চতুর্থবারের আগুনে সব হারালেন স্বপ্না

মহাখালীর সাততলা বাউন্ডারি বস্তিতে আগুনে সব হারিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দা নাজমা বেগম স্বপ্না (৪৮)। ৭ জুন ২০২১। ছবি: শাহীন মোল্লা/ স্টার

মহাখালীর সাততলা বাউন্ডারি বস্তির বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলেন এক নারী। মাঝে-মধ্যে বস্তির ভেতরে তার পোড়া ঘরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু, যেতে পারছিলেন না। তার বিলাপ ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল চারপাশ।

সেই নারীর নাম নাজমা বেগম স্বপ্না (৪৮)। আজ সোমবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, তিনি প্রায় ৪২ বছর ধরে এই বস্তিতে থাকছেন।

নোয়াখালীতে বাবা-মার সংসারে দারিদ্রের কারণে স্বপ্না ছয় বছর বয়সে তার এক ফুফুর সঙ্গে মহাখালীর এই বস্তিতে এসেছিলেন। সেই সময় থেকেই তিনি থাকছেন এখানে।

স্বপ্নার কাছ থেকে আরও জানা যায়, তার বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। স্বামী আবুল কালাম দিনমজুর। এখানেই তাদের প্রায় ২৪ বছরের সংসার। রয়েছে এক ছেলে (২১) ও এক মেয়ে (৭)।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্না বাসা-বাড়িতে কাজ করতেন। এখন একটি বাসায় কাজ করেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘুমাইতে গেছি। আগুন লাগছে ঠিক আমার পেছনের ঘরে। “আগুন”, “আগুন” চিৎকার শুনে ঘুম থেকে জেগে উঠি। ঘরের মালপত্র বের করার সাহস পাই নাই। এরইমধ্যে শরীরে আগুনের আঁচ লাগতে শুরু করে।’

বস্তির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ঘরের কোনো মূল্যবান জিনিসই তিনি সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেননি বলেও জানালেন।

বললেন, ‘ঘরে কানের দুল আর গলার মালা মিলিয়ে এক ভরি সোনা ছিল। আমার দীর্ঘদিনের আয়-রোজগার দিয়ে এগুলো তৈরি করেছিলাম।’

‘গতকাল ঘর ভাড়া হিসেবে চার হাজার টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু, রাতে কাজ শেষে ঘরে এসে মালিককে খুঁজেছিলাম ভাড়া দেওয়ার জন্যে। তাকে না পেয়ে ভেবেছিলাম আজ সকালে ভাড়া দেব। সেই টাকা পুড়ে গেছে।’

‘এই বস্তিতে গত ২৪ বছরে আমি তিনবার আগুনের মুখে পড়েছিলাম। আগে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে ঘরের মালপত্র বের করতে পেরেছিলাম। এবার আগুনের কাছে হেরে গেলাম।’

‘গত ২৪ বছরের সংসারে যা ছিল সবকিছুই আগুনে পুড়ে গেছে। এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।

এছাড়াও, ঘরে ৫০ হাজার টাকার মতো আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিল বলেও স্বপ্না জানিয়েছেন।

‘এর আগে তিনবার আগুনের হাত থেকে বাঁচতে পেরেছিলাম। ঘরের জিনিসপত্র বের করতে পেরেছিলাম। কিন্তু, এবার ঘরের পেছনে আগুন লাগার কারণে নিজের ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারি নাই।’

এই আক্ষেপের কথাই বারবার বলছিলেন তিনি। প্রতিবেশীদের অনেকের কাছে তার সুনাম ছিল যে আগুন লাগলে স্বপ্না দ্রুত ঘর থেকে মালপত্র বের করতে পারেন। এ নিয়ে সবাই তাকে বাহবা দিত। কিন্তু, আজকের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। তিনি বারবার নিজেকে ‘আগুনের কাছে পরাজিত’ ভাবছেন।

কেউ কেউ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছিলেন, ‘জীবন বাঁচলে সম্পদ আবার গড়া যাবে।’

আরও পড়ুন:

মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে, কাজ করছে দমকল বাহিনীর ১৮ ইউনিট

Comments

The Daily Star  | English
36 Days of July revolution

You have crushed fascism, now strengthen democracy and press freedom

The Daily Star Editor Mahfuz Anam's appeal to the ‘new generation leaders’

13h ago