সিএমপি’র ‘চাটগাঁইয়া’ সদস্যদের মধ্যে বদলি আতঙ্ক, অসন্তোষ
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপির) ৩৬ জনকে একদিনে বদলির ঘটনায় ‘চাটগাঁইয়া’ সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বদলি আতঙ্ক ও চাপা ক্ষোভ।
বদলির আদেশ পাওয়া এই পুলিশ সদস্যদের ৩৫ জনের বাড়ি চট্টগ্রামে ও একজনের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।
পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তালিকা ধরে ও একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বদলি শুরু হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পুলিশ সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিএমপিতে কর্মরত ছয় পুলিশ কনস্টেবল আনোয়ারা উপজেলায় এক ঠিকাদারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় সিএমপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
আনোয়ারার ঘটনার চার দিন পর পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে সিএমপি থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএনে) বদলি করা হয় সিএমপি’র ৩৬ কনস্টেবলকে।
রিজার্ভ অফিস সূত্রে জানা যায়, সিএমপি’র যেসব সদস্যের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায় গত ডিসেম্বরেই তাদের তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকার কথা প্রকাশ পেলে চাপা অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে ‘চাটগাঁইয়া’ সদ্যসদের মধ্যে।
এরই মধ্যে আনোয়ারার ঘটনায় সিএমপি থেকে বদলি প্রক্রিয়া বেগবান হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, বদলি আতঙ্কে রয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারাও। তবে নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, এই বদলি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ারই অংশ।
সিএমপি’র একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনোয়ারার ঘটনায় পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মহানগর পুলিশের সবাই বিব্রত।
তারা জানিয়েছেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ভোররাত ২টার দিকে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনাটি ঘটে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদার আবদুল মান্নান আনোয়ারা থানায় অভিযোগ করেন। তদন্তে ছয় পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার করার পর তাদের সবাইকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরও অনেকজনের বদলির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইস্যু হওয়া পুলিশ সদরদপ্তরের বদলি আদেশে বলা হয়েছে, ‘সিএমপি’র এই ৩৬ জনকে জনস্বার্থে বদলি করা হলো।’
আরও বলা হয়েছে, বদলিকৃত কনস্টেবল নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছাড়পত্র নেবেন। অন্যথায় তাদের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বা ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ হিসেবে গণ্য করা হবে।
পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শিক (এ আইজি পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-৩) গত ১১ ফেব্রুয়ারি সেই আদেশে সই করেছেন।
সিএমপি’র উপকমিশনার (সদর) আমির জাফর এটিকে স্বাভাবিক বদলি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দাবি করেছেন।
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘বদলির আদেশ এসেছেন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। এটি স্বাভাবিক বদলি। পুলিশের খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে এপিবিএন’র দুটি ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হচ্ছে। সেখানেই তাদের বদলির আদেশ এসেছে।’
‘আনোয়ারার ঘটনার আগেই কিছু নাম এই বদলি তালিকায় ছিল সেই অনুযায়ী এখন তাদের সেখানে বদলি করা হচ্ছে,’ যোগ করেন আমির জাফর।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি ঘটনার পর তারা যেহেতু বদলি হচ্ছেন তাই হয়তো মনে হতে পারে সেই ঘটনার পর বদলি বেগবান হয়েছে। তবে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’
আনোয়ারার ঘটনার পর সিএমপি’র চট্টগ্রামের লোকদের বদলি বেড়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন পদমর্যাদার একাধিক পুলিশ সদস্য যাদের বাড়ি চট্টগ্রামে তারা ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘সেই ছয় পুলিশ সদস্যের অন্যায় কার্যকলাপে আমরা নিজেরাও বিরক্ত ও চরম বিব্রত। তাদের শাস্তি আইনগতভাবে হোক। সেখানে ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই। তবে কয়েক জনের অপরাধের কারণে তালিকা করে বদলি করা দুঃখজনক। কারণ নিরাপরাধীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা কাজের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তারা জানিয়েছেন, এর আগে ২০১৯ সালের শেষ দিকে সিএমপি’র তৎকালীন উপকমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ (বর্তমানে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগরে অতিরিক্ত কমিশনার) সিএমপি’র বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরতদের বদলির জন্যে ‘চাটগাঁইয়া’ পুলিশ সদস্যদের তালিকা করতে চিঠি দিলে শহরজুড়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। চাপা অসন্তোষ বিরাজ করায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সিএমপি।
সিএমপি’র রিজার্ভ অফিসের সূত্র মতে, সিএমপিতে বিভিন্ন পদমর্যাদার দেড় হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছেন যাদের বাড়ি চট্টগ্রামে।
Comments