‘আমি সব সময় নিজের সঙ্গে লড়াই করি’
গত ২৬ মে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের পথচলার ১৫ বছর পূর্তি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে নিজের আক্ষেপ, তৃপ্তি, প্রত্যাশাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
মানুষ মুশফিক হয়ত ভাল আছেন কিন্তু ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম কেমন আছেন?
মুশফিক: যদি বলেন, আসলে খেলা ছাড়া আমাদের ভালো থাকার সুযোগ নেই আসলে। যতই বলেন একটা সময় গিয়ে কেবল খেলাটাকেই অনেক বেশি মিস করা হয়। আমি আমার ফিটনেসটা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এরচেয়ে বেশি যেটা জরুরী সেই স্কিল ট্রেনিংটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাসা ছাড়া কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। তো এটা অনেক মিস করছি । নিজেকে প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করছি আরও কি কি করলে ভাল হয়। আমাদের কম্পিউটার এনালিস্ট যে আছে, ওর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। প্রতিনিয়ত কথা হয়। আমরা অনেক ডিসকাসও করছি কোথায় কোথায় কাজ করতে পারি। আগামীতে যে কটা টুর্নামেন্ট হওয়ার চান্স আছে ওদের যে কটা বোলার আছে, ওদের ভিডিও টিডিও নিচ্ছি। এরকম করেই সময় কাটছে।
প্রথমে যখন খেলা বন্ধ হলো আঁচ করতে পেরেছিলেন সময়টা এত লম্বা হতে পারে?
মুশফিক: না না। এটা তো আমি কেন কেউই আঁচ করতে পারেনি বোধহয় সময়টা এত লম্বা হবে। কারণ এটা এমন একটা মহামারি যার কিনা টাইমফ্রেমও নাই। ইনফ্যাক্ট এখনো কেউ বলতে পারে না যে আমরা কবে নাগাদ মাঠে ফিরতে পারব। বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কবে আবার চালু হবে। বা মানুষজনের স্বাভাবিক জীবন কবে ঠিক হবে। এটা আসলে আঁচ করা অসম্ভব। আমাদের প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয়ে গিয়েছিল, তারপর যখন বন্ধ হলো আমি ভেবেছিলাম হয়তবা দুই সপ্তাহ হয়ে আবার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এতদিন যে হবে এটা আমি কখনই প্রত্যাশা করিনি।
আমরা জানি যে আপনি রুটিন মেনে ফিটনেস ঠিক রাখছেন। অনেকে বলছেন ক্রিকেটারদের হয়ত ফিটনেস ইস্যু হবে না। কিন্তু অনেকদিন স্কিল অনুশীলন আর ম্যাচ খেলা না থাকায় একধরনের মরচে পড়ার শঙ্কা তো থেকে যাচ্ছে।
মুশফিক: দেখেন আমাদের শরীর একটা কাজে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সারাদিন মাঠে থাকা। বল করেন বা ব্যাট করেন সেটা আলাদা। কিন্তু একটা ম্যাচ খেললে পাঁচ বা ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই জিনিসটা তো আমাদের সিস্টেমে আসতে সময় লাগবে। ব্যাটসম্যান হলেও, সবার জন্যই কঠিন হবে। যতই আপনি ফিটনেস করেন না কেন, একটা বোলিং ফিটনেস বোলারদের জন্য আলাদা জিনিস। একটা ব্যাটসম্যানের জন্য ব্যাটিং ফিটনেসও আলাদা জিনিস। আপনি ২৪ ঘণ্টাও যদি ফিটনেস করেন (বাসায়)। আমার মনে হয় ওই নেটে ব্যাট করা বা বাড়তি নক করা এইগুলা কিন্তু একেবারেই ভিন্ন ম্যাচে ব্যাট করার জন্য। মানসিক স্ট্রেন্থেরও ব্যাপার থাকে। আমরা আলোচনা করছি, যত তাড়াতাড়ি শুরু হোক না কেন আমরা যদি তার আগে দুই বা তিন সপ্তাহের প্রি-ক্যাম্প করতে পারি। আমাদের শরীরটা আগে যে শেপটা ছিল সেটা যতটুকু আনা যায়। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে। জড়তার চাইতে যখন শুরু করব দেখা যাবে অনেক ইনজুরির প্রবণতাও আসতে পারে। অনেকদিন একটা জিনিস না করে হঠাৎ করলে সমস্যা হতে পারে। আমার মনে হয় এই জায়গাটায় টিম ম্যানেজমেন্ট, ফিজিও ট্রেনার যারা আছে তাদের একটা বিশাল দায়িত্ব হবে।
আবার খেলা/ অনুশীলন শুরু হলে আগের ছন্দ আনতে কোন দিকটা সবচেয়ে নজর দেওয়া জরুরী বলে মনে করেন আপনি?
মুশফিক: আমাদের স্বাস্থ্যের দিকটাই ফোকাস দিতে হবে। শুরু হলেই যে ভাইরাস চলে যাচ্ছে এটাও কিন্তু না। বাংলাদেশে কিন্তু প্রতিদিনই সংক্রমণ বাড়ছে, গাণিতিক হারে বাড়ছে। আমাদের জন্য কঠিন আসলে। আমরা তো একা একা গিয়ে তো আর স্কিল ট্রেনিং করতে পারব না। একেকজন একেক জায়গা থেকে আসবে, আবার নেট বোলার ওরাও একেক জায়গায় থাকে। তারাও আসবে। সিকিউরিটির লোকজন থাকে। সতর্কতা রাখতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্ট যেন আমাদের একটা ভাল গাইডলাইন দেয় এবং আমরা সেটাই অনুসরণ করার চেষ্টা করব। স্বাস্থ্যটা সবার আগে দেখভাল করতে হবে। এবং যেহেতু আমরা ফিটনেস টুকটাক করছি, স্কিল ট্রেনিং আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ফিটনেস পাশাপাশি করা হবে। আমরা স্কিল অনেকদিন করতে পারছি না, অলমোস্ট আড়াইমাস। এটা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ। আর আপনি যখন স্কিল ট্রেনিং করবেন সেখানেই ফিটনেসটা হয়ে যাবে।
ফিল্ডিং করবেন এক ঘণ্টা- আধাঘণ্টা। ওখানে রানিং হবে, সব কিছুই হবে। ব্যাট করলেও রানিং হবে, সব কিছু হবে। বোলাররাও বল করলে তাদের ফিটনেস এসে যাবে। কে কি করবে জানি না। আমি তো অবশ্যই স্কিল ট্রেনিংটাই করব আগে।
নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে কথা বলছিলাম। তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত হয়ে ফিরবে। মানে সবার মধ্যেই রান করার ক্ষুধাটা বেড়ে যেতে পারে? বিশ্বসেরা হওয়ার তাগিদ বাড়তে পারে, আপনার কি মত?
মুশফিক: বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের কথা আমি বলতে পারি। আমরা যারা সিনিয়র আছি আমাদের কিন্তু ক্যারিয়ারের তিনটা মাস চলে যাচ্ছে। এদিক থেকে অবশ্যই হাংরি না থাকার কোন কারণ নাই। আর আমার মনে হয় যারা অলরেডি কয়েক বছর খেলে ফেলেছে লিটন বা সৌম্য, সাদমান, আফিফ, নাঈম শেখ সবাই আছে তাদেরও হাংরি হওয়ার ব্যাপার আছে। ওদের জন্য খারাপও লাগছে। বিশেষ করে লিটনের জন্য, একটা দারুণ সিরিজ শেষ করল। এবং এই মোমেন্টামটা… কারণ আপনার নতুন করে শুরু করতে হবে, তারপর নতুন করে ওই জায়গায় যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, হাংরি ত অবশ্যই থাকবেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না আগে যেটা আপনাকে সফলতা দিয়েছে । যেটা আপনি করে ধারাবাহিকভাবে একটা জিনিস পেয়েছেন।
যদি ভাবেন আমি এটা করব, ওটা করব, প্রতি ম্যাচে একশো করব-ওটা কিন্তু হবে না। আমরা কিন্তু তখনো ব্যর্থ হবো- এটা কিন্তু ফ্যাক্ট। কিন্তু বেশিরভাগ সময় যেন আমরা সফল হতে পারি। ধারাবাহিকতা যেন আগের চেয়ে বেশি থাকে এটা মাথায় রাখতে হবে। আর প্রক্রিয়াটার বাইরে গেলে হবে না। তাড়াহুড়ো করলে হবে না। আপনি কিন্তু এক থেকে একশো রান করতে পারবেন না লাফিয়ে। ৫, ১০ এভাবে যেতে হবে।
নেইল যেটা বলছে তার সঙ্গে অবশ্যই আমি একমত। কারণ আমার বাসায় বসে মনে হচ্ছে আমি একশো করতেছি, দুইশো করতেছি বা এরকম করছি। তো অবশ্যই নিজের কাছে ভালো লাগবে। আমি নিশ্চিত যে অন্য যারা আছে তারাও সব চালু হলে সতেজ হয়েই ফিরবে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছর পার করে ফেলেছেন। এই ১৫ বছরে মুশফিকের তৃপ্তি কতটুকু, আফসোসই বা কতখানি?
মুশফিক: প্রথমত আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশের মতো জায়গায় তিনটা ফরম্যাট মিলিয়ে অলমোস্ট ১৫ বছর খেলেছি। এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ততটা সহজ না। কারণ আপনি যদি দেখেন। খুব বেশি কিন্তু কেউ নাই যে এত বছর খেলেছে। হয়তবা আগে ছিল, কিন্তু আগে আমাদের খুব কম খেলা ছিল। আর এখন দেখেন আন্তর্জাতিক বাদ দিলেও বছরে ঘরোয়া বিপিএল, জাতিয় লিগ , বিসিএল সব মিলিয়ে কিন্তু আমাদের ৯-১০ মাস বিরামহীন ক্রিকেট থাকে। এতদিন ফিটনেস রাখা, মেন্টেন করা, ফর্ম ধরে রাখা সব মিলিয়ে আমি মনে করি আলহামুদুল্লিহ। আর আফসোস যদি বলেন, মানুষের প্রকৃতির কথা যদি বলেন। আমার যদি হাজার কোটি টাকাও থাকে তাহলে মনে হবে আমার যদি আরও থাকত তাহলে ভাল হত। যার মোটামুটি আছে সেও মনে করবে আমার একটা গাড়ি আছে, আরেকটা যদি থাকত। গত ৬-৭ বছরে যা করতে পেরেছে সেটাতে একটু হলেও তৃপ্তি আছে। কিন্তু শুরুটা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়নি। ২০১২ থেকে আমি যেভাবে কনভার্ট করেছি এই জায়গাটা তৃপ্তি আছে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম সেটার ফল এখন এসে পাচ্ছি। আশা থাকবে এই ধারাবাহিকতা যদি আমি ধরে রাখতে পারি তাহলে আশা করছি ক্যারিয়ার শেষে বলতে পারব আমি প্রত্যাশার চেয়ে খুশি।
দেখা যাচ্ছে আপনার ক্যারিয়ারের গ্রাফ খুবই ঊর্ধ্বগামী। প্রথম পাঁচ বছরকে ছাড়িয়ে গেছেন পরের ৫ বছর দিয়ে, পরের পাঁচ বছরকে পেছনে রেখে অনেক উপরে গেছেন সর্বশেষ ৫ বছরে। আগামী ৫ বছরে মুশফিক নিজেকে কোথায় দেখতে চান।
মুশফিক: ভাই, পাঁচ বছর বলার কথা বললাম। বাংলাদেশে পাঁচ বছর মানে বিশাল ব্যাপার (হাসি)। আপনি পরের টুর্নামেন্টে আমি থাকব কিনা এটা নিয়ে সত্যি কথা বলতে আমি সব সময় চিন্তা করি। সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করি। আর যেটা বললেন , টাইমফ্রেম কেউ বেধে দিতে পারবে না। আমি সব সময় নিজের কাছে জবাবদিহিতা করি, নিজের সঙ্গে লড়াই করি। বাংলাদেশকে সামনে থেকে অবদান রেখে যতটুকু জেতাতে পারি এটাই চেষ্টা থাকবে। পাঁচ বা সাত যত বছর খেলি এটাই ইচ্ছা থাকবে। আর যেটা বললেন গ্রাজুয়েলি আমার যে উন্নতি হয়েছে...এখন বলতেই পারেন আমার লাস্ট পার্টের দিকে (শেষ পাঁচ বছর) চলে এসেছি, এই ভাল সময়ে যত বেশি রান করতে পারি। এটা আমার জন্য আর দলের জন্যও ভাল হবে।
এই পনেরো বছরের ক্যারিয়ারে যদি একটা ঘটনার কথা বলি যেটা মুশফিককে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছে, এবং মুশফিককে সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে
মুশফিক: বেশ কয়েকটা আছে আসলে। ১৫ বছর তো, অনেক উঠানামা ছিল। খারাপ লাগার কথা যদি বলে আমি জাতীয় দলে একবার বাদ পড়েছিলাম সম্ভবত ২০০৯ সালে। ওটা আমার জন্য শিক্ষনীয় সময় ছিল। তখন আমার একটা উপলব্ধি হয়েছিল যে নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে হবে, অনেক জায়গা আছে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। আরেকটা ছিল এশিয়া কাপে আমরা ফাইনালে ২ রানে হেরেছিলাম (পাকিস্তানের কাছে)। অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম এতবড় টুর্নামেন্ট ছিল।
আর আনন্দের ঘটনা বললে, প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এটা আমার কাছে অনেক বড় একটা তৃপ্তি ছিল। শুধু আমার জন্য না। আমি মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিল। বাংলাদেশের কেউ যে টেস্টে ২০০ তার বেশি করতে পারে এই বিশ্বাসটা দরকার ছিল। আর অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডকে হারালাম এটা অনেক তৃপ্তি ছিল। শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারালাম। শ্রীলঙ্কার মাঠে কিন্তু রেয়ার, অন্যান্য দলের জন্যও অনেক রেয়ার জেতা। এই কয়েকটা বলতে পারেন আমার ক্যারিয়ারে মাইলফলকের মতই ছিল।
অধিনায়কত্ব হারানোটাকে কষ্টের জায়গায় রাখলেন না যে!
মুশফিক: এটা তো একটা স্বাভাবিক নিয়ম, অধিনায়কত্ব একসময় ত ছাড়তে হয়। আপনাকে বলতে চাই যেভাবে অধিনায়কত্ব গিয়েছে সেই প্রক্রিয়ায় আমার হতাশ আছে নিজের ভেতরে। আমি মনে করি সততার সঙ্গে যেভাবে কাজ করেছি, খেলোয়াড় হিসেবে , অধিনায়ক হিসেবে, কিন্তু সেটার সম্মানটা আমি পাইনি। আমি মনে করি আগামীতে যারাই এখন অধিনায়কত্ব করছে, তাদের সেই সময়টা আসবে। তাদের ছেড়ে দিতে হবে, বা তাদের থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আমি চাই যেন সুন্দর একটা শেষ হয় যাতে তার জন্যই স্বস্তির হতে পারে। আর পরের যে প্রজন্ম বা পরবর্তী অধিনায়কের জন্য মাইলফলক হতে পারে। এই জিনিসটা খেয়াল রাখা হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য লাভবান হবে, যদি আপনি খেয়াল করেন। অনেক সময় দেখেন অনেকের কাছে অধিনায়কত্বের প্রস্তাব এলে নিতে চায় না। কেন চায় না? কারণ তাদেরও এই জায়গায় দলকে দেওয়ার আগে নিজের অনেক চাপ থাকে, নিজেরও অনেক ক্ষতি হয়। এই জায়গা যেহেতু যথেষ্ট সম্মানের জায়গা, অনেক বড় অগ্রাধিকারের জায়গা, এই জায়গার সম্মানটা যেন ওইরকমই থাকে।এটা ম্যাটার করে না তুমি ভাল করছ না খারাপ করছ। কিন্তু যতদিন তুমি দায়িত্বে আছ, সেজন্য একটা অ্যাপ্রিসিয়েশন থাকা দরকার। বলছি না থাকে আর্থিক পুরস্কার দিতে হবে বা এরকম কিছু। আমার মনে হয় এই জায়গায় অনেক বড় ঘাটতি আছে। আর খুব কম অধিনায়কই আছে যারা কিনা সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে পেরেছে। আমি তো অবশ্যই পারিইনি। হয়তবা আমার নিজেরও অনেক ঘাটতি ছিল। আমার মনে হয় আগামীতে এটা আরও সুন্দর হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো।
পঞ্চপান্ডবের পর কারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের হাল ধরতে পারে, নিয়ে অনেকের কৌতূহল। আপনার কাছে যদি কয়েকজনের নাম জানতে চাওয়া হয় তরুণদের মধ্যে, কাদের কথা বলবেন যারা নেক্সট ফাইভ হতে পারে?
মুশফিক: আমি মনে করি বিশ্ব ক্রিকেটের ট্রেন্ড যদি খেয়াল করেন, এরকম ট্রানজেকশন পিরিয়ড সব জায়গাতেই থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় যদি খেয়াল করেন। এমনকি ভারতেও শচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, কুম্বলে তাদের মত এতবড় লিজেন্ডদের রিপ্লেস করা (কঠিন ছিল)। বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দল পন্টিং, হেইডেন, ম্যাকগ্রা, তারপর ল্যাংগার বলেন, গিলক্রিস্ট, ওয়ার্ন এদের রিপ্লেস করতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় যেমন জয়সুরিয়া, জয়াবর্ধনে, মুরালি। সব দলেই একটা পিরিয়ড আসে। স্ট্রাগল করে। নাম বলাটা কঠিন, কিন্তু পাঁচজন কেন সবাই সামর্থ্যবান আছে। আমি বিশ্বাস করি আমাকে তারা ছাড়িয়ে যাবে। যেমন লিটন আছে, সৌম্য আছে, নাইম শেখ আছে। টেস্টে বিশেষজ্ঞ সাদমান আছে, মুমিনুল তো আছেই। বোলারদের কথা যদি বলি টেস্টে রাহি, ইবাদত আছে। তাইজুল, মিরাজ এরাও আছে। সাইফুদ্দিন আছে। আমি মনে করি প্রতিটি খেলোয়াড় সবাই আমার থেকে স্কিলফুল। এদের যে কাজ করতে হবে, তাদের অবশ্যই ধারাবাহিকতা বাড়াতে হবে।
আমি আমারটা বলতে পারি , আমি ১৫ বছরে যতটুকু অর্জন করেছি। তাদের বিশ্বাস করতে হবে তাদের পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে দশ বছরের মধ্যে বা আট বছরের মধ্যে এগুলো করতে পারবে। এই জিনিসটা আসলে ওদেরই বিশ্বাস করতে হবে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। নিজেদের ম্যাচ উইনার সব সময় ভাবতে হবে।
আমাদের পাঁচজনের শেষ করার আগে, আমাদেরও চ্যালেঞ্জ নেক্সট সাত আটজনকে যেন ওই জায়গায় রেখে যেতে পারি। তারা যেন এই লিগ্যাসিটা আরেকটা স্টেপ সামনে নিয়ে যেতে পারে। সেটা করতে পারলে ক্যারিয়ার শেষেও আমাদের জন্য তৃপ্তির জায়গা থাকবে। মুসলমান হিসেবে যদি বলতে চান, এমন একটা কাজ করে মরার পরও যেন সোয়াব থাকতে পারে। আমার ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা থাকবে। বিশেষ করে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান যারা আছে , তরুণ প্লেয়ার আকবর বা অন্য যারা আছে। তারা আমার হেল্প পাবে। এটাও যেন তারা মেইক শিওর করতে পারে তারা আমার জায়গা থেকে বেটার করতে পারে। এই লিগ্যাসিটা আমি যেন করতে পারি। এটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি মোর দ্যান হোপফুল আমদের পাঁচজনের চেয়ে বেশি এরা করতে পারবে।
আপনি অনেকক্ষন নেটে কাটান। সব চালু হলে অনুশীলনে গিয়ে প্রথম দিন আপনি কতক্ষণ ব্যাট করবেন?
মুশফিক: বলা কঠিন। মজারচ্ছলে হয়তবা বলে ফেলি-আমার ওয়াইফ যেমন বলে- ‘তুমি মনে হয় প্রথমদিন গেলে ২৪ ঘন্টায় আর আসবা না’, আমি বলি, ‘হ্যাঁ, মিরপুর একাডেমী আছে ওখানে থেকে যাব।’ এটা তো একটা ফান। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের স্মার্ট হতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের যে ওয়ার্ক লোড দিবে ওটা ক্যারি করতে হবে। অবশ্যই ব্যাটিং ত করবই। চেষ্টা থাকবে যতটুকু স্মার্ট ওয়েতে নিজের প্রোগ্রাম করা যায়। এখানে সব কিছু রিলেটেড। আমি একা না, সবাই থাকবে।
Comments