্সা পদ্ধতি যথাযথভাবে না মেনেই অনেকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাচ্ছে এবং ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন এড়াতে অবৈধভাবে দেশে ফিরছে।

এ ছাড়াও, ভারতে আটকা পড়া বেশিরভাগ মানুষ যশোরের বেনাপোল ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হয়ে দেশে ফিরছেন।

বাংলাদেশে ভারতের দ্রুত সংক্রামক ভ্যারিয়েন্টের প্রবেশ ঠেকাতে সরকার ২৬ এপ্রিল প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, যশোরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই।

হাসপাতালটিতে বর্তমানে ২৬৫টি ছোট ও বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। প্রতিটি সিলিন্ডার এক ঘণ্টা পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আরিফ আহমেদ।

তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ চলছে। তবে, অক্সিজেন ট্যাঙ্ক ভারত থেকে এখনো আমদানি করা হয়নি।

হাসপাতালটি ন্যূনতম কিছু সুবিধাসহ তিনটি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) চালু করেছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) পাঁচ কিলোলিটার ক্ষমতা-সম্পন্ন কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল, যা সম্প্রতি লিন্ডে বাংলাদেশের সহায়তায় ১০ কিলোলিটারে উন্নীত হয়েছে, খুমেক হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ জানান।

তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২০০ রোগী ভর্তি থাকা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল।

সরকার আরও একটি পাঁচ কিলোলিটার ক্ষমতা-সম্পন্ন কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে। এটি স্থাপন হলে বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ হবে, ডা. বিধান জানান।

সম্প্রতি খুমেক হাসপাতাল পরিদর্শন করে আমাদের খুলনা সংবাদদাতা দেখতে পান, ব্যবস্থাপনার জন্য অক্সিজেন ট্যাঙ্কটি প্রায় ছয় মাস ধরে পড়ে আছে।

খুলনার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোশ কর্মকার জানান, এই লক্ষ্যে ৯৭ লাখ টাকা অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই দ্বিতীয় অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা স্থাপন কাজ শুরু হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খুমেক হাসপাতালে একটি ২০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট ও ১৪টি উচ্চ-প্রবাহের ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে।

খুলনা বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশিদা সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, নতুন কোভিড-১৯ হুমকি মোকাবিলায় খুলনা বিভাগে যথেষ্ট চিকিত্সা সুবিধা রয়েছে।

তবে, সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের মতে, শুধু খুলনা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইলে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে।

বিভাগটিতে মোট ৪৯টি আইসিইউ শয্যা ও ৩০৪টি উচ্চ প্রবাহের ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে, ডা. রাশিদা বলেন।

তবে, আমাদের সংবাদদাতা ৪৬টি আইসিইউ শয্যা পরিচালিত অবস্থায় এবং ৮৮টি সক্রিয় ন্যাজাল ক্যানুলা দেখতে পেয়েছেন।

ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট ও নড়াইল— এই পাঁচটি জেলাতে আইসিইউ সুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনরা।

সীমান্ত বন্ধ হওয়ার পর ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে দেশে প্রবেশের সময় কয়েকজনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে, গতকাল পর্যন্ত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত মোট ৪০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত প্রায় সবাই রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের, তারা জানান।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, তাদের আট জনের সাম্প্রতিক ভারত সফর সম্পর্কিত কোনো রেকর্ড নেই, যা স্থানীয় সংক্রমণেরই ধারণা দেয়।

মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রাণঘাতী ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ও মৃত্যুর হার কমাতে আমাদের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

‘সংক্রমণ হার ১৫ শতাংশের ওপরে উঠলে সংশ্লিষ্ট জেলায় অবিলম্বে লকডাউন দেওয়া উচিত’, তিনি বলেন।

এ ছাড়াও, তিনি বলেন, ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে যেসব জেলা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেসব জেলায় সক্ষমতা ও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে হবে।

(আমাদের খুলনা, বাগেরহাট ও ঝিনাইদহ সংবাদদাতারা প্রতিবেদনটি তৈরিতে সাহায্য করেছেন)

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

11h ago