নোয়াখালীতে চুরি হওয়া নবজাতককে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলো পুলিশ

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জন্ম নেওয়ার একদিন পর চুরি হয়ে যাওয়া এক নবজাতককে চুরির অভিযোগ পাওয়ার ৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে চাটখিল থানা পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালিয়ে উপজেলার নোয়াখলা গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। নবজাতক চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ সকালে চাটখিল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম শিশুটিকে তার মা রিনা বেগম ও বাবা বেলাল হোসেনের হাতে তুলে দেন।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার উত্তরদেব নগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী মারজাহান বেগম (৩০), নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার মুকিল্লা গ্রামের হাবিবুল বাহারের স্ত্রী লাভলি বেগম (৩২) ও নবজাতকটি কিনে নেওয়া চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা গ্রামের মোশারফ হোসেন গাজী (৪২)।

চাটখিল থানায় দায়ের করা অভিযোগে নবজাতকটির পিতা রামগঞ্জের ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী রিনা বেগম গত ২৩ জুলাই চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। ২৪ জুলাই প্রসূতি ও নবজাতককে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়া লাভলি ও মারজাহান বেগম সম্পর্কে তার চাচী হন। প্রসূতি রিনা বেগমকে নিয়ে লাভলি ও মারজাহান বেগম বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলে কৌশলে লাভলি ও রিনা তার সন্তানকে নিয়ে নোয়াখলা গ্রামের মোশারফ হোসেনের কাছে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করে দেয় এবং প্রসূতি রিনা বেগমকে সোনাইমুড়ী উপজেলার মুকিল্লা গ্রামের লাভলি বেগম এর ঘরে নিয়ে আটক রাখে। এ সময় প্রসূতি রিনা বেগমের কাছ থেকে ৩০০ টাকা মূল্যের একটি অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয় লাভলি বেগম। পুরো ঘটনা আঁচ করতে পেরে রিনা বেগম কৌশলে গত সোমবার রাতে লাভলির বাসা থেকে পালিয়ে চাটখিল থানায় এসে পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। এ সময় রিনার স্বামী ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন ও চাটখিল থানায় এসে হাজির হন।

এ ঘটনায় সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বেলাল হোসেন বাদী হয়ে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ পেয়ে চাটখিল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ রাতেই শিশুটি উদ্ধারে অভিযানে নামে। আজ ভোরে নোয়াখলা গ্রামের মোশারফ হোসেন গাজীর বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে সকালে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়।

নবজাতকটি ফিরে পেয়ে বেলাল হোসেন-রিনা দম্পতি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। চুরি হওয়া নবজাতকটি এ দম্পতির প্রথম ও একমাত্র সন্তান। অতি অল্প সময়ের মধ্যে চুরি হয়ে হাওয়া নবজাতকটিকে সুস্থ ভাবে উদ্ধার করতে পারায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ওই দম্পতি।

চাটখিল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া দুই নারী সম্পর্কে বোন ও ব্যবসায়ী বেলালের সম্পর্কে চাচী হন। তারা কৌশলে রিনার কাছ থেকে নবজাতকটি চুরি করেন। নবজাতক চুরি কর দুই নারী শিশুটিকে প্রথমে সোনাইমুড়ী নিয়ে যায়। পরে ওই দিন রাতে কৌশলে নোয়াখলা গ্রামের নিসন্তান মোশারফ হোসেন গাজীর কাছে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর রাতেই অভিযানে নেমে আজ ভোরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে নবজাতক চুরির কথা স্বীকার করেছে দুই নারী।’

গ্রেপ্তার তিন জনকে আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদেরকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নবজাতক চুরি হওয়ার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরপরই তাকে উদ্ধারের জন্য চাটখিল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।’

গ্রেপ্তারকৃতরা কেন নবজাতকটিকে চুরি করলো সে ব্যাপারে জানার জন্য তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে বলে তিনি যোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধ করে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

A transitional budget for troubled times

Govt signals people-centric priorities but faces tough trade-offs

2h ago