নিষেধাজ্ঞার সময়েও সাকিবের পক্ষে গেছে যা
পৃথিবীর যেকোনো ক্রীড়াবিদ যদি কোনো কারণে নিষিদ্ধ হন, তাহলে তার ভাবমূর্তি নিশ্চিতভাবেই একটা সংকটে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে পণ্যের দূতিয়ালিতে তাদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস নাইট ক্লাবে মারামারি করে কিছু দিনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। ওই সময়টায় তার এন্ডোর্সমেন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বল টেম্পারিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হওয়া অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বেলায় ঘটেছে পুরো উল্টো।
২৯ অক্টোবর ২০১৯। আইসিসির রায়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব। সঙ্গে জোটে আরও এক বছরের স্থগিত নিষিধাজ্ঞা। তার অপরাধ, তিনি তিনবার জুয়াড়ি দীপক আগারওয়ালের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েও আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে (এসিইউ) অবহিত করেননি।
দোষ স্বীকার করা ও তদন্তে সহায়তা সাপেক্ষে সাকিবকে কম সাজা দেওয়ার কথা জানায় আইসিসি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিজেই পরে জানান, এমন ‘ভুলে’র কারণে ৫-১০ বছরও নিষিদ্ধ হতে পারতেন তিনি। তবে সাকিবের বিরুদ্ধে এই রায় মেনে নেয়নি দেশের ক্রিকেটভক্তরা।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার দিনই মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বহু মানুষকে। তারা পেয়েছিলেন সাকিবের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’ও। তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার, নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিজ্ঞাপনের বাজারে এই বাঁহাতি ক্রিকেটার যেন ছিলেন ‘হটকেক’!
সাকিবের এন্ডোর্সমেন্ট তো কমেইনি, বরং অনেক বেশি বেড়ে গেছে। সাজার মেয়াদে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড় হিসেবে না থাকায়, যেকোনো বিজ্ঞাপনেই অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় তার। তিনিও সেই সুযোগ ভালোভাবেই লুফে নিয়েছেন।
নিষিদ্ধ হওয়া অন্য দেশের ক্রিকেটারদের বেলায় বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়লেও সাকিবের বেলায় ভিন্ন কেন হচ্ছে? কেন তার বাজার রমরমা? দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে সাকিবকেও করা হয়েছিল এমন প্রশ্ন। তিনি তখন রহস্য করে বলেছিলেন, ‘এটা বরং আপনারা খুঁজে বের করুন, আপনারই ভেবে দেখুন কেমন করে এটা হয়েছে।’
সাকিবের থেকেও গুরুতর অপরাধ স্পট ফিক্সিং করে ৫ বছর নিষিদ্ধ ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তিনিও জেরায় দোষ স্বীকার করেছিলেন। সেসময় তার জনপ্রিয়তাও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে পারফরম্যান্স বিচারে তিনি জাতীয় দলের আশেপাশে না থাকলেও তাকে দলে নেওয়ার দাবি ওঠে হরহামেশাই।
যেকোনো কারণেই কেউ খারাপ অবস্থায় পড়লে তার প্রতি মানুষের সহমর্মিতা বেড়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। সাকিব ও আশরাফুল নিষিদ্ধ হওয়ার পর সেকারণেই মানুষের এত এত সমর্থন পেয়েছিলেন? নাকি তার পেছনে আছে আরও কারণ? হয়তো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক বাস্তবতা ও মানুষের মনোজগতের কাঠমোও আসতে পারে বিস্তৃত আলোচনায়।
সেসব আলাপ না হয় তোলা থাক আগামীর জন্য। তবে নিষিদ্ধ হয়ে বরং সাকিবের জনপ্রিয়তা অনেকগুণ বেড়েছে, এই সত্য গত এক বছরে নানাভাবে যে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
Comments