সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলেও বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ: মার্কিন প্রতিবেদন

সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সমুন্নত রাখা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ধর্মীয় বৈষম্যে বিধিনিষেধ রয়েছে এবং সব ধর্মের সমতা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।

আজ রবিবার বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস ‘আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন ২০২০: বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে এক হিন্দু পুরোহিতকে হত্যার দায়ে সহিংস চরমপন্থি গোষ্ঠী জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার সদস্যকে অভিযুক্ত করে ১২ মার্চ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। চরমপন্থা প্রতিরোধে সরকার পুরো বছরই মসজিদের ইমামদের নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়ে মসজিদ থেকে কোনো উস্কানি দেয়া হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজরদারি রাখা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বলেছেন, জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও বিরোধপূর্ণ জমি দখল বন্ধে সরকারি কার্যক্রম কার্যকর ছিল না। সম্ভাব্য সহিংসতা বন্ধে ধর্মীয় স্থাপনায়, উৎসব ও অনুষ্ঠানে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। হিন্দুদের একটি উৎসবের সময় নির্বাচন দেওয়ায় শিক্ষার্থী ও ধর্মীয় গ্রুপগুলো প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। পরে জানুয়ারিতে ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নতুন করে তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

গত বছর অক্টোবরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, লালমনিরহাটে কুরআনের অবমাননা করার গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর একজন মুসল্লিকে কয়েকশ মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর ওই ব্যক্তির দেহ পুড়িয়ে দেয়া হয়।

জুলাই মাসে গণমাধ্যম ও সুফি মুসলিমরা জানায়, গাজীপুরে সুফি মাজারের বাইরে এক সুফি অনুসারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জুলাই মাসে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলিমদের কবরস্তানে দাফন করার কারণে আহমাদি সম্প্রদায়ের একটি নবজাতকের মরদেহ মাটি থেকে তুলে ফেলা হয়। পরে সেটি একটি সরকারি কবরস্তানে দাফন করা হয়েছে।

নভেম্বরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে, কিছু হিন্দু ফ্রান্সে শার্লি এবদো পত্রিকায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের সমর্থন করেছেন এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লায় কয়েকশ মানুষ হিন্দু পরিবারগুলোর বাড়িঘরে লুটপাট চালায়, ভাঙচুর করে ও বাড়িঘরে আগুন দেয়।

ক্রিস্টান ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও অন্য মানবাধিকার সম্পর্কিত বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) জানায়, হিন্দু বা ইসলাম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে যারা খ্রিস্টান হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে হয়রানি, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের হুমকি অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও সারা বছরেই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত ছিল।

সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও মুক্ত বিবৃতিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, অন্য প্রতিনিধি, মার্কিন দূতাবাসের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক এম্বাসেডর ‘অ্যাট লার্জ’ ধর্মের নামে এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তারা সরকারকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।

মার্কিন দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত বছরে বাংলাদেশে বসবাসকারি রোহিঙ্গা মুসলিমদের শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার সাহায্য বিষয়ক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
10-bed ICU

Life-saving care hampered in 25 govt hospitals

Intensive Care Units at 25 public hospitals across the country have remained non-functional or partially operational over the last few months largely due to a manpower crisis, depriving many critically ill patients of life-saving care.

9h ago