বাংলাদেশে মেথামফেটামিন: মৃত্যুর ফাঁদ, উদ্বেগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
কয়েক বছর ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দেশে উচ্চমূল্যের ক্রিস্টাল মিথ চোরাচালান করে আসছে। উচ্চ আসক্তির এই মাদকের চোরাচালান নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা।
মেথামফেটামিনকে ‘আইস’ নামেও ডাকা হয়। সাধারণত থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার থেকে এটির চোরাচালান দেশে আসে। সংঘবদ্ধ চক্রটি প্রায়ই দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের মাধ্যমে এই মাদক নিয়ে আসে বলে জানান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
গত তিন বছর ধরে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর দিয়ে প্রতি মাসেই দুই থেকে তিনটি চোরাচালানে এই মাদক আসছে। প্রতিটি চালানে থাকে আধা থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত মেথামফেটামিন। এই চালানগুলোর বেশিরভাগই আসছে মালয়েশিয়া থেকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এই মাদক বিক্রি করা হয় আশপাশের অঞ্চলের ধনীদের কাছে।
ক্রিস্টাল মেথামফেটামিনের সাধারণ নাম হলো ক্রিস্টাল মেথ। এটি একটি শক্তিশালী মাদক যা শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এই মাদকটি পরিষ্কার ক্রিস্টাল খণ্ড বা চকচকে নীল-সাদা শিলা আকারে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এই ড্রাগ নেওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের ওপর পড়া বিভিন্ন ধরনের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রভবের মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, দাঁত ক্ষয় ও স্থায়ী হ্যালুসিনেশন।
বর্তমানের ক্রিস্টাল মিথের চোরাচালান ও বিক্রির অভিযোগে করা একটি মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তাদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে চোরাকারবারিরা ক্রিস্টাল মিথকে ‘স্বর্ণ গলানোর রাসায়নিক’ বলাসহ নানা ধরনের কৌশল অনুসরণ করে থাকে।
গত বছরের ৪ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা, গুলশান ও বনানী এলাকা থেকে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করার পর এ ঘটনায় মামলাটি দায়ের করা হয়। অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রায় ছয় শ গ্রাম ক্রিস্টাল মিথ পাওয়া গেছে।
পুলিশ জানায়, ওই ছয় জন হলেন— মাদক চক্রের বাংলাদেশ অংশের নেতা চন্দন এবং তার সাব-ডিলার সিরাজ, অভি, জুয়েল, রুবাইয়াত ও ক্যানি। একটি স্বর্ণ দোকানের মালিক চন্দন ক্রিস্টাল মিথকে ‘স্বর্ণ গলানোর রাসায়নিক’ বলে প্রকাশ্য দিবালোকেই তা বিক্রি করত।
গ্রেপ্তার ছয় জনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে নুসরাত নামে এক নারী চোরাকারবারিকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক নুসরাতের বিরুদ্ধে ৫০ সদস্যের একটি মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার প্রত্যেকেই ক্রিস্টাল মিথে আসক্ত।
মালয়েশিয়ার সংযোগের বিষয়ে তদন্তকারীরা বলছেন, মালয়েশিয়া থেকে চোরাচালানের কাজের ব্যবস্থাপনা করতেন, এমন তিন জনকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন চন্দনের আত্মীয়।
ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার জাভেদ ইকবাল প্রিতম সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিদেশে বসবাসরত চোরাকারবারিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছি।’
তবে, তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলেননি ডিবির এই কর্মকর্তা।
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Methamphetamine In Bangladesh: Crystal death summoned
Comments