সবুজ সঙ্কেতের পরও নিজ উদ্যোগে মাঠে ফিরতে অনীহা ক্রিকেটারদের
করোনাভাইরাস মহামারির থাবায় চার মাস থেকে স্থবির দেশের ক্রিকেট। ঘরবন্দি ক্রিকেটাররা শুরু থেকেই ফিটনেস নিয়ে খাটলেও স্কিল ট্রেনিংয়ে রয়ে যাচ্ছে বড় ঘাটতি। মুশফিকুর রহিমের মতো কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে বাইরে বেরিয়ে হালকা অনুশীলন করলেও তা নিয়ে চলছে নানামুখি আলোচনা। বিসিবি অবশ্য মাঠে এসে ব্যক্তি উদ্যোগে অনুশীলনের সায় দিতে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সুযোগ গ্রহণ করতে নানা কারণেই দ্বিধায় ক্রিকেটাররা।
বোর্ড পরিচালক শফিউল আলম নাদেল জানান, বিসিবি থেকে ক্রিকেটারদের জিমের যন্ত্রপাতি বাড়িতে নিতে বলা হয়েছে। তবে সিলেটের ক্রিকেটাররা নিজ উদ্যোগে কেউ চাইলে মাঠে এসেও কাজ করতে পারবেন, ‘আমরা জাতীয় পুলের ক্রিকেটারদের মাঠে অ্যালাউ করব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি কেউ ইনডোর ব্যবহার করতে চায় তাহলে সুযোগ করে দেওয়া হবে।’
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীও জানান, ক্রিকেটাররা নিজ উদ্যোগে চাইলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিসিবির মাঠ, জিম, ইনডোর ব্যবহার করতে পারবেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামও অনুশীলন করার জন্য পুরোপুরি তৈরি আছে। বিসিবির এই অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ আছে সিলেটে থাকা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। তবে নিজ উদ্যোগে মাঠে গিয়ে অনুশীলনের চিন্তা এখনো তারা কেউ করেননি।
কারো মধ্যে কাজ করছে করোনাভাইরাস নিয়ে ভীতি। মাঠে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও কেউ আবার বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে না বললে আগ বাড়িয়ে উদ্যোক্তা হতে চান না। করোনা বিস্তারের মধ্যে নিজ উদ্যোগে মাঠে অনুশীলন করে সমালোচনায় পড়ার ভয়ও কাজ করছে কারো কারো মধ্যে।
টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য পেসার আবু জায়েদ রাহি খেলা বন্ধের পরই চলে এসেছিলেন সিলেটের বাসায়। ফিটনেস, আর ব্যক্তিগত জীবনের ব্যস্ততা নিয়েই কাটছে তার সময়।
কয়েকদিন আগে তার বিয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তবে রাহি জানালেন, তিনি বিয়ে করেছিলেন বছর দেড়েক আগে। হাতে ফাঁকা সময় থাকায় ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে ছোট্ট এক অনুষ্ঠান করেছেন কেবল।
বাসায় মোটামুটি সব সুবিধা সম্বলিত জিম বানিয়েছেন। মিরাবাজারে বাসার সামনের রাস্তায় রানিং করেন। বাসায় থাকলে ওজন বেড়ে যাবে এই শঙ্কায় ওজন কমানোর ট্রেনিং করছিলেন, তাতে উলটো ওজন দুই কেজি বেশি কমে গেছে, ‘আমি ওজন কমানোর কাজ করছিলাম। এটা করতে গিয়ে দুই কেজি বেশি ওজন কমে গেছে। এখন দেবাশীষ দা (ডা.দেবাশীষ চৌধুরী আমাকে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছেন ওজন ঠিক করার জন্য। ২১ তারিখ থেকে আবার ট্রেনিং শুরু করার কথা।’
অর্থাৎ ফিটনেস টেনিং নিয়ে কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু মাঠে যাওয়া, বোলিং করা, স্কিল ট্রেনিং এসব তো ভিন্ন ব্যাপার। রাহি জানালেন, বোর্ড থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললে নিজে নিজে মাঠে যেতে চান না, ‘যেদিন বল করার জন্য অনুমতি দিবে সেদিন মাঠে যাব। এছাড়া মাঠে যাব না। বোর্ড আমাদের সুরক্ষা আগে চাইছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। আর স্কিল নিয়ে ভাবছি না কারণ ফিটনেস ঠিক থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে আবার বোলিং ছন্দ পাব।’
মাঠ যাওয়ার অনাগ্রহের আরেক কারণ সামনে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা। জাতীয় দলের কোন খেলা এই বছর আর হবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। এমনকি বন্ধ থাকা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আবার কবে চালু হবে, কিংবা আদৌও হবে কিনা তাও জানা যাচ্ছে না। ফিটনেস ঠিক রাখার বাইরে তাই আলাদা তেমন কিছু করার দেখছেন না তারা। কোচিং স্টাফ থেকেও নাকি দেওয়া হচ্ছে তেমন বার্তা।
সিলেটের আরেক পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের বাড়ি শহরতলির আলমপুরে। সেখানে আছে ফাঁকা মাঠ, খোলোমেলা জায়গা। ঘরে জিমের যন্ত্রপাতি আছে তারও। বাড়ির কাছে মাঠ থাকায় রানিংও করছেন। বাড়িতে নেট টাঙ্গিয়ে বোলিংও করছেন এই পেসার।
তবু আন্তর্জাতিক মাঠের সুবিধা তো আর সেটা নয়। সেই সুবিধা নিতে চান কিনা জানতে চাইলে খালেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তাড়াহুড়ো করার চিন্তা নেই তার, , ‘এখনো সেরকম দিন তারিখ ঠিক করিনি। বিসিবি থেকেও আমাদের কিছু বলা হয়নি। কোচ অনলাইনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেছেন যেহেতু সামনে অনেকদিন খেলা নেই, তাই তাড়াহুড়ো না করতে। বাড়ি থেকেই ফিটনেসটা ঠিক রাখতে। এই মাসটা তাই দেখব।’
‘আমার বাড়িতে অবশ্য বোলিং করার জায়গা আছে। আমি নেট টাঙ্গিয়ে বল করছি। বোলিং কোচও ফিটনেসের পাশাপাশি স্কিলের কিছু কাজ দিয়েছেন। সেগুলো নিয়ে ভাবছি। আর প্রচুর খেলার ভিডিও দেখার চেষ্টা করছি।’
মৌলভীবাজারের বড়লেখার বাড়িতে আছেন টেস্ট দলের আরেক পেসার ইবাদত হোসেন। গ্রামে ফাঁকা জায়গায় রানিং আর বাড়িতে জিম করে নিজেকে ফিট রাখছেন তিনি। এছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসার তানজিম সাকিব আছেন বালাগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে। ফিটনেস নিয়ে খেটে কাটছে তারও সময়। জানা গেছে, স্পিনার নাসুম আহমেদ, এইচপি স্কোয়াডের জাকির হাসানের একই হাল।
জাতীয় দলের আশেপাশে নেই কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেন সিলেটের এমন ক্রিকেটাররাও এখনো মাঠে যাওয়ার চিন্তা করেননি। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার অলক কাপালী নিজ বাসাতেই ফিটনেস ট্রেনিংয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে যাওয়া অতটা ঝুঁকি পূর্ণ মনে না করলেও অনুশীলন নিয়ে বিসিবির একটা রূপরেখার অপেক্ষায় তারা।
--
Comments