পাবলো এসকোবারের জলহস্তী নিয়ে বিপদে কলম্বিয়া

Pablo Escober's Hippo.jpg
এসকোবারের ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় আমদানি করা জলহস্তী। ছবি: সংগৃহীত

‘পাবলো এসকোবার’ এমন একজনের নাম, যার কথা গত ৩০ বছর ধরে ভুলে যেতে চাইছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া।

কলম্বিয়ান মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবার অপহরণ, বোমা হামলা ও নির্বিচারে বহু মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী। একসময় তাকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি বলে মনে করা হতো।

তবে সর্বকালের অন্যতম কুখ্যাত এই অপরাধীর কারণে এখনও বিপদের মধ্যে আছে কলম্বিয়া। 

বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসকোবারের ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় আমদানি করা জলহস্তী নিয়ে বিপাকে পড়েছে কলম্বিয়ান সরকার।

বিজ্ঞানীরা জানান, ‘কিং অব কোকেন’ পরিবেশের জন্য একটি মারাত্মক ‘টাইম বোম’ রেখে গেছেন।

কয়েক দশক আগে ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার জন্য এক দল জলহস্তী আমদানি করেছিলেন এসকোবার। এখন সেখানে প্রাণীটির সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, এখন দেশটির অন্যতম প্রধান নৌপথ- ম্যাগডালেনা নদীতেও জলহস্তীগুলো ছড়িয়ে পড়েছে।

গত মাসে বায়োলজিক্যাল কনজারভেশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলহস্তীগুলোর কারণে পরিবেশে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সেটি কমানোর একমাত্র উপায় হলো ‘নিধন’।

Hacienda Napoles-11.jpg
এসকোবারের মৃত্যুর পর তার বিলাসবহুল এস্টেট হ্যাসিন্ডা নেপলস সরকারি দখলে চলে যায়। ছবি: সংগৃহীত

গবেষণার অন্যতম লেখক কলম্বিয়ার জীববিজ্ঞানী নাটালি ক্যাসেলব্ল্যাঙ্কো বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এই প্রাণীগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু বিজ্ঞানী হিসেবে আমাদের সৎ হওয়া দরকার। জলহস্তী কলম্বিয়ার একটি আক্রমণাত্মক প্রজাতি এবং এখন যদি আমরা তাদের জনসংখ্যার একটি অংশকে হত্যা না করি কিংবা বিকল্প উপায়ে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করি, তবে ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

পাবলো এসকোবারের মৃত্যুর পর ১৯৯৩ সালে তার বিলাসবহুল এস্টেট হ্যাসিন্ডা নেপলস সরকারি দখলে চলে যায়। এরপরই সেখানে তথাকথিত ‘কোকেন জলহস্তী’ এর উত্থান শুরু হয়।

তার ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার অন্য প্রাণীগুলোকে সারাদেশের চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছিল। কেবল জলহস্তীগুলোই সেখানে রয়ে যায়।

ক্যাসেলব্ল্যাঙ্কো বলেন, ‘এগুলো আকারে বড় হওয়ায় অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করা কঠিন ছিল। তাই কর্তৃপক্ষ সেখানেই এগুলোকে রেখেছে। তারা সম্ভবত ভেবেছিল যে, সেখানেই প্রাণীগুলো হয়তো মারা যাবে।’

কিন্তু তারা সংখ্যায় আরও বেড়েছে।

কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞানীরা জলহস্তীর সংখ্যা গণনার চেষ্টা করেছেন। অনুমান করা হচ্ছে, কলম্বিয়ার জলপথে ৮০ থেকে ১২০টির মতো জলহস্তী আছে।

পশুচিকিত্সক ও সংরক্ষণবিদ কার্লোস ভালদাররামা বিবিসিকে বলেন, ‘আফ্রিকার বাইরে সবচেয়ে বেশি জলহস্তী এখন কলম্বিয়ায়।’

Hippo.jpg-1.jpg
হ্যাসিন্ডা নেপলসে থাকা জলহস্তীকে খাবার দিচ্ছেন দর্শনার্থীরা। ছবি এপি

বিজ্ঞানীদের ধারণা, জলহস্তীর সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে। কাসেলব্ল্যাঙ্কো ও তার সহকর্মীরা জানান, ২০৩৪ সালের মধ্যে জলহস্তীর সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে যাবে।

গবেষণায় তারা জানান, এটি বন্ধ করতে হলে প্রতিবছর অন্তত ৩০টি প্রাণীকে হত্যা বা বন্ধ্যাত্মকরণ প্রয়োজন।

ক্যাসেলব্ল্যাঙ্কো জানান, ‘কোকেন জলহস্তী’ এখানে বংশবৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকাতে প্রাকৃতিকভাবে তাদের কোনো শিকারি নেই, অর্থাৎ তারা সহজেই অনেক বাচ্চা জন্ম দিতে পারে ও দীর্ঘসময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

এ ছাড়াও, দেশটির আবহাওয়াও তাদের পক্ষে। আফ্রিকাতে কয়েকটি জনপদে খরা দেখা গেলেও কলম্বিয়ায় সেটা হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ আমেরিকার আবহাওয়া জলহস্তীর বংশবৃদ্ধির জন্য এতটাই আদর্শ যে, মা জলহস্তী অনেক কম বয়সেই সেখানে সন্তান জন্ম দিতে পারে। 

বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, জলহস্তীর কারণে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। বেশ কয়েকটি দেশীয় প্রজাতি এখন বিলুপ্তির হুমকির মুখে। সেখানকার জলজ পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব আছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

12h ago