মহামারিতেও উন্নয়ন বরাদ্দের মাত্র ২৬ শতাংশ ব্যয় করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ
করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া সত্ত্বেও, সরকার চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এই খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দের মাত্র ২৬ শতাংশ ব্যয় করেছে।
৫৩টি প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জুলাই-এপ্রিল সময়কালে মাত্র ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে।
অধিকাংশ প্রকল্পগুলো স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়েছিল।
৫৩টি প্রকল্পের মধ্যে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ২ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দুটি প্রকল্পের জন্য প্রত্যেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, সরকার এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এডিবি তহবিলের মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার এবং মার্চ অবধি বিশ্বব্যাংকের তহবিলের ৩৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পেরেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত এক বছরে একটি প্রকল্প পরিচালকের পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য সচিবের পরিবর্তনের কারণে বাস্তবায়নের গতি কমে এসেছে।
এছাড়া, সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের ক্রয় সংক্রান্ত পৃথক নিয়মের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে।
তবে, কিছু নিয়ম শিথিল করার কারণে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের হার এখন বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রকল্প এবং এডিপি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য খাত দক্ষ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি জানান, খাতটি দুর্নীতিমুক্ত নয় এবং ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমও স্বচ্ছ নয়। তিনি চিকিৎসকদের পরিবর্তে বিশেষজ্ঞের সহায়তায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
তিনি আগামী বছরে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা এবং টিকাদান কর্মসূচীকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন।
অন্যথায়, স্বাস্থ্য খাতে যথাযথ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যাবে না, মনসুর উল্লেখ করেন।
চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপির ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৪৯ শতাংশ।
গত অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার একই রকম ছিল যেখানে ব্যয় হয় ৯৮ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।
অর্থবছরের প্রথমার্ধে অসমভাবে চলার পর জানুয়ারি থেকে উন্নয়ন ব্যয়ে গতি বেড়েছে।
জুলাই থেকে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে গড় মাসিক বাস্তবায়ন হার ছিল ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
গত বছরের জুন অবধি দেশব্যাপী দুই মাসেরও বেশি সাধারণ ছুটির পর, চলাচলের বিধিনিষেধগুলো ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হয় এবং অক্টোবরের মধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম মহামারির আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করে।
এপ্রিল মাসে মাসিক এডিপি বাস্তবায়ন হার ৭ দশষমিক ১৭ শতাংশে পৌঁছেছিল এবং ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা । যা গত অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৮ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments