সুচিকিৎসার আদেশ আদালতের

বিএসএমএমইউতে নেওয়ার ১ ঘণ্টারও কম সময়ে আবার কারাগারে কাজল

অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলায় হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে। ফাইল ছবি

আদালতের নির্দেশে অবশেষে আজ সোমবার সকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়ে যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।

এ খবর শুনে মা-বোনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান কাজলের ছেলে মনোরম পলক। গত ১০ মার্চ গ্রেপ্তারের পর এই প্রথমবারের মত কাজলকে দেখতে পেলেন স্ত্রী ও মেয়ে। কিন্তু কথা বলতে পারেননি।

মনোরম পলক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাবাকে আজ হাসপাতালে নেওয়া হবে, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়নি। আমরা অন্য মাধ্যম থেকে খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দিগ্বিদিক খুঁজতে থাকি। পরে জানলাম তাকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গেলে বাবার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে আমাদের দূরে থাকতে বলা হয়। আমরা দূর থেকেই দেখলাম ডাক্তাররা বাবাকে কিছুক্ষণ চেকআপ করেন। কিন্তু কোনো টেস্ট বা হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেননি।’

‘বহির্বিভাগ থেকে বাবাকে বের করে নেওয়ার সময় দেখি তিনি হাঁটতে পারছেন না। তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। কয়েকজন তাকে ধরে গাড়িতে তোলার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। অনেকটা জোর করেই বাবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। বাবাও তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। দূর থেকেই বলেন যে, তার শরীর অনেক খারাপ। তাকে কোনো টেস্ট করা হয়নি এবং হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি। এমনকি তাকে ফোন করতে ও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও দেওয়া হয় না’, যোগ করেন পলক।

পলক জানান যে, মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময়ের মধ্যে কাজলকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চেকআপ করিয়ে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগের যে চিকিৎসকরা কাজলকে চেকআপ করেছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেননি বলে জানান পলক। এ ছাড়া, দ্য ডেইলি স্টার থেকে চেষ্টা করেও বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আদালত থেকে সাংবাদিক কাজলের শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা আজ তাকে বিএসএমএমইউতে পাঠাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে চেকআপ করেছেন এবং এক মাস পর আবার নিয়ে যেতে বলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আসার পর থেকেই কাজল কারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ীই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আন্ডার ট্রিটমেন্টের বাইরে নন।’

কাজলকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘যোগাযোগ করতে না দেওয়ার কী আছে। করোনাকালে তো আসামিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই। কাজল নিয়ম অনুযায়ী ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তাকে যদি কথা বলতে দেওয়া না হতো, তাহলে পরিবার কী করে জানল যে তিনি অসুস্থ।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে আসামিরা সাতদিনে একদিন দেখা করতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারবেন পাঁচ টাকার বিনিময়ে। এখন তিনি যদি পাঁচ টাকার বিনিময়ে কথা বলতে না চান, তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। আমি তো আর জোর করে তাকে কথা বলাতে পারব না।’

কারা চিকিৎসক মো. খুরশীদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাজল শারীরিকভাবে দুর্বল এবং ক্ষুধা ও নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন। অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি তার মধ্যে বিষণ্ণতায় ভোগার প্রবণতাও আছে বলে মনে হয়েছে।’

‘কাজলকে আজ বিএসএমএমইউর আউটডোরে নিউরোলজি বিভাগে নেওয়া হয় এবং সেখানকার চিকিৎসকরা তার কিছু ডায়াগনস্টিক টেস্ট করতে দিয়েছেন, যেগুলো কারাগারেই করা যেতে পারে, তাই তাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় জটিলতা ধরা পড়লে তাকে তাৎক্ষণিক বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হবে। কোনো জটিলতা না থাকলেও তাকে এক মাসের মধ্যে বিএসএমএমইউতে চেকআপের জন্য নেওয়া হবে’, যোগ করেন তিনি।

মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আজ সাংবাদিক কাজলের জামিন আবেদনের শুনানি ছিল। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন।

এ বিষয়ে কাজলের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাংবাদিক কাজলের ফেসবুক পোস্টের কারণে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্যের মানহানি হওয়ার মত ব্যাপার ঘটেছে বিবেচনায় আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন।’

আদালতের নির্দেশে কাজলের সুচিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘কাজলের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। যে কারণে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বিএসএমএমইউ এনে দেখিয়েছে। এখানে আসলে তিনি কী চিকিৎসা পেলেন, সকালে এনে এক ঘণ্টার মধ্যে চেকআপ করে তাকে নিয়ে চলে গেল, এটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাজল একজন অভিযুক্ত, তিনি এখন পর্যন্ত অপরাধী নন। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার করতে গেলেও তার সুস্থতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। গ্রেপ্তারের সময় কাজল সুস্থ ছিলেন। এখন যদি কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, তাহলে আমরা কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে বাধ্য হব।’

আরও পড়ুন:

সাংবাদিক কাজলের শারীরিক অবস্থার অবনতির অভিযোগ

আদালতের নির্দেশের পরও সাংবাদিক কাজলের চিকিৎসা অনিশ্চিত

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

16h ago