বরিশালে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে মৃত্যু

জানুয়ারি থেকে মোট আক্রান্ত ৫০৮২০, মৃত্যু ১৯, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪৪০
176127738_1129064527606259_896863102305920972_n.jpg
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছবি: সুশান্ত ঘোষ

বরিশালে ডায়রিয়া পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও মৃত্যু কমছে না। গত ৪ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ হারের চার আগের এক ভাগ হলেও প্রায়শই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ডায়রিয়া চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ইতোমধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের পরীক্ষা করে নদী, খাল ও পুকুরের পানি ব্যবহারের মধ্যমে তারা কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে উপরিভাগস্থ পানি ব্যবহার না করার সুপারিশ করেছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগে গত ১০ মে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪০ জন। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি এ সংখ্যা ছিল প্রায় চার গুণ। গত ৭ মে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস জানিয়েছে, এটি কেবল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা। বাসাবাড়িতে যারা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, তাদের সংখ্যা এর সঙ্গে যুক্ত নয়।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসাবাড়িতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, বর্তমানে এই হাসপাতালে ৩৫ জন ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি এ সংখ্যা ছিল ৯৫ জন।

এ মুহূর্তে হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনের কোনো সংকট নেই বলে জানান তিনি।

ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের দ্রুত আইভি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন। বাসাবাড়িতে চিকিৎসার পর রোগীকে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে আসার ফলে মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে।

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনও জানান, সঠিক সময়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এলে মৃত্যু সংখ্যা আরও অনেক কমে যেতো।

বরিশাল জেলা সিভিল সর্জন ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, নদী, খাল ও পুকুর থেকে খাবার পানি এবং দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে নদী, খাল ও পুকুরের পানি না ব্যবহার করতে আইইডিসিআর থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, সারফেস ওয়াটার ব্যবহার না করে গভীর নলকূপের পানি বা ফুটিয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, ১-১৪ মার্চ আইডিসিআর প্রেরিত ছয় জনের একটি টিম বরগুনায় কাজ করে রোগীদের মলে কলেরার জীবাণু পেয়েছে। এমনকি তারা নদী ও খালের পানিতেও কলেরা জীবাণু পেয়েছে।

একই টিম গত ১ সপ্তাহ আগে তাদের পর্যবেক্ষণ বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অধিকাংশ রোগী নদী, খাল ও পুকুরসহ সারফেস ওয়াটার ব্যবহার করে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব পানিতে আইডিসিআর কলেরার জীবাণুও পেয়েছে।

আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন প্রেরিত এই রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস।

রিপোর্টে ৭১ ভাগ রোগী নদী, খাল ও পুকুরের পানি দিয়ে দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ করে থাকেন বলে জানা যায়। সুপারিশে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার, অন্যথায় নদী ও খালের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল জানান, অবস্থার যাতে অবনতি না হয় সেজন্য আমরা সচেতন করতে প্রতি উপজেলায় মাইকিং করছি। নদী ও খালের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করার জন্য বলা হচ্ছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অফিস প্রেরিত তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮২০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

18h ago