কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে স্ত্রীর মৃত্যুর রহস্য ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা বাবুলের: পিবিআই

হত্যার পর বিকাশে লেনদেন হয় ৩ লাখ টাকা
বাবুল আক্তার

জঙ্গি হামলার হুমকির ঘটনার আড়ালে মিথ্যা কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর হত্যার রহস্য ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। এ ছাড়া, হত্যাকাণ্ডের পরে বাবুল তার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার সায়ফুল হকের মাধ্যমে হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া কামরুল ইসলাম শিকদার মুসাকে তিন লাখ টাকা পাঠান বলে উল্লেখ করা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতিবেদনে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের আদালতে পিবিআই এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ২০১৬ সালে বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। পিবিআই সেই মামলা তদন্ত করছিল। মঙ্গলবার এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে বাবুল আক্তারের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হক ও কাজী আল মামুন নামে আরেক ব্যক্তি জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করেছেন। মামলার ডকেট ও প্রতিবেদনসহ ৫৭৫ পাতার দলিলাদি জমা দেওয়ার পরপরই মাহমুদা খানম মিতুর বাবা বাবুল আক্তারসহ আট জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে নতুন আরেকটি মামলা দায়ের করেন। নগরীর পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা ওই মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মামলা তদন্তকালে বাদী বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয় হাজির হলে তার সঙ্গে মামলার এজাহার এবং সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত আসামিদের ছবি ও সাক্ষী মোহাম্মদ সাইফুল হক, কাজী আল মামুনের বক্তব্যের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া, ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত ছবিতে তার দীর্ঘ দিনের সোর্স এবং পারিবারিকভাবে পরিচিত মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার স্পষ্ট ছবি বাবুল আক্তারকে দেখানো হলেও তিনি শনাক্ত না করে সুকৌশলে এড়িয়ে যান। হত্যাকাণ্ডের পরপরই মুসা পালিয়ে যান। তদন্তে তার নাম উঠে আসে। স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের পরপরই বাবুল আক্তারের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার মোহাম্মদ সাইফুল হকের মাধ্যমে পলাতক আসামি মুসার কাছে নিজের অংশীদারির তিন লাখ টাকা পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুস্পষ্ট ও যৌক্তিক কোনো উত্তর দিতে ব্যর্থ হন।

মাহমুদা খানম মিতুর সঙ্গে সাংসারিক ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিনের মত বিরোধ থাকার বিষয়টি বাবুল স্বীকার করেছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় দীর্ঘদিন সাংসারিক ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর সঙ্গে মত বিরোধের কারণে ও ঘটনার পরপরই অপরাধীদের শনাক্ত করার লক্ষ্যে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিদের ছবি বাদীকে দেখানো হয়। পরিচিত হওয়ার পরও বাদী হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী পলাতক আসামি মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসাকে শনাক্ত করেননি। সুকৌশলে তাকে শনাক্ত না করে জঙ্গিদের দ্বারা হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে দাবি করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা এবং তার স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের পরপরই তার পরিচিত বন্ধু ও ব্যবসায়ী অংশীদার সাইফুল হকের মাধ্যমে পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম মুসার কাছে নিজের অংশীদারির তিন লাখ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। যে কারণে মামলার বাদী তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের মূল সুবিধাভোগী হিসেবে প্রতীয়মান হয়— বলা হয় প্রতিবেদনে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ, মামলার এজাহার, পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তের ফলাফল, ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত, সিসিটিভি ফুটেজ, ভিকটিমের সুরতহাল রিপোর্ট, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের উদ্ধার ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট, আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার সিডিআর পর্যালোচনা ও বিআরটিএসহ আনুষঙ্গিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় বাদী ও এজাহার দায়েরকারী মো. বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে দণ্ড বিধির ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ ধারা অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও হত্যা মামলার হত্যাকাণ্ডের অপরাধ থেকে তিনি নিজেকে বাঁচাতে সে সময় প্রচলিত জঙ্গি হামলার হুমকির ঘটনার আড়ালে মিথ্যা কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে ও তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মৃত্যুর রহস্য ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এজাহার দায়ের করেছিলেন।

পিবিআই-এর চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রাপ্ত তথ্য ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাবুল আক্তারই এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এবং তিনিই অন্যদের সহায়তায় এই কাজ করিয়েছেন। আমরা ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছি। আমরা তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

11h ago