প্রয়োজন মেটানো না সৌন্দর্য বৃদ্ধি, কোনটা আগে?
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) শহরের যানজট এড়াতে শহরের নতুন পাঁচটি পয়েন্টে ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য ৮৫০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
কিন্তু, এ প্রকল্পেও মহানগরের সবচেয়ে বেশি যানজটের এলাকা— সাহেব বাজার স্থান পায়নি। এর কারণ হিসেবে কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা অর্থাভাবকে দায়ী করেছেন।
কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘সাহেব বাজারের জন্য প্রকল্পের পাঁচটি ফ্লাইওভারের চেয়ে দীর্ঘতর ফ্লাইওভারের প্রয়োজন। সেখানে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে।’
তিনি জানিয়েছেন, কর্পোরেশন সাহেব বাজারের জন্য একটি পৃথক প্রকল্পের আওতায় ফ্লাইওভার তৈরির জন্য পরিকল্পনা করছে। তবে শিগগির সেটা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম।
‘সাহেব বাজারে ফ্লাইওভারের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা কঠিন,’ যোগ করেন তিনি।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন শহরের মোহনপুরে ২০১৮ সাল থেকে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। এছাড়াও, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশেই আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে।
এখন কর্পোরেশন পাঁচটি নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য ‘আরবান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় হরগ্রাম, কোর্ট স্টেশন রেল ক্রসিং, ভদ্রা রেল ক্রসিং, বর্ণালী মোড় ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্কয়ার এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে।
কামারুজ্জামান স্কয়ারের ফ্লাইওভারটি ছাড়া বাকিগুলোর বেশিরভাগের পূর্ণ ব্যবহার শুরু হতে সময় লাগবে বলে স্থানীয়দের অনেকে মন্তব্য করেছেন।
তবে এই প্রকল্পের পরিচালক নূর ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, এই ফ্লাইওভারগুলোর প্রয়োজন রয়েছে।’
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘ফ্লাইওভারের জন্য আরসিসির পরিকল্পনা এই অর্থে যৌক্তিক যে জনসংখ্যা ও যানবাহন বৃদ্ধির ফলে অদূর ভবিষ্যতে এগুলোর প্রয়োজন হবে।’
তিনি নগর কর্তৃপক্ষের প্রকল্প গ্রহণের পদ্ধতির সমালোচনা করে বলেন, ‘আমার দুঃখ লেগেছে যে কর্পোরেশন এই পরিকল্পনা গ্রহণের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা ভাবেনি। যদি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হতো তবে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা যেত।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘প্রায় ৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরটিতে যেখানে ১০ থেকে ১৫ লাখ লোকের বাস সেখানে কয়টি ফ্লাইওভার প্রয়োজন তা আগেই নির্ধারণ করার প্রয়োজন ছিল।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী অধ্যায়ের সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য বেছে নেওয়া জায়গাগুলোতে পাঁচ মিনিটের বেশি যানজট কখনই থাকে না।’
‘সাহেব বাজারের যানজট কমানো একটি জরুরি বিষয়,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অফিসের সময়ে যানজট এড়াতে পরিচিত জনদের অনেককেই সাহেব বাজার এড়িয়ে চলতে দেখি।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ শফি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারগুলো এখন অপ্রচলিত প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং অনেক শহরে পরিবেশ দূষণ করেছে। উন্নত বিশ্ব অত্যাধুনিক র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম গ্রহণ করছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নূর ইসলাম রাজশাহী নগর ভবনে একটি অনুষ্ঠানে নতুন পাঁচটি ফ্লাইওভারগুলোর নকশা তৈরির জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ফ্লাইওভারকে নজরকাড়া সৌন্দর্যের নকশা করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেন।
মেয়র তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, সরকার নানান নগর উন্নয়ন কাজের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে। তিনি আরও চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ছাড়পত্র নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কনভেনশন সেন্টার, গ্রন্থাগার, মার্কেট ও ল্যান্ডস্কেপিং এবং শহরকে সুন্দর করার জন্য কর্পোরেশন ১৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৫৩ কোটি টাকা খরচ করছে।
কর্পোরেশন একটি নতুন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন এলাকা ও ট্যানারি শিল্প পার্ক স্থাপনে এবং শহরে প্রাকৃতিক উদ্যান তৈরির জন্য ২২টি পুকুর অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রকল্পগুলোর নকশা করছে এসএআরএম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট লিমিটেড এবং ভিস্তারা আর্কিটেক্টস প্রাইভেট লিমিটেড। নকশার জন্য কর্পোরেশনটির খরচ হবে সাত কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
Comments