সাকিব ও ‘পাগলের কাণ্ডজ্ঞান’

Shakib Cartoon
কার্টুন: বিপ্লব চক্রবর্তী

সেদিন এক আপনজন খুবই উত্তেজিত কণ্ঠে মুঠোফোনের ওপাশ থেকে জানতে চাইলেন: “ওকি পাগল?” একটু সময় নিয়ে অবশ্য কণ্ঠটি মোলায়েম করে দ্বিতীয় প্রশ্নটি করলেন: “ওর কি কাণ্ডজ্ঞান নেই?” এই ‘ও’ টা আর কেউ নয়, ওনার খুবই প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান।

যেকোনো পরিস্থিতিতে সাকিব যেভাবে একধরনের নির্বিকার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, তা খুবই পছন্দ করেন এ খেলা পাগল মানুষটি; কারণ এই গুণ নাকি গড়পড়তা বাঙালির মধ্যে খুব বিরল। ‘পাগল’ আর ‘কাণ্ডজ্ঞান’ এই শব্দযুগল আমাকে অবশ্য এই বিরল গুণ নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবার অবকাশ দিলো না। আমার মনে পড়ে গেলো তারাপদ রায়ের ‘পাগলের কাণ্ডজ্ঞান’ গল্পটি। যখন প্রশ্নগুলো করছিলেন, সেই ঘনিষ্ঠজনের কণ্ঠে মোটেও কোন সমালোচনার আঁচ ছিলোনা, ছিলো উদ্বেগ। আর আমার ভাবনা অবশ্য ‘পাগলের কাণ্ডজ্ঞান’  গল্পকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে।

এক পাগল ভদ্রলোকের গল্প দিয়ে তারাপদবাবু তার গল্পটি শুরু করেছেন। সেখান থেকে একটুখানি নাহয় আগে আমরা পড়ে নেই- “এক পাগল ভদ্রলোক তাঁর বাড়ির রাস্তার দিকের বারান্দায় বসে একটি জলভরা গামলায় ছিপ ফেলে মাছ ধরছিলেন। পথ দিয়ে যেতে যেতে এই দৃশ্য দেখে কৌতূহলী একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মশায়, ক’টা ধরা পড়লো?’ এর উত্তরে ওই পাগল ভদ্রলোক কি বলেছিলেন তা নিয়ে কিঞ্চিৎ মতভেদ আছে। একটি বিখ্যাত শিশুকাহিনীতে আছে, ওই পাগল ভদ্রলোক দাঁত খিঁচিয়ে জবাব দিয়েছিলেন, ‘আপনাকে নিয়ে তিনটে। এর আগে আর দু’টো বোকা ধরেছি।’………”  তারাপদ রায় সারকথা যেটা বলতে চেয়েছেন তা হচ্ছে, বাস্তবজীবনে সত্যিকারের পাগলের কাণ্ডজ্ঞান কিছু কম নয়। আর পাগলদের সে কাণ্ডজ্ঞান আছে বলেই বাস্তবজীবনে অনেক কিছু সম্ভব হচ্ছে।

এ পর্যন্ত পড়ে অনেকেই হয়তো ভাবছেন পাগল, কাণ্ডজ্ঞান আর এর সাথে সাকিব আল হাসানের সম্পর্কটা কী? যে কারণে ওই ঘনিষ্ঠজন এত উত্তেজিত হয়ে প্রশ্নগুলো করেছিলেন, তার হেতু ছিলো এ করোনাকালে সাকিবের দীর্ঘদিন পর বিদেশ থেকে ফিরে কয়েকঘন্টার মধ্যে একটি জনসমাগমে উপস্থিত হওয়া। এ নিয়ে কথা হয়েছে অনেক। সাকিব সে অনুষ্ঠানে ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল। বিরক্তির ছিটেফোঁটাও ছিলো না তার চোখে মুখে, যদিও দীর্ঘ আকাশভ্রমণের পর মাত্র কয়েক ঘণ্টাই হাতে পেয়েছিলেন অনুষ্ঠানে আসার আগে। ওই ঘনিষ্ঠজনের কথা ধার নিয়ে যদি বলি তাহলে বলতে পারি, সাকিব ফিরে আসার পর বেশ কয়েকটাদিন তার ‘পাগলামি’-র জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন, যেমনটি তিনি সবসময়ই থাকেন। এখন পর্যন্ত তার সর্বশেষ যে ‘পাগলামি’ তা হচ্ছে এক ভক্তের মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দেয়া। সর্বশেষ পাগলামির জন্য আমরা ভক্তের পাগলামিকেও দায়ী করতে পারি, আর সেক্ষেত্রে কেউ যদি আবার পাগলামি করে প্রশ্ন না করে বসেন: যেদিন তার বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় ভক্তরা উপচিয়ে পড়েছিল, সেদিন তো তিনি একটুও ক্ষেপে যাননি?

যাক! এগুলোকে হয়তো আপনি পাগলামো বলতেই পারেন, তাই বলে সেই পাগলামোতে কাণ্ডজ্ঞান ছিলো না তা না বলাই বোধহয় ভালো।

তারাপদবাবু তো আর এমনিতেই বলেননি ‘পাগলেরও কাণ্ডজ্ঞান আছে।‘ আমরা হয়তো সবসময় হিসেব-নিকেশটা ধরতে পারি না, আর সেজন্যেই হয়তো পাগলামির সঙ্গে কাণ্ডজ্ঞানটা মিলাতে পারি না।    

 

 

Comments

The Daily Star  | English
Hitu Sheikh sentenced to death in Magura child rape case

Magura child rape: Hitu Sheikh sentenced to death, 3 acquitted

The child went to visit her sister's house where she was raped on March 6

2h ago