মাসুদ রানা সিরিজ ও প্রতিটি চরিত্র আমার সৃষ্টি: কাজী আনোয়ার হোসেন

কাজী আনোয়ার হোসেন। ছবি: সেলিম জাহিদ

(চলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় চরিত্র 'মাসুদ রানা'র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন। তার প্রয়াণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো একটি অধ্যায়ের। গতবছরের জুলাইয়ে দ্য ডেইলি স্টার কাজী আনোয়ার হোসেনের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়, যেখানে মাসুদ রানার কপিরাইট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন অকপটে। আজ তার মৃত্যুদিনে সাক্ষাৎকারটি পুনরায় প্রকাশ করা হলো।)

বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ 'মাসুদ রানা'। মাসুদ রানার কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে এর স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। সম্প্রতি শেখ আবদুল হাকিমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের দেওয়া এক রায়ে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব দেওয়া হয়েছে শেখ আবদুল হাকিমকে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। গোস্ট রাইটার দিয়ে বই লিখিয়ে নেওয়ায় কাজী আনোয়ার হোসেনের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সেসব প্রশ্ন নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার মুখোমুখী হয়েছিল মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের।

অভিযোগ উঠেছে 'মাসুদ রানা'র লেখক আপনি কাজী আনোয়ার হোসেন নন, লেখক শেখ আবদুল হাকিম। আপনি অন্যের লেখা নিজের নামে প্রকাশ করেছেন। এত বছর পরে এসে এমন অভিযোগ উঠল কেন?

এ কথা তো আমি বহুবার বলেছি, কোনো দিন গোপন করিনি যে, সবগুলো মাসুদ রানা সিরিজের বই আমি লিখিনি। সাক্ষাৎকারে বলেছি। এখানে অভিযোগ আসার কোনো সুযোগই নেই। আমার ছোট ভাই এবং দুই ছেলেও মাসুদ রানা সিরিজের বই লিখেছে। সিলেটের একজন চিকিৎসক ছিলেন, তিনিও লিখেছেন। আমি তো সবার সামনেই বলেছি, আমার পক্ষে সবগুলো লেখা সম্ভব হচ্ছে না। আমি কাহিনি সাজিয়ে দিচ্ছি, কাহিনিটা আমার।

বিদেশি বিভিন্ন কাহিনি, যা আমার মাসুদ রানা সিরিজের সঙ্গে মেলে, সে ধরনের কাহিনি আমি নিজেই বাছাই করি। ইংরেজি সাত-আটটা বই থেকে ধারণা নেই যে এই ধরনের কাহিনি হতে পারে। এরপর সেই অনুযায়ী আমি প্লট সাজাই। এরপর আমি বিভিন্ন লেখকদের সঙ্গে আলোচনা করি, এই প্লটে আমি গল্প লেখাতে চাই। কারণ, আমার সময় হবে না। যার যেটা ভালো লাগে তিনি সেটা নেন। আমার ছেলে লেখে। আমার প্রয়াত ছোট ভাই মাহবুব হোসেন লিখত। শেখ আব্দুল হাকিম লিখেছেন। বিচিত্রা সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরীও লিখেছেন।

শাহাদত অনেকগুলো প্রচ্ছদ করেছেন। 'হ্যালো সোহানা' বইটা শাহাদত চৌধুরীর লেখা। সোহানা চরিত্রটা শাহাদতের খুব পছন্দ ছিল। 'হ্যালো সোহানা' দুই পর্ব তিনি লিখেছিলেন। শাহাদতকেও আমিই প্লট দিয়েছিলাম। আমাদের নিয়ম হচ্ছে, আমার দেওয়া প্লটের ওপর একটা খসড়া গল্প সাজিয়ে নিয়ে আসবে। সেটা পড়ে যদি আমার পছন্দ হয়, সাজিয়ে-গুছিয়ে আমার মতো করে প্রকাশ করব। পছন্দ না হলে আবার খসড়া তৈরি করতে হবে। আমার ভাই, ছেলে, শেখ আবদুল হাকিম, শাহাদত চৌধুরী সবাই এভাবেই লিখেছেন। আরও অনেকেই লিখেছেন এই সিরিজ। তার মধ্যে শেখ আবদুল হাকিমও একজন।

আপনার প্লট তৈরি করে দেওয়া গল্পে মাসুদ রানা লেখা হয়েছে, এই কথাটা কি মাসুদ রানা সিরিজের সবগুলো বইয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? নাকি শেখ আবদুল হাকিম বা অন্য যারা লিখেছেন তারা তাদের মতো করে লিখেছেন?

মাসুদ রানা সিরিজের প্রতিটি বইয়ের গল্প-প্লট আমার তৈরি করে দেওয়া। এখানে কোনো সংশয় বা সন্দেহ নেই। কারণ, সিরিজটা আমার। মাসুদ রানা সিরিজটা আমি সৃষ্টি করেছি। এবং এর প্রত্যেকটা চরিত্র আমি তৈরি করেছি, প্রত্যেকটা ঘটনা আমার নির্দেশনায় হয়েছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক রাহাত খান আমার বন্ধু। তাকে মাসুদ রানা সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বানিয়েছি। মাসুদ রানা সিরিজের সবগুলো বইয়ের সবগুলো চরিত্র আমি যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে পরিচালিত হয়েছে। গোস্ট রাইটাররা কেউ কোনো চরিত্র সৃষ্টি করেননি। আমার দেওয়া প্লট অনুযায়ী তারা চরিত্রগুলো নিয়ে খসড়া গল্প তৈরি করে এনেছেন। শেষে বই যখন প্রকাশিত হয়েছে, তখন চরিত্রগুলো আমার ইচ্ছেমতো চলেছে। খসড়া লেখা বই প্রকাশের উপযোগী করেছি আমি।

প্রথম ১৪টা বই আমি লিখেছি।

তাহলে অন্যদের দিয়ে লেখানোর পরিকল্পনায় গেলেন কেন?

আমার লেখা মাসুদ রানা খুব অল্প সময়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠল। মাসুদ রানা, সোহানাসহ প্রায় প্রতিটি চরিত্র পাঠকের কাছে জনপ্রিয় ও জীবন্ত হয়ে উঠল। জনপ্রিয়তার কারণে পাঠকের চাপ আসতে লাগল তাড়াতাড়ি আরও বই বের করার জন্য। অনেকে বলত মাসে একটা, আবার অনেকে বলত মাসে দুইটা বই বের করতে হবে। কিন্তু, অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে আমার পক্ষে এত লেখা সম্ভব ছিল না। তখনই চিন্তাটা এলো যে, আমি বিদেশি কাহিনি থেকে নিয়ে গল্প-প্লট সাজিয়ে দেবো। অন্যরা খসড়া করে আনবে বা লিখে আনবে, আমি আমার মতো করে সাজিয়ে মাসুদ রানা প্রকাশ করব।

তখন পাঠক প্রতিক্রিয়া কীভাবে পেতেন?

চিঠির মাধ্যমে। চিঠির পাহাড় জমে যেত। যার কারণে আমরা বইয়ের পেছনে চিঠির একটা আলোচনা বিভাগ খুলেছিলাম তখন। তো পাঠকদের প্রত্যাশার চাপের কারণে পরপর পাঁচ-ছয়টা বই শাহাদত চৌধুরী লিখলেন। তারপর শেখ আবদুল হাকিম কয়েকটা বই লিখলেন। এর প্রত্যেকটা বইয়ের প্লট আমি সাজিয়ে দিয়েছি। তারা লিখলেন বলতে এমন না যে তারা রচনা করলেন। আসল কথা হবে এমন, আমি সাজিয়ে দিয়েছি, সে অনুযায়ী তারা লিপিবদ্ধ করেছেন।

এখানে দুটি প্রশ্ন আসছে। যিনি লিখলেন বা লিপিবদ্ধ করলেন তার নাম ব্যবহার করা হলো না। তার বদলে আপনার নামে বই প্রকাশিত হলো। এটা আইনগত ও নৈতিকভাবে ঠিক কি না?

পৃথিবীতে এই ধারা আমিই প্রথম চালু করেছি, বিষয়টি তেমন নয়। বহু আগে থেকে এমন ধারা প্রচলিত আছে। সারা দুনিয়াতে এটা চলছে 'গোস্ট রাইটিং' নামে। হিলারি ক্লিনটন তার আত্মজীবনী লিখিয়েছেন। যিনি লিখেছেন তার নামে বই প্রকাশিত হয়নি। এটা একটা প্রচলিত রীতি।

গোস্ট লেখকদের নাম সাধারণত মানুষ জানেন না। কিন্তু, আপনার বইয়ের ক্ষেত্রে তো মানুষ তা জানেন। কারণ, আপনি তাদের নাম বলেছেন।

আমি কখনও নাম বলিনি। শেখ আবদুল হাকিম এবং অন্যরা বলছেন আমি নাকি নাম বলেছি। প্রথম আলোর এক সাক্ষাৎকারে আসজাদুল কিবরিয়া তার বক্তব্যে বলেছিলেন, এই এই লেখকরা সম্ভবত মাসুদ রানা সিরিজে লেখেন বা এমন কিছু। এটাই তারা ধরে নিয়েছেন আমার বক্তব্য হিসেবে। আমি বলেছি, তাদের কারো নাম আমি বলতে চাই না। কারণ, এটা তাদের জন্য সম্মানজনক নাও হতে পারে। তারা অন্যের নামে গোস্ট রাইটিং করছেন, কারণ তাদের টাকা দরকার।

টাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে যে আপনি তাদের ফাঁকি দিয়েছেন। যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তা দেননি। যে পরিমাণ রয়্যালটি পাওয়ার কথা ছিল সেটাও দেননি।

এখন কেউ ১২ হাজার বা ১৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু, তিনি হয়তো মনে করছেন তার পাওয়া উচিত ছিল ৬০ হাজার টাকা। তিনি তা বলতে বা ভাবতে পারেন। সেখানে আমার কিছু করার নেই। যখন থেকে তারা লিখতে শুরু করেছেন, তখন থেকে এখন পর্যন্ত তাদের যে পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা, সেটাই পেয়েছেন। কাউকে টাকা কম দেওয়া হয়নি বা ঠকানো হয়নি। যারা মনে করছেন ঠকানো হয়েছে, কম টাকা দেওয়া হয়েছে, তাহলে তিনি বা তারা লিখলেন কেন? জোর করে বা লোভ দেখিয়ে তো কাউকে দিয়ে লেখানো হয়নি।

টানা ৪৫ বছর লেখার কী কারণ থাকতে পারে যদি আমি তাদের টাকা না দিয়ে থাকি? আমি তাদের এককালীন টাকা দেবো বলেছি এবং দিয়েছি। আজ পর্যন্ত কাউকে ঠকাইনি। তারা টাকা নিয়েছেন স্বাক্ষর করেই। সেগুলো এখনো আছে আমার কাছে। কারো মনে হতেই পারে আমাকে কম দিয়েছে, আরও অনেক বেশি দিলে ভালো হতো। টাকা দিয়ে তো কারো মন ভরানো যায় না। আমার প্রস্তাবে তারা রাজি হয়েছিলেন বলেই লিখেছেন।

আপনার হয়তো জানা থাকার কথা, শাহাদত চৌধুরী মারা যাওয়ার কিছু দিন আগে আমি তাকে ফোন করে বলেছিলাম, আপনার কিছু টাকা জমা হয়েছে। টাকা নিতে আপনি আসবেন নাকি আমি কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দেবো। তিনি জানতে চান কিসের টাকা। তখন তাকে বলি আপনার লেখার কিছু টাকা পাওনা আছে। তখন তিনি বলেন, আমিই আসছি, এই সুযোগে দেখা হয়ে যাবে।

কেউ লিখেছেন, আর আমি তার টাকা না দিয়ে মেরে দিয়েছি, তা আজ পর্যন্ত কেউ বলেননি। একমাত্র তিনিই (শেখ আবদুল হাকিম) বলছেন।

শেখ আবদুল হাকিম যখন লিখতেন, তখন কি লিখিত কোনো চুক্তি হয়েছিল?

না, আমাদের কারো সঙ্গেই লিখিত কোনো চুক্তি হতো না। চুক্তি করতে হবে, এমন কখনো ভাবিনি। তারাও কখনো চুক্তির কথা বলেননি বা ভাবেননি। শেখ আবদুল হাকিমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, এই পরিমাণ টাকা দেবো, প্লট তৈরি করে দেবো, সেই অনুযায়ী লিখতে হবে। সাজিয়ে-গুছিয়ে আমার নামে এবং আমার সিরিজে বই প্রকাশিত হবে। যদি আমার সেই কথায় তিনি রাজি না হতেন, তাহলে কি লিখতেন?

এগুলোতে সবই মৌখিক আলোচনা।

কপিরাইটের মামলা করার আগে আপনার সঙ্গে কি তার কোনো কথা হয়েছে বা এ বিষয়ে কোনো টাকা দাবি করেছিলেন?

নাহ, তেমন কিছু না। তিনি যখন সেবা প্রকাশনী ছেড়ে গেলেন, সে সময় বলেছিলেন, ডাক্তার তাকে পরামর্শ দিয়েছেন হাঁটাহাঁটি করা যায় এমন বাসায় থাকতে। আর মিরপুর থেকে সেগুনবাগিচা যাতায়াত করে কাজ করা যাবে না। এর আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল। সেই সার্জারির খরচ আমি দিয়েছিলাম। যাই হোক, তিনি যাওয়ার সময় বলেছিলেন, হয়তো মাসে বা দুমাসে একটা লিখতে পারব। এর দুমাসের মধ্যেই আমাকে একটা উকিল নোটিশ পাঠিয়ে মানহানির ভয় দেখিয়ে সমঝোতা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমি তো সমঝোতা করার মতো কিছু পাইনি তখন। এর কিছুদিন পরে বিভিন্ন বইয়ের হিসাব দেখিয়ে আমার কাছে দুই কোটি নয় লাখ টাকা পান বলে তিনি দাবি করেন।

এটা কি রয়্যালটি বাবদ?

রয়্যালটি বলতে তো কিছু নেই। আমি তো তাদের এককালীন টাকা দিতাম লেখার জন্য।

আমার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুলতান মাহমুদ এবং শেখ আবদুল হাকিম। আমি তাদের উকিল নোটিশের জবাব দেই। জবাব পেয়ে সুলতান মাহমুদ থেমে যান। আমার জবাবে স্পষ্টই বলা ছিল, দাবিকৃত টাকা তারা পায় না। কারণ, এটা তাদের অধিকারের বাইরে।

এরপর তারা কপিরাইট অফিসে যায়। সেখান থেকে আমাকে আবার নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ডাকা হয় কপিরাইট আদালতে শুনানির জন্য। আমার শারীরিক অবস্থার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকা সম্ভব না বিধায় সব কিছু লিখে আদালতে আমার উকিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করি। কিন্তু, তারা তা মানতে রাজি হয় না। তাদের কথা ছিল আমাকে হাজির হতে হবে।

সেই আদালতে এক পর্যায়ে মাসুদ রানা সিরিজের ছয়টা এবং কুয়াশা সিরিজের একটা বইয়ের স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমকে দেওয়া হলো। কারণ, বইয়ের প্রচ্ছদে আমার নাম থাকলেও ভেতরে লেখা আছে তার নাম। যে লেখক যে কাহিনি লিখেছেন তাতে তার নাম আমি দিয়েছি। তিনি অনুরোধ করেছেন বলেই দিয়েছি। তার লেখা অন্যান্য বই বিক্রি হয় দুই হাজার আর মাসুদ রানা সিরিজের বই বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার। সেজন্য তিনি বলেছিলেন, বইয়ে তার নাম কোথাও দেওয়া গেলে তার নিজের লেখা অন্য বইয়ের বিক্রিও বাড়বে।

আমি আদালতে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, এভাবে তিনি স্বত্ব পান না। কারণ, সিরিজটা আমার। এর স্বত্ব তিনি পেতে পারেন না। তিনি লিখেছেন গোস্ট রাইটার হিসেবে।

আন্তর্জাতিকভাবে কোনো গোস্ট রাইটার এভাবে মামলা করেছেন বলে কি আপনার জানা আছে?

আমার এমন কিছু জানা নেই। আমাদের এখানেও হতো না যদি তিনি লোভে না পড়তেন।

কপিরাইট আদালতের রায়ে ২৬০টি বইয়ের স্বত্ব এখন শেখ আবদুল হাকিম পেয়েছেন। আপনি কী করবেন?

এটা আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। আমরা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, বইয়ের কোথাও শেখ আবদুল হাকিমের নাম নেই। তিনি কীভাবে এর স্বত্ব পান? আমি রায়ের কপি এখনো পাইনি। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আমি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো। এই সিরিজের প্রায় ৪৬৬টি বই আছে। এর মধ্যে কারণ ছাড়াই ২৬০টি তাকে দিয়ে দিলে তা তো মেনে নেওয়া যায় না।

শেখ আবদুল হাকিম কি মাসুদ রানা সিরিজে বই বের করতে পারবেন?

এখনি পারবেন না। তবে, যদি শেষ পর্যন্ত কপিরাইট তারই হয়ে যায়, তাহলে পারবেন। উচ্চ আদালতে যদি প্রমাণ করতে পারি যে তিনি এর লেখক বা প্রণেতা নন, তাহলে তিনি আর স্বত্ব পাবেন না।

এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চলছে যে আপনি অন্যকে দিয়ে লিখিয়ে নিজের নামে বই বের করেছেন, এটা অনৈতিক।

গোস্ট রাইটিং অনেক আগে থেকেই চলছে। তাদের আমি টাকা দিয়ে লিখিয়েছি। সুতরাং, এটা অনৈতিক বলে আমি মনে করছি না। আমি জোর করে বা ভুল বুঝিয়ে বা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তো কাউকে দিয়ে লেখাইনি। তারা আমার হয়ে লিখেছেন এবং এর জন্য টাকা পেয়েছেন। টাকা না পেলে কেউ টানা ৪৫ বছর লেখেন না।

বইগুলো কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে না ছেপে শেখ আবদুল হাকিমের নামে ছাপার সুযোগ ছিল না?

তিনি তো লিখতেই পারতেন না। মাসুদ রানা তো আমার সিরিজ। তিনি কীভাবে লিখবেন?

আপনার মাথায় এই চিন্তা কেন এবং কীভাবে এসেছিল যে কয়েকটি বই বা কাহিনি থেকে ধারণা নিয়ে একটি বই লেখা যায়?

প্রথম দু-তিনটা বই লেখার পর চাপ আসতে থাকে আরও বই লেখার। প্রচুর কাজের চাপই আমি সামলে উঠতে পারছিলাম না। পাশাপাশি এই ধরনের থ্রিলার লিখতে যে ধরনের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় তা আমার মতো এক সাধারণ বাঙালি ছেলের ছিল না। যার কারণে ধারণা আসে বিভিন্ন বিদেশি গল্পের সাহায্য নেওয়ার। প্রথমে চারটি বইয়ের ছায়া অবলম্বনে 'স্বর্ণমৃগ' লেখা হয়। যাদের দিয়ে পরবর্তীতে লিখিয়েছি তাদেরও প্লট আমি দিয়েছি। পাঁচ-সাতটি বই থেকে ধারণা নিয়ে প্লট গুছিয়ে তাদের বলেছি লিপিবদ্ধ করে আনতে।

এর অর্থ আপনি প্রচুর পড়াশোনা করতেন। এত ইংরেজি বই কোথা থেকে সংগ্রহ করতেন?

হ্যাঁ, করতে হতো। মূলত পুরনো বইয়ের দোকান থেকে সংগ্রহ করতাম।

শেখ আবদুল হাকিমের সঙ্গে আপনার এত ভালো সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক এখন মামলায় গড়াল। আপনার কিছু বলার আছে?

আমার কিছু বলার নেই। তার যেমন ইচ্ছে হয়েছে, তেমন করেছেন। এখন আমিও আমার মতো করেই সামনে এগোব।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago