অনেকবছর নয়, আরও কিছুদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখি: রামেন্দু মজুমদার
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মঞ্চ নাটকের দল ‘থিয়েটার’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন রামেন্দু মজুমদার। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) বিশ্ব সভাপতি হয়েছিলেন দুইবার। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) অনারারি প্রেসিডেন্ট তিনি।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করছেন। এখনো তিনি মঞ্চে সরব। ‘মেরাজ ফকিরের মা’ এবং ‘মায়ানদী’ নাটকে এখনো নিয়মিত অভিনয় করেন তিনি। পেয়েছেন একুশে পদক।
গুণী নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের ৮০তম জন্মদিন আজ রোববার। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন তার ৮০তম জন্মদিনের ভাবনা।
জীবন থেকে অনেকগুলো বছর চলে গেল, এবারের জন্মদিনের ভাবনা কী?
রামেন্দু মজুমদার: আমার ৮০তম জন্মদিনে কেবলই মনে হচ্ছে জীবন তো প্রায় শেষ হয়ে এল। আরও কিছুদিন যদি বাঁচতে পারি, আরও কিছু কাজ যদি করে যেতে পারি, এটাই ভাবনা। আসলে জীবন তো একদিন ফুরিয়ে যায়। তারপরও বাঁচার আশা সবারই থাকে। আমিও আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। সত্যি কথা বলতে জন্মদিনে বর্ণাঢ্য কিছু কখনো করি না। আমরা পাঁচ জন (আমি, স্ত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, মেয়ে ত্রপা, মেয়ের জামাই আপন এবং ওদের সন্তান) মিলে জন্মদিনে প্রতিবছর একটু বের হই। এ বছর তাও সম্ভব নয়। আসলে জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকতা করা হয় না।
দেশের একজন সফল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আপনি, বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
রামেন্দু মজুমদার: সফল কি না জানি না। সেটির বিচার এ দেশের মানুষেরা করবেন, আপনারা করবেন। তবে দেশের সংস্কৃতির জন্য কাজ করে গেছি। মঞ্চ নাটকের জন্য কাজ করে গেছি। কিছুটা হলেও বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক ও সংস্কৃতির জন্য অবদান রাখতে পেরেছি। বিশেষ করে আইটিআই’র সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিতি করিয়ে দিতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? সফল মানুষ হব তা ভেবে কাজগুলি করিনি। ভালোবাসা এবং দেশের সংস্কৃতির কথা ভেবে কাজ করেছি।
আপনার জীবনের দুটি বড় অর্জনের কথা জানতে চাই?
রামেন্দু মজুমদার: ৪৮ বছর ধরে থিয়েটার পত্রিকা বের করছি। এটা আমার জীবনের অন্যতম প্রধান একটি অর্জন। থিয়েটারের যেকোনো ইতিহাস জানতে পত্রিকাটির বিরাট ভূমিকা থাকবে সবসময়। দ্বিতীয় অর্জন হচ্ছে- আইটিআই’র সভাপতি হিসেবে কাজ করেছি দুইবার এবং এখনো অনারারি প্রেসিডেন্ট (সাম্মানিক সভাপতি) হিসেবে আছি।
আর কতদিন বাঁচতে চান?
রামেন্দু মজুমদার: আসলে বাঁচার স্বাদ তো কারও মরে না। সবাই বাঁচতে চায়। সুন্দর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে কেউ যেতে যায় না। অনেক বছর বাঁচলাম। তবে অনেকবছর নয়, আরও কিছুদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখি।
আগামী দিনে কোন স্বপ্নটি পূরণ করে যেতে চান?
রামেন্দু মজুমদার: থিয়েটার স্কুলটিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে যেতে চাই। এ ছাড়া, আমার বাড়িতে কয়েক হাজার বই আছে, সেটিকে আর্কাইভ এবং সংগ্রহশালা করে যেতে চাই, যাতে মানুষের কল্যাণে আসে।
কোন ভাবনা বা আকাঙ্ক্ষা থেকে দেশের অন্যতম প্রধান নাটকের দল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
রামেন্দু মজুমদার: ১৯৭২ সালে আমরা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করি। নিয়মিত নাটক করব, সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করি। আরেকটি স্বপ্ন থেকে নাটকের দল গড়ি। তা হচ্ছে- সাধারণ মানুষের সুখ-দু:খের কথা আমরা মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করার কথা ভেতরে লালন করেছি। মোটকথা নাটকে আমরা গণমানুষের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই আকাঙ্ক্ষাগুলো ছিল। তারপর কাজ শুরু করি। সদ্য স্বাধীন দেশ আমাদের তখন। কত স্বপ্ন আমরা নিয়মিত নাটক করব। মানুষ ভালোবেসে মঞ্চ নাটক দেখতে আসবে। তারপর অবশ্য ১৯৭৪ সাল গড়িয়ে যায় নিয়মিতভাবে নাটক নিয়ে মঞ্চে আসতে। প্রথম থিয়েটার’র হয়ে আমরা করেছিলাম শহীদ মুনির চৌধুরীর কবর নাটকটি। সেই থেকে এখনো পথচলা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক কতদূর এগিয়েছে?
রামেন্দু মজুমদার: ৪৫ বছরে বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক অনেকদূর এগিয়েছে। মঞ্চ নাটক তো আমরা ভালোবাসা থেকে করি, শখ থেকে করি। মঞ্চ নাটক করে তো টাকা আসে না। তারপরও নাটককে ভালোবেসে মঞ্চে অভিনয় করি। মঞ্চ নাটক কারও পেশা নয়। তারপরও বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক একটি ভালো অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। আমাদের মঞ্চ নাটক নিয়ে অবশ্যই আমরা গর্ব করতে পারি। এটি আমাদের সম্মিলিত চেষ্টার ফসল।
নতুন কোনো নাটক মঞ্চে আনছেন কি?
রামেন্দু মজুমদার: করোনাকাল শুরু হওয়ার আগে আমাদের নাটকের দল থিয়েটার থেকে একটি নতুন নাটকের কাজ শুরু করেছিলাম। আমারই নির্দেশনায় নাটকের নামটি চূড়ান্ত করতে পারিনি। কিন্তু করোনা চলে আসায় কাজটি নিয়ে এগোতে পারিনি। করোনাকাল কেটে গেলে নতুন নাটকটি নিয়ে মঞ্চে ফিরব।
Comments