ওমানে ভ্যাট প্রবর্তন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভাবনা
উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের (জিসিসি) অন্যতম সদস্য দেশ ওমানে চালু করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ব্যবস্থা। গত ১৬ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জিসিসির ভ্যাট প্রবর্তনের চতুর্থ দেশ হলো ওমান। দেশটির কর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ভ্যাট থেকে বছরে চার শ মিলিয়ন ওমানি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা) সংগ্রহ হবে এবং এতে দেশটির জিডিপি দেড় শতাংশ বাড়বে।
২০১৬ সালের জুনে বাকি পাঁচ দেশের সঙ্গে জিসিসির ভ্যাট চুক্তিতে সই করে ওমান। এর মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি এবং বাহরাইন ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভ্যাট প্রবর্তন করে। কাতার ও কুয়েত আগামী বছরের মধ্যে চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওমানে ২০১৮ সালেই ভ্যাট চালু করার কথা থাকলেও তারা প্রায় তিন বছর সময় নেয়। অন্যদিকে সৌদি আরব করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের মে মাসে ভ্যাটের হার পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। এটিই বর্তমানে জিসিসি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট হার।
গত বছরের শুরুতে ওমান প্রথম ভ্যাট চালুর বিষয়ে জানিয়েছিল। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আরোপ করা হয় ভ্যাট আইন এবং গেজেটে প্রকাশের ১৮০ দিন পর তা কার্যকর হলো। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক নিবন্ধন শুরু হয় এবং ১৪ মার্চ নির্বাহী বিধিমালা প্রকাশ করে কর কর্তৃপক্ষ।
আমদানি করা পণ্য ছাড়াও বেশিরভাগ পণ্য ও পরিষেবাগুলোতে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিকম পরিষেবা, মানি-টান্সফার পরিষেবা, বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপ, পর্যটন, শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনের ভাড়াসহ দেশটির নানা পরিষেবা এখন ভ্যাটের আওতায় এসেছে। তবে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, আর্থিক পরিষেবা, মৌলিক খাদ্যদ্রব্য ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রগুলো ভ্যাটমুক্ত রাখা হয়েছে। এর আওতায় বিশেষ বিবেচনায় ৪৮৮টি মৌলিক খাদ্য-পণ্য ভ্যাটের বাইরে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে সাধারণ মানুষে প্রয়োজনের সব কিছুই আছে।
ওমানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ লাখ প্রবাসী। প্রায় সাত লাখের বৃহত্তর সম্প্রদায় বাংলাদেশিরা নতুন কর ব্যবস্থা নিয়ে কী ভাবছে, করোনাকালে এসে জীবনযাত্রার ওপর তা কতটুকু প্রভাব ফেলবে, এসব বিষয়ে নানা শ্রেণি-পেশার ওমান-প্রবাসী বাংলাদেশিরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন তাদের অভিমত, উপলব্ধি।
সরকারের সঙ্গে দেশটির অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও আত্মবিশ্বাসী যে, ভ্যাট থেকে পাওয়া রাজস্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি ওমানকে ‘ভিশন ২০৪০’ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক, বর্তমানে ওমান-প্রবাসী একেএম রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ওমানের সমাজ বা আর্থিক ব্যবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি অস্তিত্বহীন বা শূন্যের হারে বলা চলে। করোনার আগে ২০১৯ সালে ওমানের মুদ্রাস্ফীতি দেখা গেছে শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ, তখন বাংলাদেশে তা ছিল পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তেল ব্যবসার গৌরবময় অতীত ফিরে আসার আশা ক্ষীণ। সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ভ্যাট প্রবর্তনের বিকল্প ছিল না। এতে যদি সেবার মান বাড়ে, অবশ্যই আমরা এটাকে স্বাগত জানাই।’
তবে, কম ঘনত্বের জনসংখ্যায় ভ্যাটের মতো উদ্যোগ ‘ভিশন ২০৪০’ লক্ষ্যের কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত নাও হতে পারে বলে মনে করেন একেএম রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওমানের জন ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৬ জন, যেখানে বাংলাদেশে এক হাজার ২৬০ জন। কাজেই কম জনসংখ্যার কেনাকাটায় আসা ভ্যাট লক্ষ্যে পূরণে কতটুকু সহায়ক হবে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়ানো প্রয়োজন রয়েছে এবং ওমানের জন্য সে সুযোগ অনেক বেশি।’
অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত হয়ে এনআরবি-সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক ও ওমান-প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পোদ্যোক্তা আশরাফুর রহমান বলেন, ‘ওমানসহ জিসিসির অনেক দেশেরই অর্থনীতি তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু, বিগত কয়েক বছর তেলের দাম কমতে থাকায় অর্থনীতি বেশ চাপে পড়ে। তাই তেল থেকে বেরিয়ে আয়ে বৈচিত্র্য আনতে ভ্যাট দেশটির জন্যে সম্ভাব্য বিকল্প রাজস্বের অন্যতম উৎস হবে এবং দেশটির প্রতিযোগিতার স্তরকে শক্তিশালীকরণের সঙ্গে স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য রাজস্ব প্রবাহ ধরে রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
ওমানের কর কর্তৃপক্ষের আশা, জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর ভ্যাটের প্রভাব সূক্ষ্ম হবে। কারণ, পণ্য ও পরিষেবার ওপর পাঁচ শতাংশ এই ভ্যাট বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় অনেক কম। কনজ্যুমার প্রোটেকশন অথরিটির (সিপিএ) মতে, ‘৪৮৮টি পণ্যে ছাড়ের ফলে পরিবারের বেশিরভাগ মৌলিক পণ্য ভ্যাট থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। এটি নাগরিক ও প্রবাসীদের ওপর করের বোঝা কমিয়ে গ্রাহকের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
একই ভাবনা বাংলাদেশি কমিউনিটির সংগঠক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ অনেকের। যদিও করোনাকালে কর্মহীন হয়েছেন অনেক প্রবাসী। ওমানের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আল হোসাইনি ইন্টারন্যাশনালের উচ্চপদস্থ বাংলাদেশি কর্মকর্তা এম ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, ‘ওমান সমাজ ও জনগণবান্ধব একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। বসবাসযোগ্য ও প্রবাসীবান্ধব দেশ হিসেবে বিশ্ব সূচকে একাধিকবার শীর্ষ স্থান নিয়েছে। দেশটি অনেক ভেবে-চিন্তে আইন বা ব্যবস্থা আরোপ করে থাকে। যাতে সমাজের ওপর কোনো চাপ না পড়ে। ভ্যাট প্রয়োগের ক্ষেত্রেও তারা কয়েক বছর দেরি করেছে শুধুমাত্র গবেষণা ও বাজার জরিপ করতে। যার প্রতিফলন দেখা যায় ভ্যাট ছাড় দেওয়া ৪৮৮টি পণ্যের তালিকায়। একজন মানুষের জীবন-যাপনের জন্যে যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই যখন ভ্যাটমুক্ত, তখন আমার নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, সাধারণ মানুষ বা প্রবাসীদের জীবনযাত্রায় ভ্যাট তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
সরকার নিবন্ধিত কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমএন আমিনও মনে করেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রায় ভ্যাট বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলছিলেন, ‘পাশের দেশ আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ওমানে ভ্যাট আসলো। সেদিক থেকে তো আমরা ভাগ্যবান। এখানকার বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই কিন্তু সাধারণ কর্মী। চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, মসলা, মাংস, সবজিসহ মৌলিক চাহিদার ৪৮৮ খাদ্য-পণ্য যখন ভ্যাটমুক্ত, তাতে তো তাদের জীবনযাত্রার ওপর ভ্যাটের প্রভাব পড়ার কথা নয়। বরং পাঁচ শতাংশ বাড়তি খরচের জন্য প্রবাসীদের অনেকে সচেতন হয়ে সাশ্রয়ী পরিকল্পনা নিতে পারেন। এতে বিলাসবহুল পণ্য বা অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা কমতে পারে। যা করোনাকালে সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রাজধানী থেকে দূরের দুকুম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একজন বাংলাদেশি নির্মাণশ্রমিক মো. আমজাদ জানান, গত ২১ এপ্রিল বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে তাকে কোনো ভ্যাট দিতে হয়নি। শুধু ওমানটেলের এক রিয়াল রিচার্জ করতে গিয়ে তাকে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট গুনতে হয়েছে এবং তা খুবই সামান্য।
মাস্কাটের বওসার এলাকার বাংলাদেশি গৃহিণী ফারজানা নিপা ১৫ থেকে ১৬ দিন অন্তর সংসারের নিত্য-পণ্যের জন্য বাজারে যান। গত ২০ এপ্রিল লুলু হাইপার মার্কেটে চলতি মাসের বাকি বাজার সেরে আসার অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলেন, ‘আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না দামে কেমন তারতম্য হয়েছে। বিলে দেখলাম কিছু পণ্যে ভ্যাট যুক্ত হয়েছে, কিছুতে নেই। সবমিলিয়ে বাড়তি তিন রিয়াল দিতে হয়েছে। যা খুব বেশি নয়। ঈদের বাজারেই বোঝা যাবে যে, ভ্যাটের প্রভাব পড়েছে নাকি পড়েনি।’
পণ্য ও পরিষেবায় পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আদায় শুরু করা সত্ত্বেও রাজধানীসহ ওমানজুড়ে শপিংমল, সুপার স্টোর ও রেস্তোরাঁগুলোতে ক্রেতার কমতি নেই। রাজধানীর মাস্কাটের অন্যতম বড় পাইকারি কেন্দ্র সিব বাজারের এমন চিত্রটি তুলে ধরে ফার্নিচার আমদানিকারক ও সরবরাহকারী মোহাম্মদ ইসমাইল চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে এই বাজারের দোকানগুলোতে সাধারণ ক্রেতার কোনো কমতি দেখছি না। ওমানিদের সঙ্গে অনেক বাংলাদেশি ক্রেতাও ছিলেন। ভ্যাট নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের বাকবিতণ্ডা বা আপত্তি দেখা যায়নি। তাই নতুন করের আগমন আমাদের ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে হয় না।’
ওমান থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় নয় শ কোটি টাকা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে। মানি ট্রান্সফার সার্ভিসে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হওয়ায় বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর প্রবণতায় ভাটা পড়বে কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছে। বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স বেশিরভাগই স্থানান্তর হয় গালফ ওভারসিজ এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও বাংলাদেশি ব্যাংকার ইফতেখার হাসান চৌধুরী এ ধরনের আশঙ্কার বিষয়ে বলেন, ‘নতুন ভ্যাটের হার একেবারেই সামান্য। যেকোনো অংকের টাকা বাংলাদেশে পাঠাতে সার্ভিস চার্জ বা কমিশন হিসেবে গ্রাহককে দেড় থেকে দুই রিয়াল দিতে হয়। এই সার্ভিস চার্জের ওপর পাঁচ হারে ভ্যাট আসে মাত্র শূন্য দশমিক ০৭৫ বা শূন্য দশমিক ১০০ রিয়াল। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ থেকে ২০ টাকা। বাংলাদেশি সাধারণ প্রবাসীদের সবারই এই বাড়তি চার্জ দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’
ভ্যাটের প্রভাব নিয়ে চিন্তার চেয়ে পদ্ধতি, আদায় প্রক্রিয়া ও হিসাব মেলানো নিয়েই ব্যস্ত আছে আমদানিকারকসহ সব শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। ওমানে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক ও সরবরাহকারী মোহাম্মদ এ আলিম গাজী পলাশ বলেন, ‘বছরখানেক আগাম ঘোষণা দেওয়ায় আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। তারপরেও এই প্রথম আমরা নতুন একটা কর কাঠামোর মধ্যে পড়েছি। তাই কিছুটা ঝামেলা ও সংশয় থাকাটা স্বাভাবিক। অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। এখানকার আইন-কানুনের প্রয়োগ অনেক কঠিন হলেও পদ্ধতিগুলোও ব্যবসাবান্ধব। আশা করছি ধীরে ধীরে সব কিছু ব্যবসায়ীদের আয়ত্তে, অভ্যাসে চলে আসবে।’
সুপার মার্কেট, হাইপারমার্কেটগুলোতে ভ্যাট আদায়ের চেয়ে তাকে সাজানো পণ্য নির্দিষ্টকরণ ও মূল্য ট্যাগ প্রতিস্থাপনেই বেশি ব্যস্ত কর্মীরা। কারণ, তাদের পণ্যসম্ভারে বৈচিত্র্য অনেক বেশি। বাংলাদেশি মালিকানার সবচেয়ে বড় চেইন সুপার মার্কেট আল বারকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ওমানজুড়ে আমাদের শাখাগুলোতে ২০ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। সেখানে ভ্যাট প্রযোজ্য মূল্যের ট্যাগ লাগানো বিশাল কাজ, যা এই মুহূর্তে আমাদের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে আমাদের ওপর ধকল যাচ্ছে বেশি। বিক্রির চেয়ে তাক সাজাতেই সময় দিতে হচ্ছে বেশি।’
ভ্যাটে বড় ধরনের প্রভাবের আশঙ্কা না করলেও শুরুতে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ীরা। ওমানের বড় একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, প্রবাসী বাংলাদেশি মো. রিয়াদ বলেন, ‘নিবন্ধন ও আদায়ের অধিকার পাওয়া সত্ত্বেও আগে চুক্তি করা চলমান প্রকল্পগুলোতে আমরা ভ্যাট আরোপ করতে পারছি না। অথচ নির্মাণসামগ্রী কিনতে আমাদের কিন্তু ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এটা কীভাবে সমন্বয় করব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। আশা করছি নতুন প্রকল্পগুলোতে এই সমস্যা থাকবে না এবং নতুন কর ব্যবস্থা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।’
শুরুতেই সব ব্যবসা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতায় আসেনি। আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ধীরে ধীরে ভ্যাটে আওতায় আনা হবে নির্ধারিত সব প্রতিষ্ঠানকে। ব্যবসার বার্ষিক মূল্যের ওপর ভিত্তি করে চারটি শ্রেণিতে নিবন্ধনকরণ ও ভ্যাট আদায় কার্যক্রমের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যা আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গড়াবে। কর কর্তৃপক্ষ বলছে, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান যে তারিখে আদায়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, তার আগে ভ্যাট নিতে পারবে না। এ নিয়েও অনেক ব্যবসায়ী কিছুটা বিপাকে আছেন।
‘আমাদের প্রতিষ্ঠান বি ক্যাটাগরিতে পড়ায় ভ্যাট আদায় ১ জুলাই থেকে শুরু করতে পারব। কিন্তু, সরবরাহকারীরা এখন আমাদের কাছ থেকে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট নিচ্ছেন। এটা কীভাবে সামঞ্জস্য করতে হবে, তা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি। নতুন ব্যবস্থা বলে অনেক বিষয় বুঝে উঠতে পারছি না’, বলেন রাজধানীর আমরা এলাকার বিল্ডিং মেটারিয়ালের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোরশেদ।
এখনো নিবন্ধনের আওতার বাইরে থাকা অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা দ্বিধায় আছেন। ওমানের ঐতিহ্যবাহী বোরকা ব্যবসায় যুক্ত সিব মার্কেটের জুয়েল ওয়াহেদ বলেন, ‘কখন, কীভাবে নিবন্ধনভুক্ত হবে এবং কীভাবে যুক্ত ভ্যাট ব্যয়টি হিসাব করব, তা আমাদের জানা নেই। আমাদের পুরো মার্কেটের দোকানিদের কারও এখনো নিবন্ধন হয়নি। আমরা কর কর্তৃপক্ষের আসার অপেক্ষায় আছি।’
বারকা শহরে গৃহস্থালি সামগ্রীর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যাট মাত্র এসেছে এবং আমি নিশ্চিত যে আগামীতে বেশিরভাগ দোকানে এর ব্যবহার হবে।’
ওমানের কনজ্যুমার প্রোটেকশন অথরিটি (সিপিএ) ভ্যাট আদায় কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে মনিটরিং করবে নিয়মিত। কোনো দোকান বা বাণিজ্যিক কেন্দ্রে নির্ধারিত পণ্যের ওপর পাঁচ শতাংশের বেশি ভ্যাট আদায় করা হলে বা অব্যাহতি দেওয়া পণ্যে ভ্যাট নেওয়া হলে তা জানানোর জন্যে নাগরিক ও প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
এজাজ মাহমুদ: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকি
আরও পড়ুন:
Comments