মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে চায় জাপানি কোম্পানি: জরিপ

মহামারির প্রকোপ কমার কোনো আভাস না পাওয়া গেলেও ৪১ দশমিক আট শতাংশ জাপানি কোম্পানি ২০২০ সাল থেকে পরবর্তী আরও দুই বছরের জন্য বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

জাপান সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থা জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

যদিও, ২০১৯ সালে ৭০ দশমিক তিন শতাংশ জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

তবে, ২০২০ সালে এসে মাত্র ৪৯ দশমিক তিন শতাংশ কোম্পানি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ছয় শতাংশ কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেবে কি না, সে বিষয়ে ভাবতে শুরু করে।

এ ছাড়া, তিন শতাংশ কোম্পানি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশে থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের চিন্তা করছে।

এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে জাপানি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা পর্যবেক্ষণে জেট্রো ২০১৯ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করে। চলতি বছরের মার্চে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

জরিপে গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে উৎপাদন ও অনুৎপাদন খাতে ব্যবসা পরিচালনাকারী ১৩ হাজার ৩৯৯টি জাপানি কোম্পানির বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। 

বাংলাদেশে এখন তিনশ’র বেশি জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে। গত এক দশক ধরে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ দেশে এসব কোম্পানির ব্যবসা বাড়ছে। ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহীরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, অভ্যন্তরীণ বাজার ও রপ্তানির মাধ্যমে বিক্রির সুযোগ বাড়ার কারণে তাদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।

জেট্রোর জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে থাকা নয় শতাংশ জাপানি কোম্পানি ইতোমধ্যে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে। এ ছাড়া, ৩১ দশমিক তিন শতাংশ কোম্পানি চলতি বছরের প্রথমার্ধে এবং ৩৪ দশমিক তিন শতাংশ কোম্পানি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আশা করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ভারতে বাণিজ্যিক পরিবেশে পরিবর্তন এসেছে এবং তা ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। তবে আরও ভালো প্রতিযোগী হয়ে ওঠার জন্য এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের আরও উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

জরিপে প্রায় ৬৬ দশমিক সাত শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছে, বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করা।

এ ছাড়া, ৫৬ দশমিক এক শতাংশ কোম্পানি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে শুল্ক প্রক্রিয়ার কথাও উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ৬৫ দশমিক ছয় শতাংশ কোম্পানি পরিচালনাগত লাভ প্রত্যাশা করছিল। তবে, ২০২০ সালে পরিচালনাগত লাভ প্রত্যাশা ছিল ৪৮ দশমিক নয় শতাংশ কোম্পানির। যা আগের বছরের চেয়ে ১৬ দশমিক সাত শতাংশ কম।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে ১৭ দশমিক সাত শতাংশ কোম্পানি পরিচালনাগত ক্ষতির আশঙ্কা করছিল। ২০২০ সালে এ আশঙ্কা ছিল ৩২ দশমিক চার শতাংশ কোম্পানির। যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক সাত শতাংশ বেশি।

মুনাফা পূর্বাভাসের দিক থেকে বাংলাদেশ সবার নিচে অবস্থান করছে। এদিক থেকে তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের ৬০ শতাংশকে ছাড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান সবার ওপরে। যা ৭১ দশমিক আট শতাংশ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালে পরিচালনাগত আয় বাড়ার প্রত্যাশা ছিল ৩৩ দশমিক এক শতাংশ কোম্পানির। ২০২০ সালে ১৬ শতাংশ কোম্পানির এ প্রত্যাশা ছিল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৭ দশমিক এক শতাংশ কম।

২০১৯ সালে পরিচালনাগত আয় হ্রাসের আশঙ্কা ছিল ২৯ দশমিক আট শতাংশ কোম্পানির। ২০২০ সালে ৬৫ দশমিক ছয় শতাংশ কোম্পানির এ আশঙ্কা ছিল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২৬ দশমিক আট শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে ৫২ দশমিক আট শতাংশ কোম্পানি ২০২১ সালে পরিচালনাগত মুনাফা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে। ২০২১ সালে ৩৮ দশমিক তিন শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি অ্যান্দো বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসা ক্ষেত্র উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এর জন্য পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে শুল্ক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহের সমস্যা, বিদ্যুতের ঘাটতি এবং মজুরি বৃদ্ধির মতো জটিলতার মুখোমুখি হয়। গত কয়েক বছরে এ দেশে কর্মী ও শ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়েছে।’

তবে, বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় জাপানি কোম্পানিগুলোর মাঝেমধ্যে মূলধন সংকটে পড়তে হয়।

জরিপের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যবসায়িক আস্থার ভিত খুব দুর্বল হয়ে এসেছে। আগামী দু-এক বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহও রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে।

মহামারির কারণে চাহিদা হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের মতো আরও কিছু বিষয় বাণিজ্যিক পরিবেশে নেতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ফলে, ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর আগ্রহেও ভাটা পড়ছে।

এ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ভারতে কাজ করা ৫০ দশমিক নয় শতাংশ কোম্পানি এবং পাকিস্তানে কাজ করা ৫৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ কোম্পানি আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

(প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম)

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

7h ago