প্রবাসে

জার্মানিতে নাতালিয়া-হাবিবের 'দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি'

মাত্র পাঁচ মাসে পাওয়া ইউটিউব চ্যানেলের 'সিলভার প্লে বাটন' হাতে নাতালিয়া ও হাবিব দম্পতি সঙ্গে মেয়ে নাদিয়া । ছবি: লেখক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় মিক্স দম্পতি বাংলাদেশি হাবিব ও বেলারুসের নাতালিয়া। এই দম্পতির সাংসারিক খুনসুটি ও মজার মজার ভিডিও দেখছে প্রতিদিন  লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি।

জার্মানির বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের স্টেডিয়ামে স্টুডেন্ট জব করতে প্রথম পরিচয় বেলারুসের মেয়ে নাতালিয়া ও বাংলাদেশি হাবিবের, দেখা থেকে প্রণয় তারপর বিয়ে, ২০১৩ সালের অক্টোবরে। ৪ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের আছে পৌনে দুই বছরের মেয়ে নাদিয়া।

বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজলার সন্তান হাবিবুর রহমান পেশায় একজন প্রকৌশলী । ২০১২ সালে  জার্মানির মিউনিখে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখে মাস্টার্স  করার জন্য আসেন। বর্তমানে একটি জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সাল্টিং ফার্মে ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত আছেন।  আর বেলারুসের রাজধানী মিনস্কের কাছাকাছি শহর বাবরুস্কের মেয়ে নাতালিয়া রহমান পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট। বর্তমানে কর্মসূত্রে এই দম্পতি জার্মানির পূর্বাঞ্চলের সাক্সনি অঙ্গরাজ্যের কেমনিজ শহরে থাকেন।

গেল বছর অক্টোবরের শেষে জার্মানির দীর্ঘ লকডাউনের একঘেয়ামি কাটাতে, শখের বসেই খোলেন ইউটিউব চ্যানেল। চ্যানেলের নাম ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব – দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি’।

নাতালিয়ার ভাঙা ভাঙা বাংলা ও বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা, এই দম্পতির কিউট মেয়ে নাদিয়ার সরব উপস্থিতি, অল্পদিনে সাড়া পড়ে যায় তাদের ইউটিউব চ্যানেল। তারপর থেকেই নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করছেন ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে ফেসবুকেও । 

মাত্র ৫ মাসেই তাদের চ্যানেল পেয়ে যায় ইউটিউবের প্রথম মাইলফলক ১ লক্ষ সাবস্ক্রাইবারের 'সিল্ভার প্লে বাটন'। ইউটিউবে তাদের ভিডিও এখন পর্যন্ত দেখা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি বার। ফেসবুকে তাদের পেইজে এখন ১ লাখের ওপরে ফলোয়ার। দিন দিন বাড়ছে ভিউয়ার আর ফলোয়ারের সংখ্যা।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই দম্পতির খুনসুটি দেখে যেমন মানুষ অনেক মজা পাচ্ছে, সেই সাথে মুসলিম শ্বশুর পরিবারের প্রতি নাতালিয়ার সম্মান-ভালোবাসার গল্প ও শ্বশুরের মৃত্যুতে তার আবেগঘন অনুভূতির সঙ্গে অনেক দর্শকই চোখের জল ফেলেছেন।

তাদের চ্যানেলে বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে অনেক সোশ্যাল ম্যাসেজমূলক ভিডিও, যেমন নারীদের সম্মান ও অধিকার, সংসারের কাজে পুরুষদের সহায়তা এবং বাচ্চাদের সঠিক খাদ্য অভ্যাস ও তাদের দৈনন্দিন জীবনের পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরা হয়।

কী নেই তাদের ভিডিওগুলোতে? স্বামী -স্ত্রীর ভালোবাসা, ঝগড়া, মান অভিমান, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক ইস্যুসহ সব প্রসঙ্গ। পাশাপাশি বিনোদন, ঘুরে বেড়ানো, শপিং, ফ্যাশন আর হাট বাজারও প্রবাসী বাংলাদেশিদের আগ্রহ জাগিয়েছে। এমনটি জানিয়ে ‘নাতালিয়া এন্ড হাবিব – দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি'-এর নিয়মিত দর্শক ’বার্লিনপ্রবাসী আইনজীবী তৌহিদা নাজনীন বলেন, ‘গত প্রায় দেড় বছর আমরা একটা অস্থির-আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। জানি না এর শেষ কোথায়! এই অস্থিরতার মাঝে যখন হাবিব-নাতালিয়া দম্পতির চ্যানেলের ভিডিওগুলো দেখি, তখন সাময়িক সময়ের জন্য হলেও হতাশা থেকে দূরে থাকি। আর আমাদের সবচেয়ে বড় বিনোদন আমাদের Divine Gift ছোট সোনামনি নাদিয়া মামনি।’

এ ছাড়া করোনাকালের বিধি-নিষেধ, সতর্কতা, করণীয় নিয়ে ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব – দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলির ভিডিওগুলো থেকে বেশ উপকার পাচ্ছেন প্রবাসীরা। জার্মান ভাষা বোঝার সমস্যায় এইসব বিষয় অনেক সময় বুঝতে পারেন না তারা।

লকডাউনের সময় কাটানো উপায়ে নিজেদের এমন জনপ্রিয় করে তুলবে ভাবনায় ছিল না এই দম্পতির। যেমনটি বলেন হাবিব, ‘এত দ্রুত এমন জনপ্রিয় হবে কল্পনা অতীত ছিল। দর্শকদের ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ ও কৃতজ্ঞ। ভিডিও করার চেয়ে আসলে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নাতালিয়া ও আমাদের মেয়ে নাদিয়াকে বাংলা, বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করা।

‘আমরা যে শহরে থাকি এখানে খুব কম বাংলাদেশি থাকেন। সারাদিনে একজন খুঁজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এখন ভিডিও ব্লগের মাধ্যমে আমার মেয়ে নাদিয়াও অনেক বাংলা শব্দ শিখছে, বলছে। যখন সে নতুন কোনো বাংলা শব্দ বলে, আমার কাছে রাজ্য জয়ের খুশি লাগে। সেটাই আমার ব্যক্তিগতভাবে বড় পাওয়া। তার সঙ্গে জার্মানে বেড়ে ওঠা বাঙালি পরিবারের শিশুরাও বাংলা ভাষা রপ্ত করতে পারছে,’ বলেন প্রকৌশলী হাবিব।  

স্ত্রী নাতালিয়া ও মেয়ে নাদিয়াকে নিয়ে বাংলাদেশে এখনো আসা হয়নি হাবিবের। হাবিবের সাথে দেখা হওয়ার আগে কখনো কোনো বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয় নাই নাতালিয়ার, তবে হাবিবের সাথে পরিচয় হাওয়ার পর বাংলাদেশ ও বাঙালি সমাজ নিয়ে তার ধারণা পরিবর্তন হয়ে যায়।

এই বছরের শুরুর দিকে ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চান এই দম্পতি। বাংলাদেশের নানা ইতিবাচক দিক জার্মানির সবার কাছে তুলে ধরতে, কাজ করতে চান তারা।

চ্যানেল নিয়ে নাতালিয়ার অনুভূতি হাবিবের মতোই। তবে তার বেশি ভালোলাগা বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতি জানতে পারায়, জার্মানির বাংলাদেশি সমাজের সঙ্গে মিশতে পারায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউরোপিয়ানরা সাধারণত আত্মকেন্দ্রিক। কিন্তু বাঙালিরা দাওয়াত দিতে ও খেতে খুবই পছন্দ করে এবং তারা খুবই আন্তরিক ও সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, যা আমার খুব ভালো লাগে। মাংসের কারি, খিচুড়ি, ডাল দিয়ে ডিম ভুনা, এই সব খাবার আমি নাদিয়ার বাবার থেকে শিখেছি।’

‘জামার্নির বাঙালি সমাজ সব আমাকে আপন করে নিয়েছে। দূর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে আমি এখনও বাংলাদেশে যেতে পারিনি। ২০১৯ সালে পরিকল্পনা নিলেও সন্তানসম্ভবার জন্য বাতিল করতে হয়। এখন করোনা মহামারি আটকে রেখেছে। আমি মুখিয়ে আছি, কবে বাংলাদেশ দেখবে,’ বলেন বেলারুসের মেয়ে নাতালিয়া ।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলেই বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন এই দম্পতি।

লেখক: জার্মানিপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

4h ago